তৃষা আর আমানের মধ্যে তখনও কথাবার্তা চলছে। সবাই বেশ আনন্দে মেতে আছে। হঠাৎ করেই আরিয়ানের মোবাইলে একের পর এক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসতে শুরু করল।
প্রথমে সে পাত্তা দিল না। ভাবল, হয়তো ভুল নাম্বার। কিন্তু তারপর টানা তিনবার রিং হতে থাকল—একই নাম্বার থেকে, তারপর অন্য আরেকটা অচেনা নাম্বার। তার মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেল। তৃষা দূর থেকে তা খেয়াল করল, কিন্তু কিছু বলল না।
চোখের ইশারায় মাফ চেয়ে আরিয়ান ফোনটা কানে তুলল।
"হ্যালো?"
ওপাশে কয়েক সেকেন্ড নীরবতা... তারপর একটা গলা—মৃদু কিন্তু ছদ্ম আবরণে চাপা রাগ।
"তোমার খেলা অনেক হয়েছে, আরিয়ান। এবার পালানোর সময় শেষ। তুমি ভেবেছো তুমি আমায় এড়িয়ে চলতে পারবে? ভুল করছো।"
আরিয়ানের চোখ দুটো এক লহমায় তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। সে কিছু না বলেই ফোন কেটে দিল, তৃষার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চাইল, কেউ কিছু শুনেছে কিনা। সবাই ব্যস্ত, কেউ খেয়াল করেনি। কিন্তু তার মন অস্থির হতে শুরু করল।
তারপর আরেকটা কল... এবার আরেক নাম্বার থেকে।
"আমি জানি আজ তোমার বিয়ে। জানতেও পারবে না কখন সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।"
আরিয়ান এবার ফোনটা একদম অফ করে ফেলল, বুকের ভেতর অজানা চাপ অনুভব করছিল। তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেছে, যেটা তৃষা এবার স্পষ্ট টের পেল।
সে ধীরে ধীরে কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "সব ঠিক আছে?"
আরিয়ান কষ্টের হাসি দিয়ে বলল, "হ্যাঁ, কিছু না... পুরনো ক্লায়েন্ট কিছু ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে বিরক্ত করছে।"
কিন্তু তার চোখ বলছিল অন্য কথা—ভয়, শঙ্কা আর একটা অজানা বিপদের ছায়া। তৃষা অনুভব করল, সামনে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে… খুব শীঘ্রই।
তখনও তারা কেউ জানত না, এই অচেনা নাম্বারগুলোই হতে চলেছে তাদের জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা…
সবাই মিলে ঘর ভর্তি আনন্দ আর আলোয় বসে আছে। বেজে উঠেছে সানাই, বাতাসে গোলাপের হালকা সুগন্ধ। কনের সাজে তৃষা যেন চোখ ধাঁধানো — লাল বেনারসীতে যেন রুপকথার রাজকন্যা। পাশেই বর আসনে বসে আছে আরিয়ান—গা গর্জানো শেরওয়ানিতে যেন এক আত্মবিশ্বাসী রাজপুত্র।
দুই পরিবারের হাসিমুখ আর আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল, এ যেন এক স্বপ্নের দিন।
কাজী সাহেব এসে বললেন, “চলুন, বর-কনে একসাথে বসুন। আল্লাহ্র নামে এই শুভ বন্ধন শুরু হোক।”
তৃষা আর আরিয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক হাসল। ওদের চোখে যেন একটা নীরব প্রতিজ্ঞা—“আমরা একসাথে সব পার করব।”
কাজী যখন বিয়ের খুতবা শুরু করলেন, সবাই নিঃশব্দে শুনছিল। একেকটা বাক্যে যেন ওদের জীবনের গল্প বাঁধা পড়ছে।
“কিয়া আপ্ কো আরিয়ান কে সাথ নিকাহ্ কবুল হে?” — এই প্রশ্নে তৃষার মুখে লাজুক হাসি, চোখ নিচু করে নরম গলায় বলল, “কবুল হে।”
আরিয়ানের দিকেও প্রশ্ন গেল। সে গভীর চোখে তৃষার দিকে তাকিয়ে, গলায় একধরনের স্থিরতা নিয়ে বলল, “কবুল হে।”
তিনবার করে কবুল হবার পর মুহূর্তেই ঘরে উল্লাস! হাততালি, আনন্দধ্বনি—সবকিছুতে ছেয়ে গেল সেই রুম।
তৃষা খুশিতে লাফিয়ে উঠল, যে বিয়েটা হয়ে গেলো কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে দেখে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিল এতক্ষণ।
দূরে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান ফোনে কথা বলছে, কিছুটা টেনশন এ আছে।
চলবে.....