Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -৩৭)

April 17, 2025

Boros Marika

90
View

ওই দিকে কিছু মেহমান মুখে বিরক্তি আর চোখে উপহাস নিয়ে একে একে চলে যেতে লাগলো।
তাদের কেউ বললো, “আগেই বলেছিলাম… এত ঢাকঢোল পিটিয়ে লাভ নেই!”
আবার কেউ চাপা গলায় বললো, “মেয়েটা নিশ্চয়ই কিছু করেছিল ছেলেটার সাথে… না হলে এভাবে পালায়?”

তাদের কথাগুলো যেন বিষের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল বাতাসে।
তৃষা শুনছিল সব—কিন্তু মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না।
তার চোখ দুটো ফাঁকা…
কান্নাও নেই, প্রতিবাদও নেই,
শুধু একরাশ অভিমান আর অজানা বিষণ্নতা যেন তাকে চুপ করে রেখেছে।

আরিয়ানের বাবা-মা মাথা নিচু করে বসে আছেন।
আর তৃষার বাবা মাটির দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছেন, যেন হাজার বছর কেটে গেছে এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।

এত কিছুর মাঝেও আমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
তৃষার দিকে তাকিয়ে বললো না কিছু,
শুধু মনে মনে বললো—
"আমি জানি এই সবকিছুর মাঝেও, তোমার চোখে এখনো একটা প্রশ্ন আছে, তৃষা… আর আমি চাই না, সেই প্রশ্নের উত্তরটা মিথ্যে হোক…"
ঘড়ির কাটা ঠিক বারোটায় পৌঁছাল।
বাড়ির ঘড়ির ঘন্টাধ্বনি যেন শোকবার্তা হয়ে বাজছিলো চারদিকে।

তৃষার চাচা উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন—
“আর অপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই। আমরা যথেষ্ট সময় দিয়েছি… এখন আর কিছু বলার নেই আমাদের।”

তৃষার বাবা মুখ নিচু করে চোখ মুছলেন।
আরিয়ানের বাবা অসহায়ভাবে চেয়ে রইলেন চারপাশে—
কি বলবেন, কিভাবে বলবেন, কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

আরিয়ানের মা মুখে হাত চেপে ধরে বসে ছিলেন।
তার মুখে ছিল কেবল একটাই প্রশ্ন—‘আমার ছেলে কি সত্যিই এমন?’

তৃষা চুপচাপ বসে আছে,
একটা পাথরের মতো।
সে কাঁদছে না,
শুধু গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে অপলক তাকিয়ে আছে সামনে…
ঠিক যেন তার ভেতর কিছু একটাকে মেরে ফেলেছে সে নিজেই।

এই নিরবতার মাঝে আমান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো।
তার চোখে ছিল একরাশ শ্রদ্ধা, একটা জেদ, আর কেমন একটা চাপা ব্যথা।

আমান কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই তৃষা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। তার চোখে কোনো জল নেই, কিন্তু কণ্ঠটা শান্ত ও স্থির।
সে বলল—
“আমি মিস্টার আমানকে বিয়ে করতে চাই… যদি মিস্টার আমান এর কোনো আপত্তি না থাকে।”

ঘরজুড়ে এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা।

সবাই চমকে গেলো।
আরিয়ানের পরিবার হতবাক।
তৃষার বাবা মাথা নিচু করে বসে আছেন।
আর দাদিমা—তার চোখে জল, ঠোঁটে একটা মিষ্টি হাসি।

মিস্টার আমান ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বলে—
“মিস তৃষা, আমি… রাজি আছি।
তবে… বিয়ের আগে আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলা খুব জরুরি।
আপনার অনুমতি থাকলে, আমরা কিছু সময় একা কথা বলি?”

তৃষা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।

তারা দুজন তখন পাশের ছোট একটা রুমে চলে যায়।
দরজা বন্ধ হয়।

এরপর রুমের দরজাটা ধীরে খুলে যায়।
তৃষা আর আমান একসাথে বেরিয়ে আসে—
তাদের মুখে কোনো হাসি নেই, কিন্তু চোখে স্পষ্ট একরকম সিদ্ধান্তের ছায়া।

সবার দৃষ্টি তখন তাদের দিকেই।
দাদিমা একপলকে তৃষার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু আন্দাজ করার চেষ্টা করেন।
তৃষার বাবা বুকটা শক্ত করে রাখলেও চোখে ভয় আর প্রশ্ন।

কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে না।
কারণ, তাদের দুজনের চেহারা স্পষ্টতই বলে দিচ্ছে—
তারা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।

তৃষা চুপচাপ গিয়ে নিজের জায়গায় বসে।
অন্যদিকে আমান সোজা গিয়ে দাঁড়ায় কাজীর সামনে।

“আপনি পড়াতে পারেন,”
স্রেফ এই কথাটাই বলে,
অতঃপর সবার সামনে শুরু হয়—
একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

কিন্তু তৃষার চোখে তখনও একটা অদ্ভুত শূন্যতা।
আর আমানের চোখে—
নিভৃত এক প্রতিজ্ঞার ছায়া।

তারা কী কথা বলেছিল রুমে?
আর তৃষা কেন এতটা নিঃশব্দ?

চলবে......
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login