মিস্টার আমান চারপাশে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসে বললেন, "কি ব্যাপার, আরিয়ান? এখানে তো সবাই একসাথেই আছে। আলাদা করে তো কিছুই মনে হচ্ছে না!"
আরিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে একটু লজ্জার হাসি দিয়ে বলল, "ছোটবেলা থেকেই আমরা পাশাপাশি বড় হয়েছি, দুই পরিবার একসাথে থেকেছি, তাই আলাদা কিছু ভাবিনি কখনো। সবকিছুই একসাথে হয়েছে, এই বিয়েটাও তার ব্যতিক্রম নয়।"
আমান হাসলেন, "ওহ, বুঝেছি! তাহলে তো ব্যাপারটা বেশ স্পেশাল!"
তখনই মিস্টার আমান-এর দাদি, যিনি চুপচাপ চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছিলেন, ধীর স্বরে বললেন, "তাই নাকি? বেশ, তাহলে তো কনেকে দেখা দরকার! কনে কোথায়? দেখি তো কেমন আমাদের আরিয়ান-এর বউ!"
সবাই হেসে ফেললো, আরিয়ান একটু লজ্জা পেলেও মৃদু হাসলো। এদিকে তৃষা তখন মেয়েদের সাথেই ছিল, তার খেয়ালও ছিল না যে মিস্টার আমান আর তার দাদি তাকে খুঁজছেন।
আরিয়ান দাদির দিকে তাকিয়ে বলল, "দাদি, আসুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনার হবু নাতবউয়ের কাছে!"
দাদি চোখ ছোট করে একটু মুচকি হেসে বললেন, "ঠিক আছে, দেখি তো কেমন মেয়ে পছন্দ করেছ তুমি। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, আরিয়ান, ভালোবাসা তো শুধু চোখে দেখা সৌন্দর্য নয়, বরং হৃদয়ের গভীরতা দিয়েই তা বোঝা যায়।"
আরিয়ান একটু চুপ করে গেল, তারপর বলল, "আমি জানি, দাদি, তৃষা শুধু সৌন্দর্যেই নয়, মনেও খুব সুন্দর। আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন।"
আরিয়ান ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো তৃষা-র দিকে, আর মিস্টার আমান ও তার দাদি অনুসরণ করলেন।
তৃষা তখনো জানতো না, তার দিকে তাকিয়ে থাকা একজোড়া চোখের মধ্যে কী চলছে। সে মেয়েদের সাথে হাসছিল, চোখে তার চিরচেনা উজ্জ্বলতা। তার গায়ে গোল্ডেন জরির সূক্ষ্ম কাজের লাল শাড়ি, সিঁথির ঠিক পাশে ছোট্ট করে বসানো সাদা ফুলের গুচ্ছ, আর তার গভীর, শান্ত চোখে এক ধরনের প্রশান্তি খেলা করছিল।
মিস্টার আমান-এর দাদি চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন। তার মনের ভিতর এক অজানা মোচড় দিয়ে উঠল। এত মিষ্টি, এত কোমল একটা মেয়ে! তিনি কিছুতেই নিজেকে এই চিন্তা থেকে আটকাতে পারলেন না— এই মেয়েটা যদি আমার আমান-এর বউ হতো!
তিনি গভীরভাবে তৃষাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। মেয়েটার মধ্যে এক ধরনের নীরব সৌন্দর্য আছে, যা কথার চেয়ে বেশি কিছু বলে দেয়। তার আচরণে এক ধরনের শান্তি, এক ধরনের স্নিগ্ধতা, যা সহজেই মন জয় করে নিতে পারে।
এইদিকে, আমান কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছিল। সে এর আগে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে, অনেকের সাথে কথা বলেছে, কিন্তু আজ কিছু একটা আলাদা অনুভব করছিল। তৃষার দিকে তাকানো মাত্রই তার মনে হলো বুকের ভেতর কিছু একটা অস্থির হয়ে উঠছে।
কেন এমন লাগছে?
কেন এই প্রথমবার সে নিজেকে এতটা নার্ভাস লাগছে?
তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, সে চোখ সরিয়ে নেবে, কিন্তু পারেনি। তৃষা যখন চোখ তুলে তাকালো, তখন তাদের চোখাচোখি হলো।
তৃষা অবাক হয়ে গেলো।
কেন এই অচেনা মানুষটি এতক্ষণ ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে? কেন তার চোখে এমন এক অদ্ভুত দ্বিধা?
আরিয়ান তখনই এসে দাঁড়ালো তৃষার পাশে, একেবারে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। তার মুখে হাসি, আর গলায় গর্বের সুর, "দাদি, এই হলো আমার তৃষা। আমার জীবন।"
আমান দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলো। তার শরীরে কেমন জানি একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। এ কেমন অনুভূতি? কেন তার বুকের ভেতর মোচড় দিচ্ছে? কেন তার মনে হচ্ছে সে কিছু হারিয়ে ফেলেছে?
দাদি গভীর শ্বাস নিলেন, তারপর এক গম্ভীর হাসি দিলেন, "তোমার পছন্দ খারাপ নয়, আরিয়ান।"
কিন্তু তাদের কেউ-ই জানতো না, এই কথার আড়ালে দাদির মনে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর আমানের সেই অদ্ভুত অনুভূতিটাই বা কিসের ইঙ্গিত?
---
চলবে......