Writer:-Jannatul Mawya
পার্ট :-২
রাত প্রায় ১২ টা বেজে গেল। আয়রার চোখে ঘুম নেমে এলো।একা একা বসে থাকতে আর ভালে লাগছে না।এমন সময় ঘরে এন্ট্রি নিলো আবির।ঘরে ডুকেই জামা কাপড় পরিবর্তন করে নিল।
আবির:- এই মেয়ে এখনো বসে আছো কেন? আর আমার বিছানাতে কি করছো? নামো এখনি।
আয়রা:- আমি তাহলে কোথায় বসবো?
আবির:- তা আমি কি জানি। যেখানে ইচ্ছে যাও।আর হ্যা শুনো আমি তোমাকে বউ হিসেবে মানি না।এই বিয়েতে আমার মত ছিল না। দয়া করে আমার উপর বউয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এসো না।যাও এখান থেকে।
এসব শুনে আয়রার মাথায় যেনো বাজ পড়লো। আয়রা চুপচাপ চেয়ে আছে।
আবির:- কি হলো যাচ্ছো না কেন? তোমাকে কি ভালো করে বুজাতে হবে??
এই শুনে আয়রা যেই ঘর থেকে বেরোতে যায় আবির কি যেনো ভেবে বললো ,, দাড়াও বাহিরে যেতে হবে না না হয় আবার মা রাগারাগি করবে।তুমি সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ো।
এই বলে আবির বিছানায় শুয়ে পড়লো ঘুমানোর জন্য। আয়রাও সোফায় শুয়ে পড়লো। শুয়ে শুয়ে আয়রা ভাবছে তবে কী আমি উনার মাথার উপর বোঝা হয়ে গেলাম এসব ভাবতে ভাবতে আয়রা ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল।
ফজরের আযান কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় আয়রার।চট করে উঠে ওজু সেরে নামাজ পড়তে যায়।নামাজ শেষ করেই কুরআন তিলাওয়াত করতে বসে।সু -মধুর কন্ঠে তিলাওয়াত করতে থাকলো।হঠাৎ ই আবিরের ঘুম ভেঙে যায় আয়রার তিলাওয়াত এর শব্দ শুনে।
আবির:-এই মেয়ে কি শুরু করছো কি? শান্তিতে কি ঘুমাতে ও দেবে না?
আয়রা:- আমি দুঃখিত।তবে আমরা মুসলমান সেই হিসেবে আল্লাহর ইবাদত করা আমাদের দায়িত্ব। আপনি ও একজন মুসলিম তাই বলছি আজান পড়েছে গিয়ে আপনি ও নামাজ পড়ে নেন।আল্লাহ খুশি হবেন।
প্রকৃত মুসলিম তো সেই যে ঘুম ছেড়ে ওঠে নামাজের জন্য মসজিদে যায়।কথায় আছে,,,''ঘুম হতে নামাজ উওম",
আবির:- তোমার কাছে লেকচার শুনতে চায়নি। এবার থেমে আমাকে উদ্ধার করো যওসব।
এই বলে আবির তার কানে বালিশ চাপা দিয়ে পুনরায় ঘুমে তলিয়ে যায়। আয়রা তিলাওয়াত শেষে রান্নাঘরে চলে যায়।আর বাড়ির সবার জন্য চিকেন বিয়িয়ারি রান্না করে।বাড়ির সবাই ঘুম থেকে ওঠে দেখে তাদের নতুন সদস্য নাস্তা তৈরী করে ফেলছে।সবাই অনেক খুশি হয়।আয়রার শাশুড়ি বলতে লাগলো তুমি কিচেনে গেলে কেন মা? আমাদের ডেকে দিতে তুমি সবে মাএ এ বাড়িতে এসেছে
আয়রা:- তা কি হয়েছে মা,আমি কি সবার জন্য রান্না করতে পারি না?
শাশুড়ি :- না না তা নয় মা তবে আমরা ছিলাম তো।
আয়রা :- আপনারা তো অনেক করেছেন মা এবার আমাকে আপনাদের সেবা করতে দিন।
আয়রার কথা শুনে বাড়ির সবাই খুশি হয়।
সবাই নাস্তা করতে বসে আবির ও যোগ দেই। কিন্তু সবাই খাবারের প্রসংসা করলে ও আবির বলে এসব কি রেঁধেছো।মুখে দেয়া যাচ্ছে না।
শাহানা বেগম:- কি বলিস এসব আমরা তো দিব্বি মজা করে খাচ্ছি। তোর টাতে কি হলো। সব তো একই হাড়ির রান্না।
আবির যেই উঠে যাচ্ছিলো আয়রা বললো যাবেন না আমি এক্ষুনি আপনাকে অন্য কিছু রেঁধে দিচ্ছি। আয়রা ছুটে যায় কিচেনে এবং জটপট আবিরের জন্য চিকেন পাস্তা রান্না করে নিয়ে আসে।কিন্তু ততক্ষনে আবির চলে যায়। আয়রা এসে আবিরকে না পেয়ে খুবই হতাশ হলো।সে আবিরের জন্য রান্না করা পাস্তা ঘরে নিয়ে রেখে চলে যায়।
আবির পাস্তা দেখে খেতে শুরু করে আর বলে ভালোই মজাতো। কিন্তু এটা মেয়েটাকে বলা যাবে না।বললে মাথায় চড়ে বসবে। আমাকে যত সম্ভব ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে হবে যাতে ও নিজে থেকেই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
আয়রা দুপুরের গোসল সেরে লাল জামদানি একটা শাড়ি পরে। মনে হচ্ছে যেন আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে।কানে ঝুমকা,গলায় হাড়,হাতে রেশমি চুড়ি,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক মনে হচ্ছে কোন অপসরী।আর শাড়ি তে তাকে যা লাগছে না ওফ মনে হচ্ছে ওর জন্যই এই শাড়ি বুনা হয়েছে।কিন্তু এসব কিছুই আবিরকে গ্রাস করছে না। তার একটায় সমস্যা ও গ্রামের খ্যাত মেয়ে শহরের মেয়ে দের মতো এত স্মার্ট নয়।আবির আয়রার দিকে তাকিয়ে ও দেখে নি। ও ভাবে যে মেয়েকে আমি বউ মানি না তাকে দেখার ই বা কি আছে। আয়রা দুপুরের নামাজ সেরে সবার জন্য খাবার সাজায় টেবিল এ। সেই মুহূর্তে হাজির হয় স্নেহা আয়রাকে উদ্দেশ্য করে বলে এ আমি কি দেখছি, সত্যি কি আমাদের ঘরে পরী নেমে এসেছে? যেই সেই পরী নয় এ যেন এক ডানা কাটা লাল পরী। এবার আয়রা লজ্জায় লাল হয়ে পড়লো চলব.....................