১.
বাবলুর স্টল, বিকেল চারটার পরপর
চায়ের কাপ ঠোঁটে ঠেকে না,
তবু কাঁচের গায়ে গন্ধ আসে—
তুমি যেদিন স্টল ফেলে চলে গেলে,
শহরের একপাশ ফাঁকা হয়ে গ্যালো
যেভাবে শরীর ফাঁকা হয়
দীর্ঘ ওষ্ঠচুম্বনের পর।
২.
আলুপট্টি, বিকেল ৫:১৬
ড্রেনের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলো আলো,
ভেতরে হঠাৎ মনে হ’লো—
তুমি হেঁটে যাচ্ছো,
পায়ের ছাপ রেখে যাচ্ছো
ভেজা ম্যানহোলে।
৩.
অলকা, দুপুর ১:৩৩
জুতা পালিশের পাশে
তোমার ছায়া বসে আছে—
বলে, “তোমার মুখে আজকাল কাব্য নেই।”
আমি মাথা নিচু করে বলি,
“আজকাল কবিতাও ময়লা খায়।”
৪.
সোনাদীঘির মোড়, সোয়া ছয়টা
তুমি একদিন ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ কিনেছিলে,
তাতে এখনো পাতা উল্টালে
আমার বুক কেঁপে ওঠে—
যেন ধারে-ধারে জমে থাকা ব্যথার জল
তোমার না-থাকার রোদে শুকিয়ে যায়।
৫.
বাবলুর স্টল, সাড়ে সাতটা
তোমার স্পর্শ ছাড়াই গরম কাপ ধরা যেত না—
এখন ধরছি,
পুড়ে যাই না,
কেবল মনে হয়
তুমি আর গরম দাও না আমার কোনো কিছুতে।
৬.
টিএসসি, একা চায়ের পাশে
তোমার জিহ্বার মতো তীক্ষ্ণ কিছু উষ্ণতা
আজও রয়ে গেছে চায়ের —
আমি চুমুক দিই না,
শুধু ঠোঁট ছোঁয়াই কাপের কিনারায়—
মনে হয় শেষবার কামড়ে ধরি
তোমার চলে যাওয়া বিকেল।
৭.
রেলগেট, রাত নয়টা
তোমার শরীর ছিলো নর্দমার মতোই—
ধোঁয়াচ্ছন্ন, নিষিদ্ধ।
আমি ছুঁয়ে দেখিনি তখনও,
তবু জানতাম, সেখানে বয়ে যায়
একটা গোপন উষ্ণতা,
যা শহরের সব রাস্তাকে গর্ভবতী করে ফ্যালে।
৮.
মেলোডি, সায়েন্স ল্যাব, সাড়ে নয়টা (রাত)
তোমার চুলে যে গন্ধ ছিলো,
সেটা আমি একদিন খুঁজেছিলাম ক্যাসেটের বাক্সে।
সন্ধ্যায়, সব কিছুর শেষে—
আমি ভাবতাম গান মানে ছোঁয়া নয়,
আসলে, ওটা একটা নরম আত্মদাহ।
যেমন তুমি গলে পড়ো আমার জিহ্বার নিচে।
৯.
নিউমার্কেট, সন্ধ্যা ৬:১৪
বইয়ের দোকানের কোণে
তোমার স্পর্শ ভুলে থাকা একটা জলচিহ্ন,
বাইরে হর্ণ—
ভেতরে বুকের ভেতর
কোনো শব্দ নেই,
সব শব্দই বাজে তোমার নামে।
১০.
নদীর ধার, সন্ধ্যা ৬টা
আলো পড়ে কাঁচে,
কাঁচ পড়ে চোখে,
তুমি চোখে পড়ো না—
পাড়ে পাড়ে ভেঙে পড়ে শব্দ,
তোমার নামে থাকা ঢেউয়ের মতো।
১১.
বিখ্যাত ফ্লাইওভার, বিকাল পাঁচটা
তুমি আসো না,
তবু আমি স্পিডব্রেকারে থেমে থাকি—
ভেবে নিই,
এই যে কাঁপুনি বুকজুড়ে—
তুমি নিশ্চয়ই পেছনে নিঃশ্বাস ফেলছিলে।
১২.
বর্ণালীর জেব্রা-ক্রসিং, সময় অজ্ঞাত
তুমি বলেছিলে,
“কালো-সাদা রেখাতেও প্রেম হয়,”
আজ দেখি,
আঁকা মুখে রং নেই, চোখে জল—
তুমি যা-সব শেখাতে চেয়েছো,
আজকাল তা-ই আমাকে ছিঁড়ে ফেলে।
১৩.
টুকিটাকি, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা
একটা লোক গিটার বাজায়,
সুর চেনা, গলাটা না—
হঠাৎ মনে হয়,
তুমি কীভাবে বাজাতে—
শরীরের সেই তার,
যেখানে চুমু না, শব্দ লাগতো।
১৪.
নিউ মার্কেটের পেছনের গলি, দুপুরের রোদ
আমার হাতে বাঁধা লাল চুড়ির মতো
একটা ছিন্ন ধ্বনি ঝুলে ছিলো বৈদ্যুতিক তারে।
আমি তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ—
কামনার পাঁকে ঢুকে যাওয়া এক ইলেকট্রিক কামড়,
শহরের প্রতিটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে,
তোমাকে ছাড়াও।
১৫.
বর্ণালীর ট্রাফিক জ্যাম, বিকেল
তুমি এলে না,
আমি রিকশার সিটে বসে
শরীরকে চাপি বারবার—
আলো এসে পড়ে
জঙ্ঘার কাছে।
তুমি ছিলে কি?
আমার ভিতরের শহরটায়
একটা নির্বাসিত বাঁক।
১৬.
রেলগেট ফুলের দোকান, সন্ধ্যা ছুঁয়ে
ফুল কিনে তুমি বলছিলে—
‘সব গন্ধই প্রেম না।’
আমি তখন বুঝে ফেলি,
তোমার গন্ধটা আসলে কাম,
শীতের রাতে গায়ে জড়িয়ে-থাকা চাদরের মতো,
খুললেই শরীর জেগে ওঠে বইয়ের পাতার নিচে।
১৭.
দোতলা রেস্তোরাঁর সিঁড়ি, দুপুর দুইটা
আমি নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম,
তুমি উঠে গেলে ওপর দিয়ে—
পায়ের শব্দ ছড়িয়ে পড়ছিলো আমার বুকজুড়ে।
তারপর জানলাম,
ভালোবাসা নিচে দাঁড়ায়,
আর প্রণয় হাঁটে তার শরীরের ওপর দিয়ে।