পেরুর লেখক এবং নোবেল বিজয়ী মারিও ভার্গাস ইয়োসা, ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রোববার (১৩ এপ্রিল) রাজধানী লিমায় নিজ বাড়িতে ৮৯ বছর বয়সে মারা যান তিনি। প্রয়াত এই লেখক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমালোচকও ছিলেন।
ইয়োসা প্রথমদিকে বামপন্থার দিকে ঝুঁকেছিলেন, তবে কিউবান বিপ্লবের প্রতি তার মোহভঙ্গ ঘটে। পরবর্তীতে তিনি মুক্তবাজার উদারনীতি গ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু আলবার্তো ফুজিমোরির কাছে হেরে যান। এরপরে তিনি স্প্যানিশ নাগরিকত্ব অর্জন করেন এবং এল পাইস পত্রিকার জন্য প্রচুর লেখালেখি করেন। সে সময় প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়গুলো নিয়েও কলাম লিখেছেন।
নোবেলজয়ী এই লেখক হাভানা, কারাকাস থেকে তেল আবিব পর্যন্ত কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্পষ্ট সমালোচনার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের তীব্র বিরোধী ছিলেন।
অবশ্য তিনি ১৯৯৫ সালে ইসরায়েলের মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার জেরুজালেম প্রাইজ পেয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। দখলকে একটি ঔপনিবেশিক প্রকল্প হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
২০০৫ সালে ‘ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন: পিস অর হলি ওয়ার’ নামে একটি বই লেখেন ইয়োসা। বইটিতে তিনি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা করেন এবং স্পষ্ট ভাষায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার বর্ণনা দেন।
জেরুজালেমের পুরাতন শহর পরিদর্শনের পর ইয়োসা লিখেছিলেন, ‘পুরাতন শহরটি এখনও একটি ভৌতিক জগৎ, আত্মাহীন, শূন্য, যেখানে মানুষের চেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটি একটি গভীর বেদনাদায়ক দৃশ্য এবং আমার মনে হয়, দখলদারিত্বের অর্থ কী - মানুষের দুর্ভোগের প্রতীক।’
উল্লেখ্য, মারিও ভার্গাস ইয়োসা ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। তিনি এল বুম নামে পরিচিত লাতিন আমেরিকার সাহিত্য আন্দোলনের শেষ জীবিত সদস্য ছিলেন। এই সাহিত্য আন্দোলনের কারণে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ এর দশকে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, কার্লোস ফুয়েন্তেস, জুলিও কর্তাজার এবং আরও অনেক তরুণ লাতিন আমেরিকান উপন্যাসিক ইউরোপ ও সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
সূত্র: দ্য নিউ আরব