শীতকাল ছিল। পাহাড়ি গ্রামের আকাশটা যেন সবসময় ধোঁয়াশায় ঢেকে থাকত। লোকেরা সূর্য দেখত না, শুধু ছায়া দেখত। আর ঠিক এই সময়েই, সাত বছর পর শহর থেকে ফিরে আসে লাম আলিফ।
গ্রামটা ছিল তার পূর্বপুরুষদের, কিন্তু আজ যেন একেবারে অপরিচিত। মাটির গন্ধটা পর্যন্ত অদ্ভুত ঠেকছিল। মানুষগুলো মুখ ঢেকে কথা বলে, ঘর থেকে সন্ধ্যার পর বের হয় না। আর সবাই এক নামে আতঙ্কিত—"ছায়ার দরজা"।
আলিফের দাদু, হাশেম আলী, ছিলেন এক সময়ের নামকরা কবি। কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগেই উনি পাগলের মতো লিখে গিয়েছিলেন একটা দিনলিপি—
"ছায়ারা ফিরে এসেছে। তারা আমার গল্প চুরি করেছে। আমি আয়নার ওপারে আটকে আছি। আমার নাতি… সে আসবে…"
দাদুর কথা শুনে কেউ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু আলিফ দেয়। কারণ ছোটবেলায় এক রাতে সে দেখেছিল—একটা মানুষ ছায়ার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। চোখের পলকে মিলিয়ে যায়, যেন কোনোদিন ছিলই না।
সেই স্মৃতি আর ডায়েরির কথা মিলিয়ে এক রাতের ভেতরে, পূর্ণিমার আলোয় সে পৌঁছায় দাদুর পুরনো বাড়িতে—যেখানে শেষবার "ছায়ার দরজা" খুলেছিল।
বাড়িটা এখন ধ্বংসস্তূপ। চারদিকে আগাছা, খড়কুটো। কিন্তু ঠিক মাঝখানে একটা দরজা দাঁড়িয়ে আছে—একটা দরজা, যার চারপাশে কিছুই নেই।
দরজাটার গায়ে লেখা:
"তুমি যদি সত্য চাও, তবে তুমি ভুল জায়গায় এসেছ। যদি নিজের ছায়া হারাতে চাও, তবে ঢুকো।"
আলিফ দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ ঘুরে যায়। হাওয়া থেমে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে—দরজা নেই। আলো নেই। শুধু একটা ফিসফিসানি—
"তুই আমাদের গল্প চুরি করতে চাস, তাই না, লাম আলিফ?"
তখনই সামনে ভেসে ওঠে দাদুর মুখ—কিন্তু সেটা মুখ নয়, একটা ছায়া, যার মুখ নেই, চোখ নেই, শুধু ভয়ানক এক আওয়াজ:
"তোর গল্প তো এখানেই শেষ নয়… বরং এখনই শুরু..."
চলবে…