Posts

চিন্তা

গাজার ইতিহাস ও গাজা ইস্যুতে নিরব বিশ্ব।

April 11, 2025

Ifat Istiak

Original Author Saidur Rahaman

Translated by Ifat Istiak

411
View

         গাজার ইতিহাস ও গাজা ইস্যুতে নিরব বিশ্ব

  

গাজায় গণহত্যা: মানবতার মুখোশ উন্মোচিত  

গাজার আকাশে আজ ধোঁয়া, মাটিতে লাশ, আর বাতাসে মিশে আছে অসহায় মানুষের আর্তনাদ। একটি অবরুদ্ধ ভূখণ্ড, যেখানে জীবনযাপন নয়, বেঁচে থাকাই যেখানে প্রতিদিনের লড়াই। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার, যেখানে ২৩ লাখ মানুষ ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার। এখানে শিশুরা স্কুলে যায় না, তারা যায় গণকবরে; মায়েরা সন্তানকে কোলে নেয় না, তারা নেয় লাশের বোঝা।  

রক্তে রাঙানো ইতিহাস: গাজার ট্র্যাজেডি
১৯৪৮ সালের 'নাকবা' (বিপর্যয়) থেকে শুরু করে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ, ২০০৮-২০০৯, ২০১৪, ২০২১ এবং এখন ২০২৩-২০২৪—ফিলিস্তিনিরা বারবার গণহত্যার শিকার হয়েছে। কিন্তু গত এক দশকে গাজায় যা ঘটেছে, তা ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস অধ্যায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় মাত্র ছয় মাসে ৩৫,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১২,৫০০ শিশু এবং ৮,০০০ নারী। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩টি শিশু মারা যাচ্ছে।  

গণহত্যার চিহ্ন: কীভাবে প্রমাণিত? 
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, গণহত্যার ৫টি বৈশিষ্ট্য:  
১. একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করা (ফিলিস্তিনিরা, বিশেষত গাজাবাসী)।  
২. সদস্যদের হত্যা (প্রতিদিন ৩০০+ মৃত্যু)।  
৩. শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি (অপুষ্টি, ট্রমা, বোমা হামলা)।  
৪. জীবনযাত্রা ধ্বংস (৮০% বাড়ি ধ্বংস, ৯০% পানির অপরিশোধিত)।  
৫. জন্মরোধ (গর্ভবতী নারীদের জন্য কোনো চিকিৎসা নেই)।  

উদাহরণ:
- শিফা হাসপাতালে হামলা: ২০২৪ সালের মার্চে ইসরাইলি বাহিনী গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল ঘেরাও করে, যেখানে ১০,০০০-এর বেশি বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছিল। ডাক্তারদের বন্দি করে অপহরণ করা হয়, রোগীদের ওপর গুলি চালানো হয়।  
- ইউনিভার্সিটি ধ্বংস: ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা, যা ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা সম্পূর্ণভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।  
- ক্ষুধার্ত শিশু: UNICEF-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫ লক্ষ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। অনেক শিশু গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে আছে।  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভণ্ডামি  
পশ্চিমা মিডিয়া ও সরকারগুলো ইসরাইলকে "আত্মরক্ষার অধিকার" দিয়ে এই গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে। কিন্তু সংখ্যাগুলো স্পষ্ট:  
- ইসরাইলি সৈন্য মৃত্যু: ২৫০ (২০২৩-২০২৪)।  
- ফিলিস্তিনি মৃত্যু: ৩৫,০০০+।  
এটি আত্মরক্ষা নয়, এটি ধ্বংসযজ্ঞ।  

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা:  
বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলকে ১০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দিয়েছে, যা সরাসরি গাজার শিশু হত্যায় ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ এই একই সরকার মিয়ানমার বা ইউক্রেন নিয়ে কাঁদে।  

গাজাবাসীর ডায়েরি থেকে: মানবিক বিপর্যয়
- আয়েশা (৯ বছর): "আমি ভয় পাই রাতের আঁধারে বোমার শব্দে। আমার বন্ধু সারাহ বোমায় মারা গেছে। আমি তার জন্য কাঁদি, কিন্তু আমাকে বলেছে কাঁদতে নেই, কারণ পানি খুব দামি।"  
-ড. ফাদি (শিফা হাসপাতাল): "আমরা অ্যানেসথেশিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করছি। শিশুরা চিৎকার করে, কিন্তু আমাদের কাছে কিছুই নেই।"  

আমাদের করণীয়ঃ
১. সচেতনতা: সোশ্যাল মিডিয়ায় গাজার ভয়াবহতা শেয়ার করুন।  
২. বয়কট: ইসরাইলি পণ্য (যেমনঃ কোকাকোলা, Puma, HP) বর্জন করুন।  
৩. দান: UNRWA, PCRF, বা স্থানীয় সংস্থাগুলোকে সাহায্য করুন।  

শেষ কথা: ইতিহাস আমাদের বিচার করবে
গাজার গণহত্যা শুধু ফিলিস্তিনের নয়, এটি সমগ্র মানবতার কলঙ্ক। যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জিজ্ঞাসা করবে, "আপনি কোথায় ছিলেন?"—নিশ্চয়ই আমরা বলতে চাইব, "আমি ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম।"  এবং আমরা যেন সেদিন বলতে পারি আমরা ছিলাম আমাদের নিপীড়িত ভাইদের পাশে। স্রষ্টা আমাদের সেই তৌফিক দান করুক এবং ফিলিস্তিনবাসীদের হেফাজত করুক।
From the river to the sea, Palestine will be free.(inshallah)

লেখকঃSaidur Rahman
তারিখঃ11-4-25


তথ্যসূত্র:  
- UN OCHA (২০২৪) রিপোর্ট  
- Gaza Health Ministry-এর পরিসংখ্যান  
- Amnesty International-এর ডকুমেন্টেশন  
- Al Jazeera, Middle East Eye-এর প্রতিবেদন

Comments

    Please login to post comment. Login