আজ সকাল থেকে আবহাওয়া খুব খারাপ দেখাচ্ছে।চারদিক কেমন অন্ধকার হয়ে আছে, ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে,মনে হচ্ছে আজকের দিনটা আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে।হঠাৎ করে খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হল, এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বৃষ্টির কারণে কোথাও কারেন্ট ছিল না। বাসায় আম্মু আর আমার ছোট বোন মোটা আমরা তিনজন ছিলাম।আব্বু শহরের বাইরে একটা কাজে গিয়েছে তাই আজকে বাসায় ফিরবেনা। আমি আর আমার ছোট বোন লুডু খেলছিলাম হঠাৎ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ওর অনেকটা জ্বর উঠেছে, আর ওর বাসায় দেখার মতো কেউ নেই যে ওকে ওষুধ এনে দেবে। ওর এতটাই জ্বর উঠেছে যে নিজ থেকে ওষুধ আনবে তার শক্তিও ওর ছিল না। ওর ফ্যামিলি অন্য শহরে থাকে আর ও পড়াশোনার জন্য আমাদের শহরে নতুন এসেছে। যাই হোক, বাইরে তাকিয়ে দেখি বাতাসের গতি প্রায় অনেকটা কমেছে তাই আম্মুকে বললাম ওকে কিছু ওষুধ কিনে দিয়ে দেখে আসি। ওর বাসা থেকে আমার বাসায় প্রায় 20 মিনিটের পথ ছিল তাই আম্মু যেতে দিল আর বলল তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে।আমি এরপর তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলাম, বৃষ্টি আর ঝড়ের জন্য প্রায় সব দোকানই বন্ধ ছিল তার সাথে পুরো রাস্তা ফাঁকা ছিল। একটু দূরেই আমি একটা দোকান দেখতে পাই আমি তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে কিছু ওষুধ আর খাবার কিনে নেই। ঔষধ কেনার সময় হঠাৎ করে পিছনে চোখ পড়লে অনেক দূরে একটা গাছের পাশে একটা ছেলেকে দেখতে পাই ,কেমন যেন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বিষয়টাকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে ঔষধ নিয়ে চলে যাই, কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো যখন আমি সেই গাছটার কাছে আসি তখন কাউকে সেখানে দেখতে পাই না এমনকি তার অনেকটা দূর পর্যন্ত শুধু একটা ফাঁকা পরিত্যক্ত বাড়ি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি বিষয়টাকে আমার চোখের ভুল ভেবে আমার বান্ধবীর বাসায় চলে যাই। আমার বান্ধবীর নাম রিয়া,ওকে খাবার আর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে আসি। ওর জ্বর প্রায় কমে এসেছিল, তাই আমি ওর কাছে থেকে যেতে চাইলে ও আমাকে বারণ করে দেয়। তাই আমি না চাইতেও চলে আসি আর আসার সময় রিয়াকে বলি যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে ও যেন আমাকে ফোন করে। রিয়ার বাসা থেকে বের হতে প্রায় রাত আটটা বেজে গিয়েছিল এখন একটানা বৃষ্টি পড়তে ছিল তাই পুরো রাস্তয় একটাও গাড়ি ছিল না আমি সিদ্ধান্ত নেই হেঁটেই বাড়ি ফিরব,আর ২০ মিনিটেরই তো রাস্তা। এতক্ষণে কারেন্ট চলে এসেছিল তারপরও পুরো রাস্তা ফাঁকা থাকায় মনে কেমন যেন একটা ভয় কাজ করতে ছিল। মনে মনে ভাবতেছিলাম এখন সাথে যদি কেউ থাকতো তাহলে একটু সাহস পেতাম। হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ছেলে পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাক দেয়।আমি পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই, ছেলেটর দিক থেকে কেন যেন আমার চোখ সরছিল না যেমন লম্বা, তেমন সুদর্শন চেহারা আর তার থেকেও বেশি সুন্দর তার চোখ দুটো। হঠাৎ করে আমার মনে পড়ে যে এটা তো সেই ছেলে যাকে আমি সেই গাছের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। সেই ছেলেটার গায়ে লাল জামা পড়া থাকায় আমি চিনি ফেলি। কারণ আমার ভালো করে মনে আছে গাছের পাশে দাঁড়ানো সেই ছেলেটার গায়েও একই রঙের জামা ছিল। এরপর আমি এটা ভেবে অবাক হই যে ছেলেটা আমার নাম জানলো কিভাবে,কারণ আমি তাকে চিনতামও না তাই অনেকটা কৌতূহল নিয়েই জিজ্ঞেস করি যে সে আমার নাম জানলো কিভাবে? ছেলেটা উত্তর দেয় সে নাকি অনেকদিন আগে থেকেই আমাকে চিনে।ছেলেটা তার পরিচয় দেয় তার নাম নাকি আবির।এরপর আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করি যে, সে আমাকে ফলো করছে কিনা, ছেলেটি বলে ও আমাকে অনেক বছর ধরে চেনে কিন্তু কখনো সামনে আসেনি। কথাটি শুনে আমি একটু অবাক হয়ে যাই,যে এত বছর ধরে একটা ছেলে আমাকে চেনে কিন্তু আমি তাকে কখনো দেখিনি এটা কিভাবে সম্ভব। এরপর আমরা দুজন কথা বলতে বলতে হাঁটতে ছিলাম। কিছু দূর হাঁটার পর ঔষধের দোকানের সামনে এলে পরে দেখতে পাই দোকানদার দোকানটি বন্ধ করছে,আমি লক্ষ্য করি যে আবিরের সাথে কথা বলার সময় লোকটি খুব অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে হাঁটতে থাকি। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সেই গাছের কাছে চলে এসেছি আমি আবিরকে বিদায় দিচ্ছিলাম,তখন হঠাৎ করে কারেন্ট চলে যায় আর একটা দমকা হাওয়া এসে আমার ছাতাটা উড়িয়ে নিয়ে যায়। ফলে দেখি আমার ছাতাটা ভেঙ্গে গিয়েছে আর আজব বিষয় হলো কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই জোরে ঝড় শুরু হয়। আবির জানায় আমি চাইলে কিছু সময়ের জন্য ওর বাসায় থাকতে পারি ঝড় থামলে না হয় চলে যাব।অনেক জোরে ঝড় আর সাথে বজ্রপাত হওয়ায় আমিও আবিরের বাসায় কিছু সময় থাকার সিদ্ধান্ত নেই। হঠাৎ এমন ঝড় শুরু হওয়ায় কেমন যেন মনে হচ্ছিল প্রকৃতিও চাচ্ছে আমি থেকে যাই।