অধ্যায় ১: অজানা গ্রহের আহ্বান
সাল ২১৯৮। এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের পৃথিবী। জলবায়ু ধ্বংস, পারমাণবিক যুদ্ধ আর অজস্র ভাইরাসে গ্রহটি হয়ে পড়েছে প্রায় বাস্তুহীন। মানুষ খুঁজছে বাঁচার পথ। আর সেই আশার আলোয় শুরু হয় “প্রোজেক্ট হোয়ারিজন”—মানবজাতির বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা।
এ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ড. লায়না তাহির, একজন খ্যাতিমান নিউরোসায়েন্টিস্ট। ছোট ভাই মায়েলকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত লায়না এই মিশনে যোগ দেন, হয়তো কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন সেই শূন্যতার মধ্যে।
তাদের গন্তব্য ছিল এক অজানা গ্রহ—৯X-17b। দূর থেকে দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মতো, তবে কাছাকাছি গিয়ে বোঝা গেল—এটা স্বাভাবিক কোনো গ্রহ নয়। গাছপালা ছিল বেগুনি-নীল রঙের, বাতাসে হালকা বৈদ্যুতিক সাড়া, আর কোথাও নেই কোনো প্রাণীর উপস্থিতি।
প্রথম দলটি গ্রহে অবতরণ করে। কিছু সময় পর অদ্ভুত ঘটনা শুরু হয়। দলের সদস্যরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান ফিরে পেলে জানায়, তারা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ‘বাস্তবের মতো করে’ দেখা করেছে—কেউ মৃত স্ত্রী, কেউ হারানো সন্তান, কেউবা শৈশবের মা।
বিজ্ঞানীরা বুঝলেন, এই গ্রহের উদ্ভিদ বিশেষভাবে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরাল ওয়েভ স্ক্যান করে তাদের গভীর স্মৃতি বের করে নিচ্ছে। এবং সেগুলোকে রূপ দিচ্ছে বাস্তবসম অনুভবে। এটা যেন স্মৃতির এক জীবন্ত গ্রহ!
অধ্যায় ২: মস্তিষ্কের কারাগার
এই গ্রহের মূল কেন্দ্রে ছিল একটি বিরাট স্মৃতি-গাছ, যার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল সব কিছু। ড. লায়না সেখানে পৌঁছে তার ছোট ভাই মায়েলের সঙ্গে দেখা করেন। মায়েল ছিল জীবন্ত, হাসছে, দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সে জানত—এটা বাস্তব নয়।
গ্রহের মূল নিউরাল কোরে প্রবেশ করে, সে একটি মস্তিষ্ক-চালিত জীবন্ত সত্তার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। সেই সত্তা বলে—"আমি তোমাদের স্মৃতি, আমি তোমাদের শূন্যতা থেকে জন্ম নিয়েছি।"
কিন্তু এই কোর মানুষকে আটকে রাখতে চায়—সবাইকে তার নিজস্ব স্মৃতির মোহে হারিয়ে ফেলতে চায়। ড. লায়না সিদ্ধান্ত নেয়, এই কোর ধ্বংস করতেই হবে।
সে নিজের তৈরি করা একটি নিউরাল-ব্লাস্টার দিয়ে স্মৃতি-কোরে আঘাত হানে। বিকট শব্দ আর আলোয় সব কিছুর অবসান ঘটে। দল ফিরে আসে জাহাজে। কিন্তু অজান্তেই, নিউরাল কোরের একটি অংশ ঢুকে পড়ে লায়নার মস্তিষ্কে।
অধ্যায় ৩: অভ্যন্তরীণ গ্রহ
পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, ড. লায়না নিজের মধ্যে পরিবর্তন অনুভব করেন। তিনি স্বপ্নে মায়েলকে দেখতে পান, আবার শোনেন কোরের কণ্ঠস্বর—"তুমি যদি চাও, আমি সবাইকে সুখী করতে পারি। তাদের হারানো মানুষগুলো ফিরিয়ে দিতে পারি।"
লায়না বুঝলেন, কোর তাকে ব্যবহার করতে চাইছে, পৃথিবীতে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চায়। একধরনের স্মৃতি-সংক্রমণ ঘটাতে চায় যাতে সবাই তার ‘পরিপূর্ণ স্মৃতি’র মোহে হারিয়ে যায়।
কিন্তু লায়না জানেন, বাস্তবতা যতই কঠিন হোক, সেটিই সত্য। স্মৃতির ভুবন যতই সুখময় হোক, সেটি মিথ্যে।
তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজের মধ্যে থাকা কোরকে ধ্বংস করবেন। তিনি তার তৈরি একটি নিউরাল-ফায়ারওয়াল ব্যবহার করে নিজের মস্তিষ্ক থেকে কোরকে চিরতরে মুছে ফেলেন।
কোরের শেষ কথা ছিল, “তুমি অমর হতে পারতে…”
অধ্যায় ৪: সত্যের পথে
ছয় মাস পরে।
ড. লায়না এখন একটি শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে কাজ করেন। সেখানে সে সাহায্য করে সেই শিশুদের, যারা স্মৃতি ও মানসিক আঘাতে ভুগছে।
তার ডেস্কে ছোট ভাই মায়েলের একটি ছবি। নিচে লেখা—
“সে ছিল স্মৃতি। আমি হচ্ছি ভবিষ্যৎ।”
এক শিশু তাকে জিজ্ঞেস করে, “আপু, স্মৃতি কি সত্যি কথা বলে?”
লায়না হেসে বলে—
“স্মৃতি কথা বলে, কিন্তু সত্যি কিনা, সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হয়। কারণ সত্যিকারের জীবন স্মৃতির মধ্যে নয়—তা গড়ে তুলতে হয় নতুন করে, প্রতিদিন।”
শেষ।