Posts

উপন্যাস

পার্ট : দুই এইতো প্রনয়

April 15, 2025

Sadia afrin Tumpa

20
View

ইরার সব সত্যি বের করতে হবে। আর তার ভাই যে এসব এর পিছনে আছে সেটা একটু হলেও সন্দেহ করছে ইরা কারণ সে তো তার নিজের ভাই না, নিজের রক্তের না! সমাজের যত অপকর্ম আছে ইয়াশ করে বেড়ায়। ইয়াশ ছিলো তার বাবার আগের পক্ষের ছেলে। ইয়াশ এর মা মারা যাওয়ার পর রফিক সাহেবের সাথে অনামিকা বেগমের বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে। তাদেরই  কোল আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে ইনায়াত ইরা। দুধে আলতা গায়ের রঙ, হাটু সমান লম্বা চুল, খাড়া নাক, হরিণ এর মতো টানা টানা কাজল চোখের অধিকারী সে। এক দেখাতেই যে কেউ মোমের পুতুলের মতো ইরার প্রেমে পড়তে বাধ্য। সে এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। অপরদিকে, ইয়াশ! পুরো নাম ইয়াসিন ইয়াশ! যেনো ইরার বিপরীত। কাজকর্ম এ কোনো ঠিক নেই! কিন্তু ইয়াশ প্রচন্ড মেধাবী একজন স্টুডেন্ট ছিলো। হুট্ করে সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লো। এলাকা থেকে প্রায় নালিশ আসতো ইরার বাবার কাছে। মদ, গাঁজা, সিগারেট এসব কমন ছিলো ইয়াশ এর কাছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই ইয়াশ করেনি। মেয়েদের টিজ করে বেড়ায় সে, মারপিট করে, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে! বাবার কাছে কারণে অকারণে টাকা দাবি করতো। বাবাকে হুমকি দিয়ে টাকা নিয়ে যেতো। এগুলো নিয়ে ইয়াশ আর বাবার মধ্যে প্রচন্ড বিরোধ ছিলো।   
কিন্তু ইরার জানতে হবে কে এই আয়াজ? যার কথা বার বার বলতো ইয়াশ, সে কী তাহলে সেইই আয়াজের কথায় এসব করতো? 
চট করে নিজের ফোনটা হাতে নেয় ইরা। ইরার ধারণা যেহেতু তুখোড় রাজনীতিবিদ সেহেতু গুগলে একটু হলেও ইনফরমেশন পাওয়া যাবে।  কারণ ইয়াশ এর মুখে প্রায়ই শুনতো ইরা আয়াজ এর কথা। তাই গুগলে সার্চ করে,

-হো ইজ আয়াজ?

ফার্স্ট এ আয়াজ এর কিছু ছবি  আসে।  একটা ছবিতে চোখ আটকে যায় ইরার। ফর্মাল লুকে ছিলো সে। ব্ল্যাক কোর্ট, ব্ল্যাক প্যান্ট, ব্ল্যাক পলিশ করা চকচকে শো, ব্ল্যাক সানগ্লাস! স্টাইলিশ চুল, হাতে অ্যাপল  ওয়াচ। মনে হয় চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করতে করতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মুখের ভাবভঙ্গি অনড়। আশেপাশের গার্ডরা রাস্তা বের করে দিচ্ছে মনে হয়। ছবিটা হয়তো  ক্যান্ডিড। এরকম অনেক ছবিই দেখলো সে। সবগুলো চোখ ধাঁধানো! এতো সুদর্শন রাজনীতিবিদ তাদের  শহরেই আছে ভাবতেই ইরার কেমন জানি লাগে! কিশোরী ইরা ভুলেই বসলো তার বাবার খুনের কথা, সে ভয়ঙ্কর দিনের কথা। কৌতূহল এর সাথে খুঁজে বের করতে শুরু করলো আয়াজ এর সব ডিটেলস। সেই পেইজ এর কোনো এক কোণ থেকে কোনোভাবে জানতে পারলো আয়াজ এর পুরোনাম 'আদিয়ান ওয়াজিহ আয়াজ '!  সে আবার সার্চ করলো, 
হু ইজ আদিয়ান ওয়াজিহ আয়াজ?
গুগলে একটা ইন্টারফেজে শো করলো,
- Adiyan Wazih Ayaz is a member of Parliament in Bangladesh. He is  an Mp of Dhaka -10.  He was bron in 8 August 1996  Dhanmondi in Dhaka. He was graduated from Harvard University, Cambridge ( USA ). His father namer is Faruq Wazih and his grand father name is Ali Ahmed Wazih. Their names are associated with the world's prominent businessmen.

আলী আহমেদ ওয়াজিহ এর নাম দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো ইরা । এই নামটা শুনেছিলো সে!  তাছাড়া বাবার নামের পাশে ওয়াজিহ লিখতে দেখেছিলো ইরা। কিন্তু বাবা এড়িয়ে যেতো। প্রায়ই ভুল করে লিখে ফেলতো রফিক ওয়াজিহ। কিন্তু ইরা তো জানে বাবার নাম শুধু রফিক, কেউ কেউ বসিয়ে দিতো রফিক সাহেব। ইয়াশ এর নামের সারনেইমও কেটে দিতে দেখেছিলো ইরা। মনে মনে ভাবলো যাই হোক, এতকিছু ভেবে লাভ নেই।

ইরা কতক্ষন তাকিয়ে দেখলো গাছগুলো! বাড়ি থেকে কয়েক কদম দূরে বাবার  কবর, গুটি গুটি পায়ে সেখানেই হেঁটে গেলো ইরা। মন খুলে বাবার জন্য দোয়া করলো! বাবার ধোঁয়াশা মৃত্যুর রহস্য ইরাকে  খুঁজে বের করতেই হবে।  বাবাকে দেখে ইরা বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো! বাসার গেইট এর কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেলো দুই তিনটা কালো গাড়ি। একটা গাড়ি থেকে ইয়াশ বের হলো। এতদিন পরে ইয়াশকে দেখতে পেলো ইরা। দৌড়ে  ইয়াশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ইরা। এলোপাথাড়ি মারতে লাগলো ইয়াশকে। কান্নারত কণ্ঠে শুধালো,
- আমার বাবা তোমাকে কী করেছিলো ইয়াশ ভাই! কেনো তুমি বাবাকে মারলে? তুমি  ঠুনকো একটা রাজনীতিবিদ এর কথায় নিজের বাবাকে খুন করলে ইয়াশ ভাই? আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, মা আমাকে ভুল বুঝেছে ইয়াশ ভাই।

ইরার কথা শুনে ইয়াশ বাক হারিয়ে ফেললো! বাবাকে মেরেছে সে? কিন্তু কখন? ইরা এসব কী বলছে? বাবাকে খুন করেছে মানে? বাবা কোথায়?  এসব নানান প্রশ্ন ঘুরছে ইয়াশ এর মাথায়। ইরাকে নিজের বুক থেকে ঠেলে ইরার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বললো, 
- এসব কী বলছিস ইরা? বাবাকে খুন করেছি মানে? বাবা কোথায়? 
ইরার প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো ইয়াশ। ইরা তখনো সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো। আয়াজ এতক্ষন ধরে গাড়ির ভেতর থেকে লক্ষ্য করছিলো ইরা আর ইয়াশ এর কান্ড। ছোটবাবা আর নেই এই কথাটা যেনো আয়াজ এর বুঁকে গিয়ে বিধলো।

চলবে..

পার্ট :০২
#এইতো_প্রণয় 
#আশমিন_পরিধি

Comments

    Please login to post comment. Login