শূন্যতার শশব্যস্ত স্পন্দন
ধ্বংস এখানে এক প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ,
প্রতিটি পৃষ্ঠায় আগুনের মুখবন্ধ।
গর্ভে মৃত সন্তান—মাতৃত্ব এখন এক অপঠিত অস্তিত্ব,
ভ্রূণছিন্ন ভবিষ্যৎ খেলা করে বুলেটের বৃষ্টিতে।
পৃথিবী তার নাভি খুলে দিয়েছে এখানে—
রক্তের ঢেউয়ে ভেসে যায় ব্যঞ্জনাসম্পৃক্ত মানবতা।
শূন্যতার শশব্যস্ত স্পন্দনে
একজন বালক প্রশ্ন করে:
“কান্নার কি কোনো ধর্ম আছে, মা?”
আকাশ নয়, যেন ভস্মরেখায় আঁকা এক অবসন্ন অন্তিমগাথা,
ধোঁয়া নয়, সেগুলো আত্মার ধ্বংসাবশেষ—
অগ্নিলিপ্ত আত্মচারণা,
যারা ঈশ্বরের দরবারে পৌঁছানোর আগেই
নিষিদ্ধ হয়ে যায় রাষ্ট্রীয় ছাপমোহরে।
পাখিরা যাদের ডানায় আগুন নিয়ে ওড়ে,
তারা আর গান গায় না,
শুধু শোকের সুরে বাঁকা হয়ে পড়ে অস্তরাগের ছায়া।
আর শহর?
সে তো এখন কাঁপতে থাকা এক নিরব উপবীত,
যেখানে প্রতিটি ইট, প্রতিটি গলি, প্রতিটি স্তব্ধ জানালা
একটি নামহীন কবরে পরিণত।
এখানে কেবল ঈশ্বর বসে থাকেন ধ্বংসের মসনদে—
নির্বাক, অলঙ্ঘ্য, নিষ্ক্রিয়।
হয়তো তিনি ক্লান্ত, হয়তো রক্ত তারও পবিত্রতায় পুড়ে গেছে।
মহাকাব্য
তার কপাল— প্রাচীন মন্দিরের শ্বেত পাথর,
যেখানে সময় থমকে দাঁড়ায় আর পূজা জাগে।
চোখ— দুটি গহীন কালো হ্রদ,
যার অতল জলে ডুবে যায় সমস্ত যুক্তি।
গ্রীবা তার এক বিন্যস্ত সেতার,
যেখানে সুর বাঁধে সমুদ্রের বাতাস।
বক্ষযুগল— দুটি অরুণোদয় গিরিশৃঙ্গ,
যেখানে প্রথম রোদ্দুর রেখে যায় স্বর্ণচুম্বন।
পাঁজর— বাঁকানো চাঁদের কংকালের মতো,
যার ছায়ায় শুয়ে পড়ে ক্লান্ত রাত।
নাভি— মরুদ্যানের এক রহস্যময় কূপ,
যেখানে তৃষ্ণা খুঁজে পায় অনন্ত সুধা।
উরু তার নদীর দুই পাড়—
যেখানে ঢেউ এসে আদরে মেশে।
আর জঙ্ঘা— দুটি শাল কাঠের স্তম্ভ,
যার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে কামনার প্রাসাদ।
এই শরীর কোনো সাধারণ ভূমি নয়—
এ এক দুর্জ্ঞেয় মহাকাব্য।
গুপ্তদ্বার
অগ্নিস্নানের ঘূর্ণি থেকে উদ্ভূত এক মহামন্ত্র,
যেখানে শ্বাস নেয় মহাবিশ্বের প্রথম উষ্ণতা।
সৃষ্টির আদিলিপি লেখা তার গভীর খামে,
রাত্রির গর্ভে যে ধারণ করে সূর্যের অঙ্কুর।
সে এক অনন্ত কুহক, অন্ধকারে দীপ্ত শিখা—
স্পন্দনে জাগায় মহাযুগের বিস্ময় সংগীত।
মেঘের মতো কোমল, অথচ বিদ্যুৎসম দীপ্ত সেখানে ঘুমিয়ে থাকে জন্ম ও বিলয়ের চিরপথ।
তার গহীনে প্রবাহিত হয় সময়ের গোপন নদী
তরঙ্গে জাগে চন্দ্ররশ্মির মায়াবী ছন্দ।
তপস্যার গভীর তিমিরে সে এক পবিত্র মন্দির
যেখানে প্রতিটি স্পর্শই হয়ে ওঠে আরাধনা।
স্মৃতিমৈথুন
তাঁর যোনী নয়
তাঁর স্তনের উত্তাপও নয়
তার চেয়ে দামি ছিলো—
তাঁর মায়া।কায়া।প্রেম।
সে ছুঁয়ে দিলে
বাতাসে গলে যেতাম
তাঁর চোখে এক ফোঁটা বিষাদ
আমার সমুদ্র গিলে নিত।
ব্রহ্মপুত্রের তীরে হাঁটতে হাঁটতে
তাঁর আঙুলে জড়িয়ে থাকত
অগোছালো গল্প।
শুনতাম কান পেতে
ডুবতাম যেনো অনায়াসে সমুদ্রে।
আজো সে নদীর ঢেউ আসে
দুকূল উপচে।তীরের বালিতে নেই
তাঁর পায়ের চিহ্ন।
তাঁকে ঠুকরে ঠুকরে নিয়ে আসে শামুক
ঠিক যেমন নদী আহ্লাদে আহ্লাদে
স্মৃতিমৈথুন করে জীবনের প্রথম উৎস।
যীশু
যেনো আমিই বেথেলহামের সেই যীশু
বুকে বিদ্ধ তোমার প্রেমের বিরহী ক্রুশ।
তবুও যোহন থেকে তোমাকে শোনাই
বিনা প্রেমে ঈশ্বরের কখনো মিলে হুশ?