৩,০০০ বছর আগে, পৃথিবী ছিল এক ভিন্নরকমের স্থান। তখনকার মানব সভ্যতা, প্রকৃতি, এবং জলবায়ু আজকের তুলনায় অনেক আলাদা ছিল। এই সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের কাছাকাছি, যা ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে এবং লৌহ যুগের শুরুতে পড়েছে।
১. সভ্যতার বিকাশ
৩,০০০ বছর আগে বিভিন্ন উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল:
মিশরীয় সভ্যতা:
এই সময় মিশরে নবীন রাজ্যের (New Kingdom) শাসন চলছিল। ফেরাউন রামেসিস II-এর মতো শাসকেরা বিশাল পিরামিড ও মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
মেসোপটেমিয়া:
ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয় সাম্রাজ্যের বিকাশ ঘটে, এবং আইন-কানুন, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতি হয়।
ভারতীয় সভ্যতা:
বৈদিক যুগ চলছিল, যা পরবর্তীতে হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃত ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চীনের ঝো রাজবংশ:
কনফুসিয়াসের দর্শন ও চীনের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভিত্তি এই সময়েই তৈরি হয়।
গ্রিস ও রোম: প্রাচীন গ্রিসে হোমারের ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’ লেখা হয়েছিল, যা ইউরোপীয় সাহিত্যের ভিত্তি গড়ে তোলে।
২. পরিবেশ ও জলবায়ু
এই সময় পৃথিবীর জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ ছিল। তবে কিছু অঞ্চল ছিল শুষ্ক, আবার কিছু এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হতো। পৃথিবীর বিশাল বনভূমিগুলো তখনও অক্ষত ছিল, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় (যেমন: মায়া সভ্যতার কিছু অংশ)।
৩. মানুষের জীবনযাত্রা
খাদ্য: কৃষি নির্ভর ছিল বেশিরভাগ সভ্যতা। গম, চাল, যব, শাক-সবজি এবং পশুপালন ছিল খাদ্যের মূল উৎস।
বসবাস: সাধারণ মানুষ কাঁচা বা ইটের তৈরি ঘরে বসবাস করত। বড় শহরগুলোর সুরক্ষা দেওয়ালে ঘেরা থাকত।
যাতায়াত ও বাণিজ্য: গরুর গাড়ি, ঘোড়া ও নৌকা ছিল প্রধান যানবাহন। রেশম পথ ও সামুদ্রিক বাণিজ্য পথগুলো তৈরি হতে শুরু করেছিল।
ধর্ম ও সংস্কৃতি: দেবদেবীর পূজা, আত্মার অমরত্বের বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল সভ্যতাগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য।
৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ধাতব ব্যবহার: ব্রোঞ্জ ও লৌহ অস্ত্র এবং কৃষি সরঞ্জামের উন্নতি হয়েছিল।
লিপি ও শিক্ষা: হায়ারোগ্লিফ, কিউনিফর্ম এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা গ্রন্থ ছিল প্রচলিত।
গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান: ব্যাবিলনীয়রা গণিতের ভিত্তি তৈরি করেছিল, এবং মিশরীয়রা পিরামিড গঠনের জন্য জ্যামিতির ব্যবহার করেছিল।
উপসংহার
৩,০০০ বছর আগের পৃথিবী আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও, মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতার ফলে সভ্যতার অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছিল। আজকের বিশ্ব যে স্থিতিশীলতা ও উন্নতির পথে এগিয়েছে, তার ভিত্তি গড়ে উঠেছিল তখনকার সমাজ ও সভ্যতার হাত ধরে।