সময়ের বাইরে থাকা কক্ষটা যেন এক ঘূর্ণি। ঘড়ির কাঁটাগুলো থেমে থাকলেও চারপাশের দেওয়াল যেন নড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। গোবিন্দ মাষ্টার ছায়ামূর্তির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। সে একবার হেসে বলল—
“আমরাই ছিলাম প্রথম পাহারাদার… এখন তোমার পালা। বের হতে হলে ফিরে যেতে হবে, যেদিন তুমি প্রথম চিঠি ছুঁয়েছিলে। কিন্তু মনে রেখো—সেই দিনটা আবার ফিরে এলে, তুমি আর তুমি থাকবে না।”
গোবিন্দ মাষ্টার পাথরের চক্রের চারপাশে থাকা ছায়াদের দিকে তাকালেন। সকলেই একসময় তাঁর মতো ছিল—মানুষ, গোবিন্দ নামেই। কেউ ১৯৪৭ সালের, কেউ ১৯৭১, কেউ ২০০১। সবাই চিঠিটা পেয়েছিল, সবাই সময়কে ঘাঁটাতে গিয়েছিল।
হঠাৎ করেই দেওয়ালের একটি ঘড়ি ফেটে গেল, এবং একটা আয়না বেরিয়ে এল—অদ্ভুত, সেই আয়নায় তাঁর প্রতিবিম্ব নেই। বরং দেখা যাচ্ছে ডাকঘরের সেই মুহূর্ত—যখন তিনি প্রথম খামটা খুঁজে পেয়েছিলেন।
ছায়ামূর্তিটি বলল—
“এই আয়না সময়ের ফাঁক। ঝাঁপ দিতে পারো, ফিরে যেতে পারো। তবে মনে রেখো, একটাই চেষ্টা—ব্যর্থ হলে তুমিও আমাদের মতো ছায়া হয়ে যাবে।”
গোবিন্দ মাষ্টার এক মুহূর্ত সময় নিলেন না—আয়নার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
চোখ খুলতেই নিজেকে দেখলেন ডাকঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন। খামটা তখনো তাঁর হাতে। সবকিছু স্বাভাবিক—বাইরে পাখির ডাক, আলো ঝলমলে দুপুর।
তাঁর বুক হাঁফিয়ে উঠছে। তিনি ঠিক করলেন, এই খাম আর তিনি ছুঁবেন না। আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।
কিন্তু…
যখন খামটা আগুনে ছুঁড়ে দিলেন, তখন হঠাৎ দেখা গেল—চিঠির কালি উঠে এসে হাওয়ায় ভাসতে লাগল, আর সেখানে স্পষ্ট একটা লাইন ভেসে উঠল—
“তুমি ফিরলে বটে, কিন্তু ঠিক সময়েই?”
গোবিন্দ মাষ্টার চারপাশে তাকালেন। সবকিছু একটু কেমন অচেনা লাগছে… দেয়ালের ঘড়ি এগিয়ে চলছে না, একটুও না…
তারপর তিনি আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বে তাকিয়ে চমকে উঠলেন।
ওটা তাঁর নয়।
চলবে…
এই পৃথিবী কি এখন সময়ের প্রতিচ্ছবি? নাকি গোবিন্দ আসলেই পাল্টে গেছে?