Posts

উপন্যাস

ভাগ্যাকাশের ধ্রুব তারা

April 15, 2025

Nusrat Jahan Mou

Original Author জাহান( Jahan)

116
View

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইকতিদার ঐশানিকে বললো, 
"ওখানে না ঘুমিয়ে বিছানায় ঘুমাও।
রাতে বার বার ওঠানামার চেয়ে কোনো সমস্যা হলে আমি সাহায্য করতে পারবো।"

"বিয়ের পর স্ত্রীকে পূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি।এক রাত সেবা করে ঢং করা হচ্ছে।তোমার এমন সাহায্য আমার চাই না।আমি একাই একশো, ঢংয়ে বাঁচি না।মনে হয় আমার আর প্রাণ নেই আমি আস্ত একটা চালের বস্তা।
তোর ফুটানি তোর কাছে রাখ।এক ঘরে থাকি কিন্তু আমার ফাঁটা কপাল, দুর্দশাগ্রস্ত  ভবিষ্যতে কী হবে জানি না!
আল্লাহ তুমি আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও।
স্কলারশিপটা পেয়ে গেলে আমি বাঁচি। দরকার হলে আমি তোকে তালাক দিয়ে - ইংরেজ লাঠ সাহেবকে বিয়ে করবো, সে হয়তো আমাকে ভালোবাসবে, বুঝবে অসুন্দর ভাববে না, আমার মনের খবর রাখবে- বন্ধু হবে- ভরসা হবে।(মনে মনে)"
"না,ইয়ে মানে আমার কিছু কাজ আছে সেগুলো গুছাতে হবে আর সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি পাঠাতে হবে তো। তাই একটু কাজ করতে হবে।"

কিছুক্ষণ চুপ করে ইকতিদার বললো,অহ! ঠিক আছে! মাঝখানের দরজা লাগানোর প্রয়োজন নেই।
" হু" (মাথা নাড়িয়ে ঐশানি)
★★★
প্রচন্ড গরম পরেছে, খুবই গরম রাত হলে যেন এক অসম্ভব অবস্থা তৈরি হয়। ঐশানি এসি চালায় না বরং স্ট্যাডি রুমে ফ্যান ব্যবহার করে। স্টাডি রুমের দরজা লাগিয়ে কাজ করছিলো।
ঐশানির এমন ভাব ভঙ্গিমায় ইকতিদারের আত্মসম্মানে লাগে।
ঐশানির শরীরটা তেমন ভালো নেই তার উপর কয়েক দিনের পিরিয়ড তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে।
গতকালকের আগের রাতে তো ইকতিদার সাহায্য না করলে অবস্থা বেগতিক হতো।
ঐশানি প্রোজেক্টের কাজ করছিলো অনেক চাপে আছে তাছাড়া পড়াশোনা স্কলারশিপ  নিয়েও চিন্তায় আছে।
ক্লাইন্টের সাথে জরুরি আলোচনার বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করে রাত প্রায় একটার  দিকে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে স্টাডিরুমের বিশেষ দরজাটা একটুখানি খোলা রেখে ঘুমাতে গেলো।
বিয়ের যদিও  দুই আড়াই মাস হলো কিন্তু  তারা এখনো একে অপরকে আপন করে নিতে পারে নি।যদিও ইকতিদারের প্রথম দিনের আচরণ নিন্দনীয়। ঐশানির ও বেশ আত্মসম্মানবোধ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইকতিদারের ভাবভঙ্গি ঐশানি অনুভব করতে পারে না।বিয়ে যেহেতু ভাগ্যের ব্যাপার কাজেই আল্লার তরফ থেকে মনে হয় মাঝে মাঝে রহমত বর্ষণ হয়।
প্রচন্ড গরমের জন্য ঐশানি সুতি হাফ হাতা থ্রিপিস পড়েছে। বেশ ক্লান্ত থাকায় ঐশানি ঘুমিয়ে পড়ে।

"যাই হোক আলহামদুলিল্লাহ। 
কালকে ভালোয় ভালোয় কাজ করে নিতে পারলে বাঁচি।"

রাত দেড়টার দিকে ঐশানির ফোনে কল আসে।
ইকতিদার রুমে আর ঐশানি স্টাডিরুমে শুয়েছে তাও আবার দরজা খোলা কাজেই প্রচন্ড শব্দে রিং  হচ্ছে।
প্রচন্ড ঘুমের মধ্যে বিরক্ত হলো, সারাদিন কাজ করেছে তারপর এতো রাতে কল।
কিছু জরুরি কিনা - তাই ধড়ফড় করে উঠে বসলো।
"এতো রাতে কে আবার কল করলো, রাতে কল  কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।" 
"এতো দেখি বিদেশি নম্বর"
----------- "হ্যালো - হ্যালো - কে?"

"হ্যালো মিস ঐশানি!আমি জেকব ক্লিনটন বলছি।
আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পেরে ভালো লাগছে।
আশা করি আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন।"

"হ্যাঁ, বলুন চিনতে পেরেছি।"

" এখন তো লন্ডনে দিন তাই বাংলাদেশ সম্ভবতো রাত - আমি অসময়ে কল করে ফেললাম।,সরি!
আসলে আমি আপনাকে মেইল করতে চাচ্ছিলাম তবে বিষয়টি অতি গুরুতর, আমার মানসিক অসুস্থতার কারণ! তাই আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না আপনাকে কল করলাম ভালো - মন্দ ক্ষমা করবেন।"
★★★
ঐশানি আস্তে করে বেলকনিতে চলে গেলো, কথা বললে হয়তো ইকতিদার উঠি যাবে কিংবা অন্যকিছু মনে করবে- 
ভেবে।
"হ্যাঁ বলুন।"

" সত্যিকার অর্থে আপনার প্রেজেন্টেশন চমৎকার।
আপনি সত্যিই একজন গুণী নারী।
আমি অভিভুত।"

"বুঝতে পেরেছি,আপনি কি ব্যবসায়িক কিছু নিয়ে কথা বলবেন।"
"আসলে এমন নয় , তবে এটি ব্যক্তিগত।
সত্যিকার অর্থে মি. চৌধুরির অফিসে গত কয়েক সপ্তাহ কাজ করে, আপনার প্রতি আমি পাগল হয়ে গেছি,আমি আপনার প্রতি দুর্বল।"

"আপনি এসব কী বলছেন, চুপ করুন।"
"সত্যিকার অর্থে আপনার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য আর কথা বলার ধরণ আমাকে আপনার প্রতি দুর্বল করে তুলেছে।"
"চুপ, চুপ করুন আপনি।"
"আমাকে তুমি থামিও না, আমি অসহায়।"

"আপনি যে মি.চৌধুরির অফিসে এসেছিলেন তিনি আমার শশুড় আমি কোনো কর্মচারী নই।"
"আমি...... আমি তা বিশ্বাস করি না, আমি আমি তা বিশ্বাস করি না - তুমি মিথ্যুক।"
" দয়া করে এসব বিষয়ের জন্য আমাকে কল দিবেন না এখন অনেক রাত, আমার স্বামী সংসার আছে।"
"তোমার বিয়ে হলেও আমার কিছু যায় আসে না।আমি তোমাকে লন্ডন নিয়ে আসবো।
তুমি ভাবো - তোমারই ভালো হবে।"
"তুমি জানো আমার স্বামী কে?
তোমার এত সাহস!  ওহ! অসহ্যকর।
আমার  স্বামী যদি জানে তাহলে তোমার কী হবে জানো।"
"তোমার স্বামী যদি এতো কিছু হয় তাহলে তুমি তোমার শশুড়ের অফিসে কাজ করো কেন - মিথ্যাবাদী।
আর এত রাতে তোমার স্বামী কি এসব জানে না যে তুমি আমার সাথে কথা বলছো।"

"তুমি যা করলে তোমাকে আমি দেখে নেব।"
"বেবি তুমি মিথ্যা বলো না,আমার অফারের ব্যাপারে ভেবে আমাকে জানিও। তোমাকে আমি নিরাশ করবো না!"

স্টুপিড!
বলে ফোন কেটে দেয় ঐশানি।
★★★
পেছনে ফিরতে দেখে ডিম লাইটের আলোয় ইকতিদারের মুখচ্ছবি দানবীয় আকার ধারণ করেছে।
একই তো গরমে জীবন অতিষ্ঠ মনে হচ্ছে মাত্রই শহরের লোকজন ঘুমের দেশে বিশ্রামে পাড়ি জমিয়েছে।
গরমের কারণে সুতি সালোয়ার কামিজ বিশেষ করে গরমের জন্য একটু  খোলামেলা করেই বানিয়েছে।তবে অন্যসময় অর্ণার আড়ালে থাকে তাই কারোর নজরে পড়ে না।
পেছন থেকে ঐশানির উন্মুক্ত পিঠ আর আকর্ষণীয় দেহ।- ইকতিদারকে মাতাল করে  দিচ্ছিলো এবং এত রাতে নিয়ম করে কারোর সাথে কথা বলা ইকতিদারকে বেশ চটিয়েছে।
---------চোয়াল শক্ত করে শোয়ার ঘর ও স্টাডি রুমিের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইলো।
ঐশানি কী জবাব দেবে খুঁজে পাচ্ছিলো না! মাথা নিচু করে সোফার কাছে এসে অর্ণা গায়ে জড়িয়ে বললো।
"""ঐ আরকি একজন ক্লাইন্ট ফোন করেছিলো, লন্ডন থেকে ওদের ওখানে এখন দিন!""""

""চোয়াল শক্ত করে ইকতিদার বললো আমি সব শুনেছি তা কতদিন ধরে ক্লায়েন্ট ধরা।
ইদানিং দেখছি কলে নিয়ম করে কথা হয়। তা ভিডিও কলে ও মনে হয় প্রায়শই কথা হয়।
কি জানি আমি তো আবার নিজের কাজে ব্যস্ত থাকি।
না পেলে সম্মান আর না পেলে স্বীকৃতি তোমার মতো মেয়ের কাছে আমি কী আশা করতে পারি।
জীবন - যৌবন বৃথা যাচ্ছে খদ্দের ধরতে হবে নাকি!
আমার বাবার অফিসে, আমার বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে চাকুরি নিয়ে চাকরানি খেটে যদি পয়সায় না হয় পরিবার চালাতে না পারিস.....""
""ঐশানির চোখে লজ্জায় পানি চলে আসে, চুপ  করুন!""
বলার আগেই ইকতিদার ঐশানির গলায় হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে 
""চুপ! একদম চুপ!
আমাকে বলতি আমি ব্যবহার ছাড়াই পয়সা দিতাম।""
বলে দেয়ালে ঠেসে ধরলে - 
ঐশানি দুহাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে
উল্টো দুই হতা পেছনে ধরে মুখটা উল্টো করে চেপে ধরে বললো।
***নাগরদের সাথে কয় দিনের আলাপ***
ঐশানি বলার চেষ্টা করলো - 
***আ...আমাকে ছাড়ুন!  আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা!***

তুই আজকে উত্তর না দিলে তোর অবস্থা.....তোকে আমি খুন করে ফেলবো।
ঐশানি কিছুটা ছাড়া পেয়ে বলতে যাবে, তার মধ্যেই ইকতিদার ঐশানি কে টেনে শুয়ার কক্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। তার উপর ঐশানি শ্বাস নিতে পারছিলো না।
***শুনুন.....আমাকে ছাড়ুন। আমার পুরো কথাটা তো শুনুন।***
ইকতিদার কিছুই  শুনতে চায়নি।
টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ায় স্টাডি রুমের দরজায় পা লেগে ব্যথা পায় ঐশানি।
**আহ! আহ! ছাড়ুন!  ছাড়ুন বলছি!**
ইকতিদার টেনে এনে বিছানার এককোণায় ফেলে দিলে ঐশানি পেটে বেশ ব্যথা পায়।
মনে হচ্ছে ইকতিদার আজন্ম ক্ষোভ আজকে ঢালবে।
ঐশানির কামিজে খামছে ধরলে কামিজের একাংশ ইকতিদারের হাতে চলে আসলে,
ঐশানি লজ্জায় হাত দিয়ে  লজ্জা নিবারণ করতে চেষ্টা করলে!  
ইকতিদার রেগে বলে উঠে নাটক কম কর জানোয়ার!
ঐশানি শরীরের ব্যথা ও লজ্জায় কেঁদে উঠলেও নিস্তার পায় নি,শরীরটা অবস হয়ে এসেছে।
ইকতিদার কিছু একটা ভেবে স্টাডি  রুমে যাচ্ছিলো ----
ঐশানির পেটের ব্যথা বেড়ে গিয়ে ব্লিডিং শুরু হলো--
****আহ! আহ!  
কীভাবে বুঝাই!****
ইকতিদার ঝটপট এসে ফোন এনে বললো,"" পাসওয়ার্ড দে জানোয়ার !"""
ব্যথা আর ব্লিডিংয়ে মুখ কালচে হয়ে গেলো
শুধু পেট চেপে হাসপাস করছে।
ইকতিদার জোর করে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে - 
""জানোয়ার! জানোয়ারের বাচ্চা।
আমার বাবা - মা তোকে পছন্দ করেছে আজ তোর যারিজুড়ি সব বের করবো।"""
ফোন চেক করা শুরু করলো মেসেজ, মেইল, কল লিস্ট সাথে কল রেকর্ড ও শুনা শুরু করলো.....
তার মধ্যেই মেঝেতে ঠাস করে পরে গেল, অনেকটা নিঃশব্দ হয়ে গেল ঐশানি।
সব কিছু চেক করে প্রায় আধ ঘন্টা পর মেঝেতে খেয়াল করলো ঐশানি মেঝেতে পরে আছে।
তখন কিছুটা  মেজাজ ঠান্ডা হলো..... হুশ ফিরে আসলো।
বাতি জ্বালিয়ে দেখলো মেঝেতে ঐশনারি নিথর দেহ।
বিছানা আর মেঝেতে ছোপ ছোপ দাগ।কামিজের অনেকটা অংশ ছিঁড়ে গিয়ে বক্ষ অনেকটাই উন্মুক্ত।
দেখে মনে হচ্ছে হয় বিধ্বস্ত না হয় জ্ঞান হারিয়েছে মুখশ্রী কালো হয়ে ঘাম জমেছে, তাছাড়া শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।
তাই তাড়াতাড়ি কাছে এসে ডাকতে শুরু করলো,
**ঐশানি!ইশানি!**
কথা বলছে না দেখে মুখে পানির ঝামটা দিলেও কথা বলছে না দেখে নিজের কোলে ঐশানিকে জড়িয়ে ডাকতে শুরু করলো।
***ঐশানি! এই ঐশানি! 
শুনতে পাচ্ছো, আমার কথা শুনতে পাচ্ছো
সাড়া দাও!***
ঐশানির সাড়া  না  পেয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে  আবারো পানির ঝামটা দেওয়া শুরু করলো।
# চলবে
# ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা
#Jahan (fb) পেইজ

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Nusrat Jahan Mou 7 months ago

    #Jahan# জাহানের গল্প - উপন্যাস- কবিতা সমগ্র

  • Nusrat Jahan Mou 7 months ago

    লাইক ও কমেন্ট করুন # Jahan

  • Nusrat Jahan Mou 7 months ago

    সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আপনাদের মতামত জানাবেন, আপনাদের সমর্থন পেলে আরো লিখবো