একটা সময় ছিল, যখন তার চোখে আলো জ্বলে উঠতো নিজেরই হাতের রেখা দেখে। চারপাশের ধূসরতা যেন পিছু হটতো তার স্বপ্নের আগুনে। পৃথিবীর বুক যেন প্রস্তুত ছিল, এক নতুন আগুনের জন্ম দেখবে বলে—এক প্রতিভার, এক অজানা সম্ভাবনার।
সে লিখতো, আঁকতো, ভাবতো—যেন সবকিছুর মধ্যে একটা অন্যরকম ব্যাখ্যা খুঁজে নিতে পারতো। বন্ধুদের ভিড়ে সে আলাদা, পরিবারের গর্ব হয়ে ওঠার মতো যথেষ্ট আলোর জ্বালানি ছিল তার ভেতরে। কিন্তু সেই আগুন আজ নিভু নিভু।
সময়টা তার সাথে ছিল না, হয়তো তার নিজের কিছু ভুল, কিছু অবিবেচিত সিদ্ধান্ত, কিছু ভয়—যার কাছে হার মানলো তার আগুন। সমাজও হাত মেলালো না, বরং প্রতিনিয়ত তাকে বোঝাতে লাগলো, “এ সব দিয়ে কি হয়?”—এ কথাগুলো হয়ে উঠলো জল, যা ধীরে ধীরে তার আগুনকে নিভিয়ে দিতে থাকলো।
এখন সে চুপচাপ। নিজের ভেতরে একটা দহন বয়ে চলে, অথচ মুখে হাসি—ভাঙা আয়নার মতো প্রতিদিনের মুখোশ পরে। সে জানে, তার ভেতরে এখনো আগুন আছে, তবে সেই আগুন কাঁপে, নিভে যেতে চায়, আবার বাঁচতেও চায়।
এই পৃথিবীর বুক হয়তো সেই আগুনের পুনর্জন্ম দেখবে না, কিন্তু কেউ জানে না, কোন নিভু নিভু শিখা হঠাৎ একদিন দাবানলে রূপ নেয়।
তবে আজ, সে শুধু হেঁটে চলে—নিজের ছায়ার পাশে পাশাপাশি, কাঁধে চাপা কষ্টের বোঝা নিয়ে, যেটা বোঝে না কেউ। প্রতিভা তার এখনো বেঁচে আছে, শুধু আর আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়তে জানে না।
তবুও, এক অদৃশ্য আশায়, সে হয়তো আজও অপেক্ষা করে—পৃথিবীর বুকে আবার কোনো আগুনের আবির্ভাব ঘটবে। হয়তো তারই ভিতর থেকে, শেষবারের মতো।