তৃষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। এমন কিছু মূহূর্ত আসে জীবনে, যখন পুরো পৃথিবী থেমে যায়, আর আপনি জানেন না, আপনার চারপাশে কী ঘটছে। সে ঠিক তেমনভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল, যখন আমান তাকে কংগ্রাচুলেশন দিলো। এর পর দাদি হাতে সোনার মোটা চেইন তুলে দিলো, আর আমান নিজের হাত থেকে উপহার হিসেবে দিলো একটি ডায়মন্ডের নেকলেস।
তৃষার চোখে একটু অবাক ভাব ছিল, কিন্তু তাতে কোনো দ্বিধা ছিল না। সে জানতো, এই উপহারগুলো এক ধরনের সম্মান এবং প্রণয়ের নিদর্শন। তৃষা কাঁধে চেইন আর গলায় নেকলেসের অনুভূতি নিয়ে কিছুক্ষণ নিরব দাঁড়িয়ে ছিল। তার কাছে এই মুহূর্তটা অনেক বড় ছিল, যা সে অনেক বছর মনে রাখবে।
তৃষার বাবার চোখ বড় হয়ে গেলো। আগে কখনো এমন দৃশ্য তার সামনে আসেনি। আরিয়ান এর বস তো আসলেই অনেক সম্পদশালী! সে ভাবছিল। এছাড়া এত সুন্দর দেখতে!
তৃষার বাবা বুঝতে পারছিল না, কি হতে যাচ্ছে, তবে সে জানতো এক বিষয়—তার মেয়ে যেন একটা নতুন জীবন শুরু করতে চলেছে, এক নতুন যাত্রা, যেখানে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হবে। তৃষার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরছিল, তবে তার কাছে কিছুটা অস্বস্তি ছিল। সে জানতো, এই উপহারগুলো শুধুমাত্র বিলাসিতার প্রমাণ নয়, এর মধ্যেও এক গভীর সম্পর্কের প্রমাণ ছিল—এক ধরনের বিশ্বাস এবং মেনে নেয়া।
এদিকে, আমান তৃষার দিকে তাকিয়ে ছিল, তার চোখে এক ধরনের নতুনতা ছিল—একটাই লক্ষ্য, এই মেয়েটা যেন কিছুটা শুদ্ধ, আর সোজা। তার মন বলছিল, এটা তো শুধু উপহার নয়, এর মাধ্যমে তৃষাকে আমি আরও কাছে দেখতে চাই।
তৃষার বাবা এখনো সেই ব্যাপারে ভাবছিল। এইভাবে নতুন সম্পর্কের শুরুর সাথে এত বিলাসিতা, কখনো কল্পনাও করিনি! তবে সে কিছু বলতে পারলো না। এটা এমন একটা মুহূর্ত ছিল, যেটা প্রথাগতভাবে, অনেকেই আগ্রহ নিয়ে দেখতো, কিন্তু সামনে আসার সাহস তখনই হারিয়ে যেত। তৃষার বাবা চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল, মনে মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। তবে তার মুখে কোনো কথা আসেনি।
তৃষা, যার চোখে অস্থিরতা এবং অবাক ভাব ছিল, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, অবশেষে ধীরে ধীরে আমানকে ধন্যবাদ জানালো। যদিও তার মধ্যে একটা চাপা উদ্বেগ ছিল, কিন্তু সে চেষ্টা করছিল এই নতুন জীবন শুরু করার আগেই কোনো গাফলতি না করতে।
"ধন্যবাদ, আমান," তৃষা বলল, তার গলায় কিছুটা গাম্ভীর্য ছিল, "এটা অনেক বড় উপহার।"
আমান একটু মুচকি হাসলো। "এটা কোনো কিছু নয়, তৃষা। আপনি সবসময়ই এর যোগ্য ছিলেন।"
তৃষার মন একটু শান্ত হলো, কিন্তু তারপরও একটা অস্বস্তি থাকলো। তার বাবা মায়ের চোখে এক ধরনের বিস্ময় ছিল।
চলবে……