গোবিন্দ মাষ্টার আয়নায় তাকিয়ে থমকে গেলেন। যে মুখটা সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেটা তাঁরই মতো, কিন্তু কিছু একটা অস্বাভাবিক। চোখে একটা ঠান্ডা শূন্যতা, আর ঠোঁটে এক অদ্ভুত বক্র হাসি—যা তাঁর কখনো ছিল না।
তিনি ধীরে ধীরে পিছিয়ে এলেন, কিন্তু আয়নার গোবিন্দ নড়ল না—সে তাকিয়েই রইল, সেই একই চোখ, একই কৌতুক মাখানো মুখভঙ্গি। হঠাৎ সে ঠোঁট নাড়াল—
“তুমি ফিরেছ, কিন্তু আমি থেকেই গেছি… এখন এই পৃথিবীটা কে কার?”
গোবিন্দ মাষ্টার চমকে পেছনে তাকালেন—সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু ঠিক নেই। দেয়ালে একটা ক্যালেন্ডার—সাল লেখা ২০২৫, কিন্তু তার নিচে মাসের নাম অচেনা ভাষায়, যেন সময় নিজের ভাষা পাল্টে ফেলেছে।
ডাকঘরের বাইরে বেরিয়ে এলেন। চারপাশের মানুষগুলো তাঁকে চিনছে, কিন্তু সবাই অদ্ভুতভাবে অদ্বৈত—যেন একই মুখ, শুধু বয়সের তফাৎ। দোকানদার, পথচারী, ছেলেমেয়েরা—সবার চেহারা একরকম। ভয়াবহ মিল।
তিনি ছুটে গেলেন নিজের বাড়িতে। দরজা খুলে ঢুকে পড়তেই আরেকটা চমক।
ভিতরে বসে আছেন অন্য গোবিন্দ। তাঁর মতো দেখতে, কিন্তু চোখে চশমা নেই, গলায় পুরোনো টাই। সে মাথা ঘুরিয়ে বলল—
“তুমি ফিরে এসেছ? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি চিরতরে ওদের সাথেই রয়ে গেলে। দেরি হয়ে গেছে গোবিন্দ… একবার আয়নার দুনিয়ায় গেলে, ফিরে এলেও নিজের ছায়া সঙ্গে আনো…”
গোবিন্দ মাষ্টার টের পেলেন—সে এই বাস্তবের প্রতিস্থাপন নয়, বরং একটা অনুপ্রবেশকারী ছায়া। ছায়া তাকে ব্যবহার করে বাস্তবে ফিরে এসেছে।
আর তখনই দেয়ালের ঘড়ি থেমে গেল।
বাতাস ভারি হয়ে এলো। অন্য গোবিন্দ উঠে দাঁড়াল। বলল—
“এখন দু’জনেই আছি। কিন্তু একটাই শরীর থাকবে। বেছে নাও, তুমি থাকবে, না আমি?”
আর ঠিক তখনই ঘরের এক কোণ থেকে আগের সেই ছায়ামূর্তির গলা ভেসে এল—
“সময় কখনো কাউকে ছেড়ে দেয় না, শুধু বদলে নেয়। খেলা শুরু হলো...”
চলবে…
পরের পর্বে কী হবে? কে আসল গোবিন্দ? সময় কি সত্যিই বদলে দিয়েছে তাঁকে? নাকি সবকিছুই ছিল এক ছায়ার খেলা?