রোদ্রোজ্জ্বল এক সকালে, তরুণ অভিযাত্রী আরিয়ান একটি রহস্যময় ম্যাপ হাতে পেল তার দাদার পুরোনো ট্রাংক থেকে। ম্যাপটিতে আঁকা ছিল একটি অচেনা দ্বীপ—"নিঃশব্দ দ্বীপ"। দাদার হাতে লেখা নোটে লেখা ছিল, "এই দ্বীপে সময় থেমে যায়, শব্দ হারিয়ে যায়। যে খুঁজে পাবে নিঃশব্দের উৎস, সে পাবে প্রকৃত মুক্তি।"
কৌতূহলী আরিয়ান সিদ্ধান্ত নেয়, যেভাবেই হোক সে দ্বীপে যাবে। ইন্টারনেটে সে দ্বীপের কোনো তথ্য খুঁজে পায় না। একমাত্র ভরসা সেই পুরোনো ম্যাপ। সপ্তাহখানেক প্রস্তুতি নিয়ে সে রওনা দেয় ভারত মহাসাগরের এক রহস্যময় কোণের দিকে, যেখানে স্যাটেলাইট সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছায় না।
তিন দিন সমুদ্রে কাটানোর পর, ধোঁয়াচ্ছন্ন সকালে সে দেখতে পায় ধূসর পাহাড় আর কুয়াশায় মোড়া এক দ্বীপ—এটাই নিঃশব্দ দ্বীপ!
তবে দ্বীপে পা দিতেই আরিয়ান টের পায়, এটা সাধারণ কোনো দ্বীপ না। তার চারপাশে সবকিছু নীরব। ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ নেই, পাখির ডাক নেই, এমনকি তার নিজের পায়ের শব্দও যেন গিলে নিচ্ছে মাটি। সে চিৎকার করেও কোনো শব্দ শুনতে পায় না।
দ্বীপে একা ঘুরতে ঘুরতে সে পায় পাথরে খোদাই করা এক প্রাচীন চিহ্ন, যা ম্যাপে আঁকা চিহ্নের সঙ্গে মিলে যায়। চিহ্নের মাঝখানে একটা অদ্ভুত দোলা—যেন কোনো যন্ত্রের অংশ। না ভেবেই সে দোলাটা ঘোরায়।
হঠাৎ চারদিক ঝাঁকুনি দিয়ে আলোয় ভরে যায়। সে দেখে, দ্বীপের এক অংশ ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে এক গোপন গুহা। ভয়কে জয় করে সে নিচে নামে। সেখানে সে দেখে প্রাচীন এক যন্ত্র—জ্যামিতিক নকশায় তৈরি এক গোলাকার বস্তু, চারপাশে সূক্ষ্ম লাইন আর লালচে আলো।
আরিয়ান বুঝতে পারে, এটাই সেই "নিঃশব্দের উৎস"। হঠাৎ যন্ত্রটি থেকে বের হয় একরকম কম্পন, যার মাঝে এক সত্তা তার সামনে উপস্থিত হয়—স্বচ্ছ এক মানবাকৃতি।
সত্তাটি বলে, "এই যন্ত্র পৃথিবীর প্রাচীনতম শক্তি, যা শব্দকে আটকে রাখতে পারে। শব্দ একধরনের শক্তি, আর আমরা একে নিয়ন্ত্রণ করি যাতে মানুষ ধ্বংসের পথ না বেছে নেয়। কিন্তু কিছু সাহসী মানুষ, যেমন তুমি, এর সত্য জানতে পারে।"
আরিয়ান প্রশ্ন করে, "আমি এখন কী করব?"
সত্তা হেসে বলে, "তুমি চাইলেই শব্দ ফিরিয়ে দিতে পারো। তবে মনে রেখো, এই শক্তি শুধু তাদের জন্য, যারা শব্দকে সম্মান করে।"
আরিয়ান চোখ বন্ধ করে যন্ত্রের উপর হাত রাখে, আর এক মুহূর্তে সে শুনতে পায়—সমুদ্রের গর্জন, বাতাসের সুর, নিজের হৃদস্পন্দন। দ্বীপ আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে।
যখন সে আবার উপরে উঠে আসে, দ্বীপের গাছেরা দুলছে, পাখিরা উড়ছে। সে জানে, সে শুধু একটা দ্বীপকেই নয়, নিজেকেও আবিষ্কার করেছে।
ফেরার পথে তার মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার আসলে বাইরের নয়, ভেতরের।