রাত্রির শেষ প্রহরে শব্দহীন এক চিঠি লিখি, যেখানে কলমে কালো কালি নয়—চোখের জলে ভিজে ওঠে পৃষ্ঠা। এই গদ্য কেবল আমার একার নয়, এই তো প্রতিটি ঘুমহীন তরুণের দীর্ঘশ্বাসে ছড়িয়ে আছে এর অক্ষর। চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো যেন কফিনে পোঁতা শেষ আশার পেরেক।
মায়ের চোখে আজকাল একটা নীরব অনুযোগ লেগে থাকে, যেন আমি ইচ্ছা করেই ব্যর্থ হচ্ছি। অথচ আমি তো প্রতিদিন নিজের অক্ষমতা খুঁড়তে খুঁড়তে রক্তাক্ত হই। দরজায় পেস্ট করা স্নাতকোত্তরের সার্টিফিকেটটা যেন নীরবে হাসে—“তোর দাম তো পেঁয়াজের চেয়েও কম!”
বন্ধুরা আজকাল ফোন করে না, আড্ডায় আমার অবদান নেই বলেই। প্রেমিকাও একদিন বলেছিল, “তোর স্বপ্ন বড়, কিন্তু পকেট ফাঁকা!” সেদিন বুঝেছিলাম, ভালোবাসারও একটা বাজারমূল্য আছে, আর আমি সেই নিলামে বিক্রি হই না, বরং বাদ পড়ে যাই।
বাবা খুব বেশি কিছু বলেন না। তবে সিগারেটের ধোঁয়ার ফাঁকে আমি অনুভব করি তাঁর ভেতরের ক্লান্তি—আমার ব্যর্থতার বোঝা তিনিও বইছেন নিঃশব্দে।
এই অধ্যায়টা আমি লিখি অশ্রু দিয়ে, কারণ কালি তো ফুরিয়ে গেছে বহু আগেই। শব্দ খুঁজতে গেলে আসে শুধু হাহাকার, ঘাম, এবং শূন্যতা। তবু লিখি—কারণ না লিখলে পাগল হয়ে যাব। এই লেখাই আমার বাঁচার একমাত্র প্রতিবাদ।
বেকারত্ব শুধু একটা অবস্থা নয়, এটা একেকটা গোপন কান্না, একেকটা মৃত স্বপ্নের সমাধিফলক। সময় যেন আমাকে থামিয়ে দিয়েছে, অথচ চারপাশে সবাই দৌড়াচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি—এক গলতি রোদ, এক ফোঁটা নোনতা জল আর বুকভরা অপূর্ণতার মাঝখানে।
এটাই আমার অশ্রু দিয়ে লিখা অধ্যায়। কারও পড়ার প্রয়োজন নেই। তবু যদি কেউ পড়ে, জানবে—আমি হার মানিনি, শুধু একটু দেরি করে বাঁচার চেষ্টা করছি।