Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব-৩৬)

April 16, 2025

Boros Marika

81
View

আমান একটু চুপ থেকে মুখ নিচু করে বললো,
“দাদি, আপনি যা করার তা তো করেই ফেলেছেন…
এখন আর আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না।”
তার গলার স্বর ভারি, কিন্তু ঠাণ্ডা।
চোখ দুটো কিছু একটা চেপে রাখার চেষ্টা করছে।

দাদি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু থেমে গেলেন।
তিনি জানেন, আমান মুখে যতই বলুক—তৃষাকে প্রথম দেখাতেই ছেলেটা হারিয়ে গেছে।
তৃষার চোখে যেটা কেউ দেখেনি, সেটা দেখেছে আমান।
তার নিস্তব্ধতা, তার শক্ত হয়ে বসে থাকা, তার হৃদয়ের বিষাদ—সবটা ছুঁয়ে গেছে আমানের মনের খুব গভীরে।

দাদি মন খারাপ করে মুখ সরিয়ে নিলেন।
“আমি তো কিছু চাইনি রে… কেবল তোকে সুখে দেখতে চেয়েছিলাম,”
—বুড়ো গলায় নিঃশব্দে বললেন দাদি।
তার চোখের কোণেও চিকচিক করে উঠলো জল।

তখনই তৃষা একবার তাকালো আমানের দিকে।
দৃষ্টি সামান্য কাঁপছিল,
কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই।

দূর থেকে সবার ফিসফাস চলছেই—আরিয়ান আর আসবে না কি?
সময় যেন এক অচেনা অন্ধকারে ঢুকে পড়েছে।
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে সন্ধ্যা পার করে ফেললো।

ঘড়িতে এখন রাত ১০টা।

সবার দৃষ্টি দরজার দিকে।
হলঘরটা এখন যেন নিঃশব্দে কাঁদছে।
আমান আসেনি…
আর আরিয়ান?
তার খোঁজ নেই। ফোন বন্ধ, কোনো বার্তা নেই।

তৃষা নিঃশব্দ।
সে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।
সব শব্দ এখন ঘোলাটে তার কানে।
সে শুধু একটা কথা ভাবছে—
"তবে কি আমায় ফেলে রেখে চলে গেল সে?"

বিয়ের আসর এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে।
অতিথিরা একে একে উঠে যেতে চাইছে।
কারও মুখে খুশির ছায়া নেই—
শুধু প্রশ্ন, হতাশা আর ধোঁয়াটে কানাঘুষা।

তৃষার বাবা মাথা নিচু করে বসে আছেন।
আর তৃষা—সে যেন কাঁদতেও ভুলে গেছে।
সে শুধু বসে আছে, চোখে শূন্যতা আর হৃদয়ে একটা চাপা বিস্ফোরণ।

এই সময়…
আমান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো।
সবার দৃষ্টি তার দিকে ঘুরে গেলো।
ঠিক তখনই রাত ১০টা বেজে গেলো।

ঘড়ির কাঁটার শব্দ যেন সবার হৃদয়ের ভেতরে গিয়ে বিঁধছিল…
একটা একট করে মুহূর্ত গড়িয়ে যাচ্ছে,
কিন্তু আরিয়ান আসছে না।

তৃষার চারপাশে যেন সময় থেমে গেছে—সবাই তাকিয়ে আছে দরজার দিকে, আশায়… ভয়েও।

তৃষা চুপ।
তার মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। চোখেও নেই কোনো জল।

কেউ কেউ ফিসফিস করে বলছে,
“ছেলেটা তো পালিয়ে গেলো না তো?”
“এই জন্যই মেয়েদের বেশি ছেলেদের সাথে মিশতে দেওয়া উচিত না…”

তৃষার বাবা-মা মাথা নিচু করে বসে আছেন, আর তৃষা—নির্বাক।

দাদি হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“এই মেয়েকে আমি আমার ঘরের বউ করতে চাই।
আরিয়ান যদি না আসে, আমি চাই আমার আমান এই মেয়েকে বিয়ে করুক।”

সবার চোখ বড় হয়ে গেলো।
তৃষা একবার মুখ তুলল,
আমানের চোখে চেয়ে দেখল—কিছু বোঝা যায় না, শুধু একটা নিশ্চিন্ততা আছে।

আমান তৃষার চাহনি দেখে কিছু বলতে পারলো না।
তার চোখে কোনো প্রশ্ন ছিল না, ছিল শুধু একরাশ অনুভব, যেটা শব্দে বোঝানো যায় না।
তারপর একটু চুপ থেকে ধীরে ধীরে বললো—

“দাদি, আমি আপনার কথা রাখতে প্রস্তুত।
আপনি বলেছেন, সেই কথার মান আমি রাখবো।
তৃষাকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

সবাই চমকে তাকিয়ে রইল আমানের দিকে।
তার কণ্ঠে কোনো অহংকার ছিল না—ছিল এক গভীর সম্মান, এক মেয়েকে সম্মান করার সত্যিকারের মানসিকতা।

কিন্তু এরপরই আমান বললো—
“কিন্তু তৃষা কি চায়, সেটাও জানা দরকার।
একটা মেয়ের অনুমতি ছাড়া এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না।
এই সিদ্ধান্ত কেবল একতরফা হতে পারে না…
তাই আমি বলছি—
আরো দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করি।
রাত বারোটা পর্যন্ত দেখি, আরিয়ান আসে কিনা।
যদি না আসে, তখন আমরা সামনে এগোবো,
কিন্তু এখন… শুধু একটু সময়।”

ঘর জুড়ে একদম নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
তৃষা এবার মুখ তুলে তাকালো…
তার চোখে যেন এক অদ্ভুত দৃষ্টি—কষ্ট, অভিমান, তবুও কোথাও যেন আমানের প্রতি একটা শ্রদ্ধা জন্ম নিচ্ছে।

ঘড়ির কাঁটা তখন ১০টা ১৫ বাজিয়ে দিচ্ছে।
সময় ধীরে ধীরে গড়িয়ে যাচ্ছে…
আর একেকটা মুহূর্ত যেন তৃষার ভাগ্যকে নিয়ে খেলছে।


চলবে...

Comments

    Please login to post comment. Login