Posts

সমালোচনা

মাননীয় মানুষদের উদ্দেশ্যে লেখক ওয়ালিদ প্রত্যয় কী বলতে চেয়েছেন? (পাঠ পর্যালোচনা ০১)

April 17, 2025

দীপক কর্মকার

137
View

‘মাননীয় মানুষেরা’ লেখক ওয়ালিদ প্রত্যয়-এর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ। পুরো বই পড়ে এইটাকে একটা এক্সপেরিমেন্টাল বই বলা যেতে পারে, কিন্তু সবটাই এক্সপেরিমেন্ট না। আমি যতদূর ওয়ালিদের লেখা পড়েছি, তাতে বুঝেছি ওয়ালিদ এইরকমই লেখেন। লেখালিখির একদম শুরুর দিক থেকে খুব সচেতনভাবে তিনি চেষ্টা করেছেন সমকালীন বা বাংলা সাহিত্যের যাঁরা ক্লাসিকের তকমা পেয়েছেন কিংবা ইলিয়াস বা শহীদুল জহির যেমন লিখতেন, সেসব পাশ কাটিয়ে একটি নিজস্ব ধারা সৃষ্টি করতে। এবং আমার মনে হয়েছে এই গ্রন্থটিতে নিজস্ব সেই ধরন তৈরিতে এবং তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন। আগের বইগুলোর তুলনায় লেখকের লেখা যথেষ্ট সাবলীল ও পরিশীলিত মনে হয়েছে।

ছয় ফর্মার ‘মাননীয় মানুষেরা’ গ্রন্থে গল্প আছে নয়টি। নয়টি গল্পের রাঁধুনি একজন হলেও, স্বাদ ভিন্ন। গল্পগ্রন্থের সমালোচনা করা একটু জটিল, বলতে গেলে সব গল্প নিয়েই কিছু না কিছু বলতে হয়। বিশেষত ‘মাননীয় মানুষেরা’ পড়ে আমার মনে হলো বইটা নিয়ে একটু বিস্তর আলোচনা করা যেতেই পারে। হ্যাঁ, আলোচনাই বটে, কারণ যে বই পড়ে ভালো লেগে যায়, তার ব্যাপারে বেশি একটা সমালোচনা করা যায় না, বরং ভালো লাগার প্রকাশটাই সেখানে মুখ্য হয়ে যায়। সেই ভালো লাগার কথাই শোনা যাক—

প্রথম গল্পের নাম ‘মহলের অন্দরে’। এই গল্পের দুটি প্রধান চরিত্রের একজন—মহল। যাঁর বর্ণনা দিতে গিয়ে আমাদের পরিচিত বর্ণনার পাশাপাশি লেখক আরও লিখলেন, ‘...লিঙ্গ নত অবস্থায় তিন, উত্থিত অবস্থায় বড়োজোড় পাঁচ—শেফা মেপেছিল।’ শেফা হলো গল্পের একটি অপ্রধান চরিত্র এবং মহলের স্ত্রী। শেফার ব্যাপারে লিখতে গিয়ে লেখক যেটুকু উপমা ব্যবহার করলেন সেটাও বেশ—‘শেফা কিন্তু সুইট মেয়ে; অবশ্য মাঝেমধ্যে এমন চালে কথা বলে যে ঘোড়ার আড়াই দান, রাজা-মন্ত্রী একসাথে চেক।’ শেফার অতিকথনকে লেখক বর্ণনা করলেন— ‘মহল শেফার অনবরত কথার চিটচিটে স্রোতে পিছলায়ে পড়ে গেল। মেয়েটার কথার কোনো দাঁড়ি-কমাও নাই যা ধরে একটু দাঁড়ানো যায়।’ তো এই মহল ‘সেক্স করতে বড্ড অসুবিধা হয়’ বলে তাঁর এনজিওর চাকরিটা ছেড়ে দিতে চান। সেই এনজিওতে এসেছেন সেলিম নামের একজন, যাঁর একটা চাকরির দরকার। কিন্তু দুর্ঘটনায় হাত-পা কিছুই ভাঙা নাই, যেটা এনজিওটিতে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের পরিপন্থী হয় বলে তাঁর চাকরি হচ্ছে না। ফলে গল্পের এক পর্যায়ে আমরা দেখবো সেলিমের একটা হাত ভাঙার জন্য দুজন মানুষ (সেলিম ও মহল) একটা ইট খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু একটা ইট তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না!

প্রায় সতেরো পৃষ্ঠার এই গল্পে লেখক গল্প বলেছেন কম, লেখার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন বেশি। অনেক ছোট-ছোট এলিমেন্ট গল্পের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে, যা হয়তো একটা গোটা উপন্যাসেও অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। দুটো জায়গায় আমার কাছে খটকা লেগেছে। লেখক লিখেছেন ‘পিঠের পিছে দেওয়াল’ ও ‘চাকরিটার প্রতি কম শ্রদ্ধাহীন’—দুটোই মনের মধ্যে কনফিউসন সৃষ্টি করে, তবে ভালো করে ভাবলে মনে হয় যে উক্ত অংশ দুটিতে শব্দের ভুল প্রয়োগ হয়েছে।

পরের গল্পের নাম ‘দারোয়ান’। গল্পটা পড়ে কিছুটা ইলাসীয় ফিল পাওয়া যায়। গল্পের প্রধান চরিত্র সাইফুল বিডিআর বিদ্রোহের ফলে কারাবন্দী হয় এবং সাত বছর পর জেল থেকে ছাড়া পায়। সাইফুলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল, যিনি একটা গোডাউনে রাতের বেলা দারোয়ানের কাজ করেন। সাইফুলের বাবার ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ইনফেকশন হয়, যার জন্য অপারেশন করে ঐ আঙ্গুলটা কেটে ফেলতে হয়। আঙ্গুল কাটার ব্যাপারে সাইফুলের বাবার কথা ছিল একটাই—‘আঙ্গুল কেটে ফেললে আমি স্যান্ডেল পরমু ক্যামনে?’ অপারেশনে যখন আঙ্গুল কাটা হলো, জ্ঞান ফিরেই স্যান্ডাল পরতে গিয়ে সাইফুলের বাপ মরে যান। এবং আমরা দেখতে পাই যে বাপকে দাফন করে এসে প্রতিবেশীর দেওয়া ভাত আর বয়লার মুরগীর মাংস দিয়ে সাইফুল রীতিমতো পেট ভরে খাচ্ছে। উত্তম পুরুষে লেখা গল্পে লেখক সাইফুলের জবানীতে লিখলেন—‘প্রতিবার ডেকে ডেকে ভাত আর ঝোল চাওয়ার সময়—আল্লার কিরা, আমার মনে হচ্ছিল অপরাধ করছি এবং আমার আশেপাশে সবাই খেতে খেতে আমার অপরাধ দেখছে।’

এই গল্পটার সবচেয়ে সুন্দর বিষয় এটাই যে লেখক সরাসরি বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে গল্প লিখলেন না, লিখলেন বিডিআর বিদ্রোহ একটা সেপাইয়ের জীবনে (সব সেপাইয়ের না) কেমন প্রভাব ফেলেছে তাই নিয়ে।

তৃতীয় গল্পের নাম ‘পেঁচামুখা’। প্রধান চরিত্র বদিউজ্জামান, যে কিনা বুড়ো হতে চায় না। তার নিঃসঙ্গ জীবন, সময় কাটে ‘ডায়ারি’ লিখে। যৌবনে বিয়ে করার মানসে অহনা নামের একটি মেয়েকে সে দেখতে যায়, কিন্তু বিয়ে হয় না; বিয়ে তার কোনদিনই হয় না। সেই পাত্রী দেখতে গিয়ে বদিউজ্জামানের যে মনোভাব জানা যায় তা হলো—‘পাত্রীর দিকে তাকায়ে দেখি একটাই মুখ...প্যাঁচানো শাড়ির ভিতরে কী আছে অনুমান করার উপায় নেই। আমার মনে হইতেছিল, ঈশ্বরে বিশ্বাস করি কি-না এই পরীক্ষা দিতে আসছি। তোমাকে নেয়ামত হিসাবে শুধু মুখটা দেখানো হবে, বাকিটা বিশ্বাসের উপর।’ বিয়েটা না হলেও আমরা দেখতে পাই যে, দশ বছর পর ইঁদুর মারার কল কিনতে গিয়ে এই অহনার সাথে বদিউজ্জামানের দেখা হয়ে যায়। এই দেখা হওয়ার বিষয়টা কিন্তু আমরা আগেই জানতে পারবো। কীভাবে?

এখানে একটু ওয়ালিদ প্রত্যয়ের এক্সপেরিমেন্টের কথা বলি। প্রথম গল্পের মহলের স্ত্রী শেফার বান্ধবী হলো এই অহনা। এবং অহনার সাথে যে বদিউজ্জামানের দেখা হয় সেটা আমার ‘মহলের অন্দরে’ গল্পে শেফার অতিকথন থেকে জানতে পারি।

আমরা এই গল্পেও দেখতে পাই বদিউজ্জামানের বাবার মৃত্যু। যেকোনো কারণেই হোক ওয়ালিদ প্রত্যয়ের গল্পে মায়ের তুলনায় বাবার গল্প বেশি থাকে এবং অধিকাংশ গল্পে সেই বাবার মৃত্যু হয়।

বাবার মৃত্যুর পর লেখক—বদিউজ্জামান ও তার মাকে একজায়গায় রাখলেন না। মা চলে গেলেন তাঁর ভাইয়ের (বদিউজ্জামানের মামার) সাথে। ফলে বদিউজ্জামান পরিপুর্ণ একা হয়ে গেলেন। এই একাকীত্বের জীবনে তাঁর একমাত্র সঙ্গী বন্ধু মোতালেব। গাঁজা টানার সঙ্গী হওয়া ছাড়া মোতালেবের প্রভাবও বদিউজ্জামানের জীবনে খুব একটা বেশি না। তবে ছাত্রজীবনের একটা বিষয় বদিউজ্জামানের সমগ্র জীবনে একটা প্রভাব ফেলে। তা হলো—ফারসি ভাষা শিক্ষা। কিন্তু ফারসি শেখার ইচ্ছা থেকে বদিউজ্জামান যখন লুৎফর স্যারের শরণাপন্ন হয় তখন ‘লুৎফর স্যার নিজের ফারসি না জানার অক্ষমতাকে একটা ফিলোসফিক্যাল কাশ্মিরি শালে ঢাইকা দিতে চাইছিলেন।’ তো এই লুৎফর স্যার তাঁর ‘ফিলোসফিক্যাল কাশ্মিরি শালে’ নিজের অক্ষমতা ঢাকার জন্য বদিউজ্জামানকে পশু-পাখির ভাষা শিখতে বলে। এবং আমরা দেখতে পাই বদিউজ্জামানের একাকীত্বের জীবনে তার জানালার দুটো শিকের মধ্যবর্তী দূরত্বের মাঝে একটা পেঁচার আগমন ঘটতে। এই পেঁচার ভাষা নিঃসঙ্গ বদিউজ্জামান কি কোনদিন বুঝতে পারে কিংবা বদিউজ্জামানের নিঃসঙ্গতা কি আদৌ কাটে?

পরের গল্প ‘ওয়ান-টেক শট’। প্রেমিকার জন্য পার্কে অপেক্ষমান একজন প্রেমিক একটা মুহূর্তের বর্ণনা দিচ্ছেন, তাই নিয়েই একটি মাত্র দীর্ঘ বাক্যে লেখা অর্ধেক পৃষ্ঠার গল্পটি মন্দ নয়।

এর পরের গল্পের নাম ‘পুণ্য’। পুণ্য গল্পটি শুরু হয় আফসার ভাইয়ের—‘বাল ফালানোর মধ্যেও একটা মহত্ত আছে’—এই কথাটির প্রমাণের মধ্য দিয়ে। আফসার ভাই হলেন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, কবি এবং সম্পাদক। তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি রাস্তার পাগলদের ধরে নিয়ে গিয়ে চুল-দাড়ি কেটে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে তাদের পরিচয় খুঁজে বেড়ান। আফসার ভাই হলেন গুরু শ্রেণির মানুষ, যিনি অনেক জানেন, কিন্তু জীবনে কিছুই করতে পারছেন না এবং তাঁর সাথে সর্বদা উপগ্রহের মতো কেউ না কেউ থাকে। সামগ্রিকভাবে গল্পটি সুন্দর। গল্পটিতে শিল্প-সাহিত্য-দর্শনের আলাপ আছে, ওয়ালিদ প্রত্যয়ের লেখায় এ ধরনের কথোপকথন আমরা পূর্বেও পেয়েছি। কীভাবে পেয়েছি তার ব্যাখ্যা পরে দিচ্ছি।

‘হাত’ নামক গল্পটি পড়তে গিয়ে প্রথমে মনে হয় যেন দস্তয়েইভস্কির লেখা পড়ছি। গল্পটিতে একজন লেখকের কথা জানতে পারবো, যিনি দেখা করতে যাচ্ছেন তাঁর হাতের সাথে। কারণ তাঁর ডান হাতটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কবজি থেকে বিচ্ছিন্নাবস্থায় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষা করছে। সেই দেখা করতে যাওয়া এবং দেখা করতে গিয়ে লেখক ও তাঁর হাতের সাথে কথোপকথন ও পূর্বের স্মৃতি মন্থন থেকে উত্থিত একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প এবং সবশেষে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গালে চপেটাঘাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় গল্পটি।

শুরুর দিকের বর্ণনার ধরনের জন্য গল্পটি পড়তে কিছুটা বিরক্তি এলেও গল্পটি আসলে সুন্দর। কিছু পছন্দের লাইনের উদ্ধৃতি দেবার লোভ সামলাতে পারছি না—

যেমন, ‘যা যা তোমাকে বাকি জীবন ব্যথা দিতে সম্ভব সবই তোমার আছে’ , ‘আমিও তো জানতাম কী পরিমাণ চাপে ক্যামোন সুর প্রেমিকার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।’ আবার একটি নিঃসঙ্গ চাবির কথা বলতে গিয়ে লেখক বলেছেন, ‘চাবিটার অঙ্গে অঙ্গে লেগে আছে সিয়োন আনোস দে সলেদাদ’।

‘গল্পের কনসেপ্ট’ গল্পটি একটি সংলাপ নির্ভর গল্প। এক্সপেরিমেন্টাল ধাঁচের গল্পটি মোটামুটি মানের।

‘আযাবানপিত্রাবিও’ গল্পের নামটা বিদঘুটে। তবে ঘেটে ঘুটে মনে হইল এর অর্থ হলো ‘বেঁচে আছি’ টাইপের কিছু একটা। গল্পটি একবার পড়লে ভালো নাও লাগতে পারে, দুইবার পড়তে হবে। দ্বিতীয়বার পড়ে আমার বেশ লেগেছে। এই গল্পেও আমরা প্রথম গল্পের একটা রেফারেন্স পাবো। সেটা গল্পেই উল্লেখ আছে, আপনাকে খুঁজতে হবে না।

ওয়ালিদ প্রত্যয়ের লেখায় প্রায়ই কিছু ইন্টারেস্টিং বিষয় পাওয়া যায়। যেমন এই গল্পে আমরা রোকন নামক একজনের কথা জানতে পারবো, যিনি নিজের মৃত্যুর খবর নিজেই মাইকিং করার জন্য আগে থেকেই মোবাইলে নিজের মৃত্যু সংবাদ রেকর্ড করে রেখেছেন।

যেহেতু অষ্টম গল্পে এসেছি পৌঁছেছি, তাই এখানে এসে একটা বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা করা যেতেই পারে। তা হলো ‘ওয়ালিদ প্রত্যয় ইউনিভার্স’। আমরা যে এক বইয়ের এক গল্পের মাঝে আরেক গল্পের রেফারেন্স পাচ্ছি তাই নয়, লেখকের পূর্বের বইয়ের রেফারেন্সও এই বইয়ে পাওয়া যায়। যেমন, ‘আযাবানপিত্রাবিও’ গল্পে আমরা দৃশ্য ও লেখক ওয়ালিদ প্রত্যয়ের কথা জানতে পারি। আমার ভুল না হলে লেখকের প্রথম গল্পগ্রন্থ থেকেই আমরা দৃশ্য ও প্রত্যয়কে পেয়ে আসছি। একইভাবে রঙিন, সম্যক, সুন্দর পুকুর, ক্ষীরোদের চায়ের দোকান— এই বিষয়গুলো লেখকরে গল্প-উপন্যাসে ঘুরে ফিরে আসছে, তাদের স্ব-স্ব পরিচয় নিয়ে। এই গ্রন্থের ‘পুণ্য’ ও ‘আযাবানপিত্রাবিও’ গল্প দু'টিতে এই ধারার প্রভাব বেশি লক্ষ করা গেছে, বিশেষ করে লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘সমবেত শূন্যতায়’ এর সাথে এই গল্পগুলোর বেশ মিল লক্ষ করা যায়। এই ‘ওয়ালিদ প্রত্যয় ইউনিভার্স’ কতটা ভালো বা মন্দ বিষয় হবে, তা ভবিষ্যতই নির্ধারণ করবে।

সর্বশেষ গল্প ‘কিন্তু এবং সুতরাং’ একটি মধ্যবিত্ত ভালো মানুষের গল্প, যে কিনা জীবনে কখনো বড়ো ধরনের কোনো অপরাধ করেনি, কিন্তু এক রাতে মাত্র বিশ টাকার ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালার সাথে কথাকাটাকাটি হয় এবং অসাবধানতায় তার হাতে ঐ রিকশাওয়ালার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকে ঘিরে তার মনের মধ্যে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাই নিয়েই এই গল্প। এই গল্পের সাথে আমরা আমাদের মনস্তত্বের যথেষ্ট মিল খুঁজে পাবো।

এই গল্পের লেখকের একটি ব্যতিক্রমী ব্যাখ্যা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে—‘কোনো মানবশিশু ভদ্র হয়ে জন্মায় না; যেকোনো জন্তুর শাবকদের তুলনায় মানবশিশু ঢের ইতর; সে জন্মগতভাবে জেদি, রাগী, হিংসুটে, মারমুখো। হাসি ছাড়া আর কোনো সারল্য তাদের মধ্যে নাই। সব দোষ নিয়ে জন্মানো প্রাণীটিকে আজীবন তা কাটানো শিখতে হয়। ভদ্রতা হলো দোষ লুকানোর একটা পোশাক।’

কিংবদন্তী থেকে প্রকাশিত চার শত টাকা মুল্যের বইটিতে কিছু ছোট-খাটো বানান ও প্রিন্টিং মিসটেক আছে, এছাড়া প্রোডাকশন বেশ ভালো। শ্রেয় চৌধুরীর প্রচ্ছদটাও ভালো লেগেছে।

ওয়ালিদের লেখা পড়লে আমার বরাবরই মনে হয় তিনি আসলে গল্প লিখছেন না, বরং তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে একটা আত্ম-অনুসন্ধানের যাত্রায় বের হয়েছেন; যে যাত্রার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকেই কেবল জানার চেষ্টা করেন না, জানার চেষ্টা করেন পারিপার্শ্বিকের সেই সব ছোট-খাটো বিষয়, যেগুলো আমাদের সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। ওয়ালিদের লেখায় একটা আলাদা স্বাদ পাওয়া যায়, যেখানে আবেগের সুরসুরানির হাত থেকে আমরা বাঁচতে পারি। ফলে, যারা একটু মনোযোগ দিয়ে ওয়ালিদের লেখা পড়বেন, তাঁদের ‘মাননীয় মানুষেরা’ বইটি বেশ ভালো লাগার কথা। ওয়ালিদ প্রত্যয়ের জন্য শুভকামনা।

দীপক কর্মকার

১৭ এপ্রিল ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login