আদিত্য তার নিজের মুখে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে স্থবির। নারীর চোখ দুটি যেন অতীত আর ভবিষ্যতের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা দুই শূন্য গহ্বর।
“আমি সেই তুমি, যে ফিরে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু পারোনি। আমি সেই ছায়া, যাকে তুমি ফেলে এসেছিলে তোমার জন্মের মুহূর্তে।”
ঘরের দেয়ালগুলো হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে। আয়নার ভেতর থেকে ভেসে আসে শত শত মুখের গুঞ্জন—সবগুলো মুখ আদিত্যর মতো, কিন্তু সবগুলো মৃত।
নারীটি ধীরে ধীরে পেছনে সরে গিয়ে আয়নার দিকে ইশারা করে বলল—
“এখন তুমিই ঠিক করো। ফিরে যাবে? নাকি সত্যকে আলিঙ্গন করবে?”
আদিত্য বুঝতে পারলেন—তিনি কখনোই ‘আদিত্য’ ছিলেন না। তিনি শুধু ইতিহাসের একটি প্রতিধ্বনি, একটি চক্রের পুনরাবৃত্তি। প্রতি পঁচিশ বছর পর এক ইতিহাসবিদ চরামণির ছায়ায় হারিয়ে যায়। তার রক্তে ছিল সেই ছন্দ, সেই অভিশাপ। তার “নানা”ও আদতে ছিলেন তারই আগের রূপ।
হঠাৎ আয়না নিজে থেকেই ফেটে গেল—আর ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক শিশুর কান্না। নারীটি ধীরে গিয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নিল।
“তুমি এবার শুদ্ধ হয়ে গেছো। তোমার নতুন জন্ম শুরু হলো।”
আদিত্য চোখ বন্ধ করলেন।
যখন তিনি চোখ খুললেন, তিনি নিজেকে দেখতে পেলেন—কলকাতার এক হাসপাতালের বিছানায়, সদ্য জন্ম নেওয়া একটি শিশুর পাশে বসে আছেন একজন ডাক্তার।
“অভিনন্দন! আপনার ছেলের নাম কী রাখবেন?”
তার পাশে বসা নারীটি—একজন মা—বললেন,
“আদিত্য।”
শেষ
চরামণির ছায়া ভেঙে যায়, কিন্তু চক্রটি রয়ে যায়।
কারণ কিছু গল্প শুধু শোনা যায়, মুক্তি মেলে না—
তারা ফিরে আসে… নতুন রূপে।