ঢাকা শহর এখন আর আগের মতো নেই। ২০৪৫ সাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্ট ডিভাইস আর নিউরাল ইমপ্ল্যান্টের যুগে মানুষ এখন নিজের স্মৃতিও বদলাতে পারে। শহরের আকাশ ছুঁইছুঁই ভবনগুলোর মাঝে, এক পুরনো ভবনের নিচ তলার ছোট্ট ঘরে বসে কাজ করে রাফি—একজন স্মৃতি-প্রযুক্তিবিদ। তার কাজই হলো মানুষের ভুলে যাওয়া স্মৃতি ফিরিয়ে আনা।
একদিন হঠাৎ তার অফিসে ঢোকে এক অদ্ভুত মেয়েটি। পরনে ঘোমটা, চোখে কাঁচের মতো স্বচ্ছতা আর মুখে একরাশ অস্থিরতা। মেয়েটির নাম মায়া। সে বলে, “আমি আমার প্রেমিকের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছি। প্লিজ, আমাকে সাহায্য করুন।”
প্রথমে রাফি পাত্তা না দিলেও মায়ার চোখে লুকানো কষ্ট তাকে আকৃষ্ট করে। সে মায়ার ব্রেন স্ক্যান করে দেখে, সেখানে একটি মানুষের স্পষ্ট স্মৃতি আছে—চোখে, মুখে, স্পর্শে, কথায়। কিন্তু অবাক করার বিষয়, সরকারের কোনো ডেটাবেইসে এমন কোনো ব্যক্তির অস্তিত্বই নেই। যেন কেউ তাকে পুরো পৃথিবী থেকে মুছে ফেলেছে।
রাফির মধ্যে তখন কৌতূহল জাগে। সে খোঁজ করতে করতে জানতে পারে এক রহস্যময় গবেষণার কথা—Project Nirvana। ২০ বছর আগে এক গোপন গবেষণাগারে স্মৃতি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়েছিল। মানুষের মস্তিষ্ক থেকে স্মৃতি চুরি করে নতুন স্মৃতি বসিয়ে দেওয়া হতো। আর যারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই প্রথমে টার্গেট করা হয়।
রাফি বুঝতে পারে, মায়া শুধুই প্রেমিকা নন—তিনি নিজেও এই গবেষণার শিকার। তার প্রেমিক অরিন ছিল একজন হ্যাকার, যিনি Project Nirvana ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
মায়ার স্মৃতি যত ফিরে আসে, ততই তার মনে পড়ে—অরিন এক রাতে বলেছিল, "তোমার যদি স্মৃতি না থাকে, তাহলে আমি আর থাকব না। আমি শুধু তোমার স্মৃতিতে বাঁচতে চাই।"
রাফি ও মায়া একসাথে বেরিয়ে পড়ে অরিনকে খুঁজতে। পথে পথে বাধা আসে—রোবট পুলিশের ধাওয়া, ডেটা হান্টারদের আক্রমণ আর নিজের মস্তিষ্কেই ভেসে ওঠা ভাঙা স্মৃতির ঝলক। অবশেষে তারা পৌঁছে যায় সেই গবেষণাগারে, যেখানে সবকিছু শুরু হয়েছিল।
কিন্তু অরিন সেখানে নেই। সেখানে আছে তার শেষ রেকর্ড করা মেমোরি—একটি চিপে বন্দী ভালোবাসার গল্প, যেখানে সে মায়াকে বিদায় জানিয়েছিল।
অরিনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে হলে মায়াকে তার বর্তমান স্মৃতি মুছে ফেলতে হবে। সে চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়ে। রাফি তাকে থামাতে চায়, কিন্তু মায়া হাসে। বলে, “ভালোবাসা যদি স্মৃতিতে না থাকে, তবে সে ভালোবাসা নয়।”
স্মৃতি মোছা হয়। মায়া অচেনা এক রাস্তায় চোখ মেলে। সে কিছুই মনে করতে পারে না। পাশে দাঁড়িয়ে একজন ছেলে, চুপচাপ তাকিয়ে আছে—সে রাফি। সে জানে, সব হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার কাছে এখনো একটা স্মৃতি রয়ে গেছে—ভালোবাসার এক ফোঁটা অশ্রু।