আদিত্য সিদ্ধান্ত নিলেন—যেখানে তার নানার অতীত জড়িত, যেখানে বারবার ছায়ার মতো কিছু টেনে নিচ্ছে, সেখানে একবার যাওয়া দরকার। যেভাবেই হোক। ইতিহাস শুধু বইয়ের পাতায় খুঁজে পাওয়া যায় না, কখনো কখনো নিজের রক্তের ভেতরেও তার ধ্বনি বাজে।
তিনি পৌঁছালেন কাঞ্চনপুর রেলস্টেশনে। এটা ছিল চরামণির সবচেয়ে কাছের স্টেশন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই স্টেশন এখন আর সরকারিভাবে ব্যবহৃত হয় না। ট্রেন চলে না বহু বছর—তবু আদিত্য দেখতে পেলেন একটা ধোঁয়ায় মোড়া কালো ইঞ্জিন ঢুকছে স্টেশনে।
ইঞ্জিনটা থামল। দরজা খুলে গেল ধীরে ধীরে। ভেতরে কোনো আলো নেই, শুধু এক বৃদ্ধ কনডাক্টর দাঁড়িয়ে। চোখদুটো যেন নিঃসাড়, অথচ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল—এই ট্রেন তার জন্য।
আদিত্য একটু দ্বিধায় পড়ে গেলেও উঠে পড়লেন ট্রেনে।
ট্রেন ছাড়ল।
কিন্তু সময় বয়ে গেলেও, বাইরে দিন-রাত কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। জানালার বাইরে যেন ঘূর্ণায়মান ছায়া, অসংখ্য মুখ, যাদের চোখে কেবল শূন্যতা।
হঠাৎ ট্রেন থামল। কোথাও লেখা নেই কোন স্টেশন। কনডাক্টর বলল—
“এইখানেই নামতে হবে। চরামণি আসেনি, কিন্তু ওদের একজন এসেছে।”
আদিত্য নেমে পড়লেন। চারপাশে ঘন কুয়াশা। দূরে একটা পুরোনো ফটক দেখা যাচ্ছে—ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ির মতো দেখতে।
তিনি পা বাড়ালেন, কিন্তু কুয়াশার মধ্যে এক কণ্ঠস্বর কানে ভেসে এল—
“তুমি দেরি করে ফেলেছ, ইতিহাস এবার নিজেই তোমাকে লিখবে...”
[চলবে...]