দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে শেফালি ভাবছে, আজ ভাত ফুটবে তো?
চালের হাঁড়িতে যেন রোদ উঠে না—একটা নিঃশব্দ চিৎকার ঘোরে চারপাশে। দারিদ্র্য এখানে কোনো শব্দ নয়, এটা একটা ঘ্রাণ; পুরনো কাপড়ের, আধপচা চালের, কাঁচা ঘামের। এটা একটা অভ্যাস, যেমন সকাল বেলা চোখ মেলা, আবার কিছু না থাকার কথাটা বুঝে নেওয়া।
তার ছেলে, রাজু, মায়ের পেট চেপে বলে—"ভাত দেবি মা?"
মুখে হাসি এনে শেফালি বলে, "দেবো রে বাবা, একটু পরে।"
সে হাসিটাও অভ্যাস। মিথ্যে হলেও, ভালোবাসার মতো সত্য।
গ্রামের রাস্তা ধরে প্রতিদিন যারা শহরে কাজ খুঁজতে যায়, তারা সবাই জানে, দারিদ্র্য কোনো শেষ নেই। এটা এমন এক নদী, যার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তুমি ভিজে যাও।
অথচ, মানুষের চোখে কিছুই নেই। এক কাপ চা আর আধটা বিস্কুট নিয়েই তারা দিন পার করে।
আলো আসে, কিন্তু ঘরে ঢোকে না।
বাতাস আসে, কিন্তু শীত যায় না।
তবুও এই দারিদ্র্যের মাঝেও জীবনের একটা স্পর্ধা আছে।
শেফালি সন্ধ্যায় চুলার আগুনে চুপিচুপি ভাত বসায়,
তার আগুনে শুধু চাল নয়,
জ্বলছে জীবনের চেষ্টাগুলো,
জ্বলছে ভালোবাসার ক্ষীণ একটা আশাবাদ।
রাতে যখন তারা খোলা জানালায় চাঁদের আলো গায়ে মেখে ঘুমিয়ে পড়ে,
তখন মনে হয়, হয়তো স্বপ্নই একমাত্র জিনিস যা এখনো কর ফাঁকি দিতে পারে।
স্বপ্নের ভেতর তারা শহরে যায়, পাকা বাড়ি বানায়,
রাজু স্কুলে যায়, শেফালি একটা সেলাই মেশিন চালায়।
এই যে অব্যহতি,
এটা কোনো মুক্তি নয়,
এটা টিকে থাকার এক অন্তহীন প্রতিজ্ঞা।
একটা দিন পার করে দেওয়ার ভিতরেই লুকিয়ে থাকে সাহসের গল্প।
দারিদ্র্যের গায়ে যতই ধুলো লাগুক, মানুষের বুকের ভেতর আশার আলো মুছে যায় না।