Posts

চিন্তা

বৈশাখ নিয়ে নাটক কম কর পিও!

April 12, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

171
View

চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী ও পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদ জামিলের জুলাই আন্দোলনের সময়কার বানানো ক্যারিকেচার মোতাবেক বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রাকে উপলক্ষ করে ফ্যাসিবাদের আদল তৈরি করা হচ্ছিল ওই শিল্পীকে ক্রেডিট না দিয়েই। যদিও বিষয়টি নিয়ে নানামহলে বিতর্ক তৈরি হচ্ছিল।

প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ গতকাল তাঁর সোশ্যাল হ্যান্ডেলে, 'আনন্দ শোভাযাত্রা ঠিক আছে, ডাইনি মূর্তিবহন ঠিক নাই' -শিরোনামে লিখেন, 'ষাট দশকের ছায়ানটের বর্ষবরণ চলুক, নব্বই দশকের আনন্দ শোভাযাত্রা চলুক, অন্যভাবে যদি কেউ কিছু করতে চায়, সেটাও চলুক। সংস্কৃতিতে জবরদস্তি চলে না। একে শতভাগ সেকুলার, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক করাও যায় না। কিন্তু একে  অন্তত রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবমুক্ত করা যায়।

ঠিক সেকারণেই, যদি আগে এই শোভাযাত্রার ঘাড়ের ওপর ঘৃণার নিদর্শন তোলা হয়ে থাকে, এবারে তা যেন করা না হয়। শেখ হাসিনার যে ডাইনি মূর্তি জনমণে প্রতিষ্ঠিত, বর্ষবরণ মিছিলে ডাইনি পুতুল বহর করার মাধ্যমে সেই মূর্তিকে হালকা করার কোনো দরকার দেখি না।'

আজ দুপুরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'হাসিনার দোসররা গতকাল ভোর রাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে- সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক- তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আসতে হবে, দ্রুত।

গত কিছুদিন জুলাই আন্দোলনের পক্ষের অনেকেই বলেছিলেন, এবারের শোভাযাত্রা সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভিন্ন রকমের হচ্ছে। এখানে ফ্যাসিবাদের ঐ বিকট মুখ না রাখাই ভালো। আমরাও সব রকম মত নিয়েই ভাবছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মত জানার চেষ্টা করছিলাম।'

তিনি একদিকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই দায় চাপালেন লীগের দোসরদের ওপর, আবার পরক্ষণেই বলছেন, আমরাও ভাবছিলাম, ফ্যাসিবাদের ওই বিকট মুখ না রাখাই ভালো!'

এর আগে আমরাও লিখেছিলাম, 'নববর্ষের দিন একটা আনন্দ শোভাযাত্রায় ড্রাকুলার মতো ভয়ঙ্কর কোনো ক্যারেক্টার শিশুতোষ মনের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। বীভৎস দাঁত বের করা একতলা ভবনের সমান একজন মনুষ্যের মাথা দেখে সবল চিত্তের লোকেরা হরর ফিল্মের ফিল পেতে পারে। কিন্তু সরল সাদাসিধে মানুষের তা হজম নাও হতে পারে। যেমন হজম হয়নি বইমেলার মতো পবিত্র অঙ্গনে নষ্ট ডাস্টবিন।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাকে পেছনে ফেলতে চান, তাকে ইগনোর করা শিখতে হয়। তার নাম অনুচ্চারিত রাখতে হয়। পক্ষান্তরে আপনারা নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষকে নানামুখী অদ্ভুতুড়ে ক্রিয়াকর্ম দ্বারা করে তুলতে চান প্রাসঙ্গিক। দেশের দিন ঘোরাতে চাইলে মানসিকতার বদল দরকার, কিন্তু আপনাদের পছন্দ হলো বদলা! এই অদল বদলের বলদামিতে মানুষের কোনো মুক্তি নাই। এই ভূমিরও কোনো ফায়দা নাই।

অপরাধীর বিচার করুন আইনানুগ ও যথোচিত। অপরাধপ্রবণতার রাজনীতিকীকরণ সভ্যতার পরিচয় বহন করে না।

সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোত সম্পর্ক আনন্দ, সৌন্দর্য ও রুচির। টেনে টেনে অন্ধকার সামনে আনা আগেও যেমন ভালো ছিল না। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, দয়া ও দরদের কালে এটি আরো বেশিই ভালো না।'

আজ শুনলাম ক্রমশ রঙিন ও আরো দাঁতালো হয়ে ওঠা বৃহৎ কান বিশিষ্ট ফ্যাসিবাদের আদল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য এখনো কোনো পক্ষ দায় স্বীকার করেনি।

আনন্দ শোভাযাত্রায় বিকৃত মনুষ্য মুখ প্রদর্শন অরুচিকর নয় কেবল, মানসিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মননশীল ও পবিত্র প্রাঙ্গনে সাথে এই রাজনীতি যায় না। ঔদার্য ও প্রেমের আঁতুড়ঘর হলো বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রীয় আয়োজনের মাধ্যমে জনমানসে ঘৃণাচর্চার বীজ বুনে দেয়া শিক্ষায়তনের কাজ না। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ভয়ঙ্কর ও বীভৎস অমানুষকেও মানুষে রূপান্তর করা।

ভয়াল দানব বানানোর কাজটি যদি জামায়াত-শিবির বা এনসিপি করতো, আমরা কিছুই মনে করতাম না। তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিরুচিতে ওসব যায়। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিএনপি এমনটা করবে না। যদিও খালেদা জিয়ার পাপেটের হাতে পেট্রোলবোমা দিয়ে ঢাকার শহর ঘোরানোর বাজে অপরাধ করে রেখেছে তৎকালীন শাসক দল।

ফ্যাসিজমের আদল‌ আগুন পুড়িয়ে ফেলার পর নববর্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ।

প্রতিকৃতিগুলো নতুন করে বানানো হবে কি না জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শোভাযাত্রা হবে কি না, আমরা জানি না। এর আগে তো এমন হয়নি। আমরা খুবই বিপর্যস্ত। আলোচনা হচ্ছে, আমরা বসেছি। কথা বলছি। পরে জানাব।’

আমরা বলব, আগে পরে ভাবার সময় নাই। বৈশাখে সর্বজনীন উৎসব হবে। শোভাযাত্রাও হবে। ফ্যাসিবাদের আদলের জন্যে কিছুই থেমে থাকবে না। পুড়ে গেছে, জঞ্জাল দূরীভূত হয়েছে। তাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে বাড়তি বাহানার কিছু নাই। নাটক দেখানোরও জরুরত নাই। এমনিতেই চারুকলার স্টুডেন্টদের কাছ থেকে শোভাযাত্রাকে বেহাত করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির ভিতর অনুপ্রবেশ করে দিয়ে যথেষ্ট জল ঘোলা করা হয়েছে। আনন্দ হবে সবার সমান্তরাল।

আমরা জানি যারা আগে আওয়ামী লীগের নামে জপমালা জপত, সকল সুবিধাবাদিতা কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে নিত তারাই এখন নতুন স্রোতে রঙ মিশিয়েছে। আপনারা সবখানে সমানভাবে মিশতে জানেন। তালগাছটাও নিজের করে রাখতে জানেন। অতঃপর 'বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা' যা হওয়ার তাই হবে!

ফারদিন ফেরদৌস 
১২ এপ্রিল ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login