আইনস্টাইন! নামটা শুনলে কল্পনার চোখের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে এক বৃদ্ধের চেহারার প্রতিচ্ছবি। না, আর দশটা গতানুগতিক বৃদ্ধের মতো নয় সে। শ্বেত বর্ণের কোঁকড়ানো চুল, কপালে চিন্তার ভাঁজ, শ্বেত ছোপ ছোপ গোঁফ তার, চেহারার মাঝে যেন ফুটে ওঠেছে অসাধারণ চিন্তাশক্তির প্রতিফলন। তিনি আর কেউ নয়, উনিশ শতকের অন্যতম চিন্তাবিদ ও জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইন বিজ্ঞানের দুর্বোধ্য বিষয়গুলোকে হাস্যরসাত্মকভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন।
বিজ্ঞানের জগতে তাঁর কৃতিত্বের শেষ নেই বটে। তবে আজ আর সেদিকে না গেলাম। আইনস্টাইনের মেধা নিয়ে অনেকের আগ্রহের শেষ নেই। এই আগ্রহ তাঁর জীবদ্দশায় সকলের মাঝে দেখা গিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর এই আগ্রহ এতটাই বেড়ে যায় যে, তাঁর মৃত্যুর পর মস্তিষ্ক নিয়ে রীতিমতো পুরো দস্তুর গবেষণা চলে। যে মানুষটার মেধা নিয়ে এত আগ্রহ সবার, সেই মানুষটা শৈশবে দেরিতে কথা বলতে শিখেছেন, সেই মানুষটাই শৈশবে লেখাপড়ায় ছিলেন অসম্ভব কাঁচা। হ্যা, ঠিকই শুনছেন। এই মানুষটার শৈশবে মেধাবী ট্যাগের বিশেষ কোনো কাহিনী নেই। অথচ এই মানুষটাই হয়ে ওঠেন উনিশ শতকের চিন্তাবিদদের একজন। সেই সাথে পদার্থবিজ্ঞানের উপর নোবেল পুরস্কার লাভ করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন এই মানুষটা। থিওরি।অব রিলেটিভিটি নামক তত্ত্ব আবিষ্কার করে বিজ্ঞানের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করে ফেলেন এই মানুষটা।
আচ্ছা, কোনো কি যাদু আছে এর মাঝে? কোন যাদু বা মন্ত্রবলে আইনস্টাইন রহস্যময়ভাবে মেধাবী ও চিন্তাশীল হয়ে ওঠেন। নিশ্চয়ই আছে। সেই যাদু নিয়ে কথা বলবো আজ। আইনস্টাইন তাঁর লেখাপড়ায় কিছু অভূতপূর্ব কৌশল অনুসরণ করে অসাধারণ যাদু দেখিয়েছেন। তিনি আর দশজনের মতো গতানুগতিকভাবে পড়াশুনা করতেন না। শিব খেরা খুব সুন্দরভাবে বলেছেন যে, সফলরা ভিন্ন কোনো কাজ করে না; বরং তারা একই কাজ ভিন্ন উপায়ে করে।
আইনস্টাইনের লেখাপড়ার কৌশলগুলো কি কি তাহলে? চলো তো দেখি একবার।
আইনস্টাইন লেখাপড়া করার সময় ৫টি কৌশলকে সর্বদা মেনে চলতেন। ১ম কৌশলঃ তিনি মনমতো ঘুমিয়ে নিয়ে ঘুমের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে ভালোবাসতেন। আইনস্টাইন মনে করেন, ঘুম প্রতিভাবানদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। তাই তিনি কোনো অবস্থাতেই ঘুমের ঘাটতি থাকাকে বিন্দুমাত্রও প্রশ্রয় দিতেন না। এটা তাঁর লেখাপড়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রথম কৌশল ছিল। ২য় কৌশলঃ আইনস্টাইন ঘুম থেকে উঠে লেখাপড়ার পূর্বে অবশ্যই সকালের নাস্তা পেটভরে, মনভরে ও সময় নিয়ে উপভোগ করতে ভালোবাসতেন। কারণ তিনি মনে করেন, সকালের নাস্তা সারাদিনের জ্বালানি হিসেবে আমাদের দেহকে সহায়তা করে। তাই তিনি লেখাপড়ায় ভালো করার ২য় পূর্বশর্ত হিসেবে এই কৌশলকে বাছাই করেন। এটা গেল তার ২য় কৌশল। ৩য় কৌশলঃ সারাদিন তিনি একাধিক বিষয়ে পড়ালেখা করার চেয়ে একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করাকে অধিক প্রাধান্য দিতেন। তিনি ১২ ঘন্টায় ১২টি সাবজেক্ট পড়ার চেয়ে ১২ঘন্টায় ১টি কিংবা ২টি সাবজেক্ট পড়ে দক্ষতা অর্জন করাকে অধিক উপযোগী মনে করতেন। তিনি পরিমাণের চেয়ে গুণগত মানকে অধিক প্রাধান্য দিতেন।
৪র্থ কৌশলঃ পড়ার পরে সেই বিষয়বস্তুর উপর কল্পনা করতে বেশি ভালোবাসতেন। তিনি পড়ার পরে প্রাকৃতিক পরিবেশে হাটতে বের হয়ে যেতেন এবং যা পড়েছেন তা নিয়ে নিজের সাথে আলোচনা করতেন, গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা বা পর্যালোচনা করতেন। এভাবে পড়তে পারলে তা স্মৃতিতে বেশি গেঁথে থাকে এবং অধিক বোধগম্য হয় বলে তিনি মনে করেন।
৫ম কৌশলঃ তিনি দিনশেষে সমস্ত পড়াগুলোকে পুনরায় পড়তেন, পর্যালোচনা করতেন। তিনি এই কৌশলের নাম দিয়ে "3R Technique"। প্রথম R নির্দেশ করছে Read(পাঠ করা/পড়া), ২য় R নির্দেশ করছে Review(পুনরায় দেখা/পুনঃসমীক্ষণ), ৩য় R নির্দেশ করছে Revise(পুনঃপাঠ করা/পুনরালোচনা করা)। সারাদিন তিনি যা পড়েছেন দিনশেষে তিনি তা পুনরায় স্মরণ করতেন পড়া, পুনঃসমীক্ষণ ও পুনঃপাঠ এর মাধ্যমে। তাহলে তো বুঝা গেল আইনস্টাইনের যাদুর রহস্য। এভাবে ৫টি কৌশল অবলম্বন করে পড়তে পারলে লেখাপড়ায় আর আটকায় কে!