বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটির চোখ অদ্ভুত। সেগুলো যেন আলো শুষে নিচ্ছে। তার হাতে ধরা সেই একই খাম—সাদা, ধূলিমাখা, আর গায়ে লেখা একই বাক্য:
“না খোলা পর্যন্ত জীবনের শান্তি মিলবে না…”
গোবিন্দ মাষ্টার হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর গলা শুকিয়ে গেছে, ঠোঁট কাঁপছে। শিশুটি ধীরে ধীরে ঘরে পা রাখল। চারপাশের বাতাস আরও ঠাণ্ডা, ভারী হয়ে উঠছে। ছায়াগুলো দেয়াল থেকে পিছিয়ে গেল, যেন ভয় পেয়েছে…
হঠাৎই ছায়া-গোবিন্দ চিৎকার করে উঠল—
“তাকে থামাও! ও খামটা খুললেই—খেলা নতুন করে শুরু হবে!”
শিশুটি এক দৃষ্টিতে তাকাল গোবিন্দের দিকে, বলল:
“তুমি যখন খাম ছুঁয়েছিলে, সময় থেমেছিল। এখন আমি ছুঁইলে, সময় মরবে।”
এক মুহূর্তে ঝড় উঠল ঘরের ভেতর। পুরোনো ঘড়িগুলো ভেঙে পড়ল, বইয়ের পাতা ছিঁড়ে উড়ে বেড়াতে লাগল, আর চারপাশে ছায়াগুলো ছটফট করতে থাকল, ভয়ঙ্কর আর্তনাদে কেঁপে উঠল গোটা ঘর।
শিশুটি খামটা খুলে ফেলল।
চারদিক নিঃস্তব্ধ। আর কোনো আওয়াজ নেই। গোবিন্দ মাষ্টার চোখ খুললেন।
তিনি এখন কোথায়? চারপাশে কুয়াশা। অনেক দূরে একটি একতলা পুরোনো বাড়ি, তার দরজায় ঝুলছে সাইনবোর্ড—
“ডাকঘর, দোহারপুর”
তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। দরজার কাছে গিয়ে দেখেন, ভেতরে কেউ একজন বসে আছে। পেছন ফিরে তাকানো সেই ছায়ামূর্তি উঠে দাঁড়ায়।
সে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়—আর গোবিন্দ চমকে যান।
ওটা সেই শিশুটি… কিন্তু এখন সে বৃদ্ধ… আর গলায় ঝোলানো টাই, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি—একেবারে তাঁর মতো!
শিশুটি হাসে। বলল—
“তুমি ফিরে এসেছো। এই খাম এখন তোমার। খেলার পালা আবার তোমার… সময় মরে না গোবিন্দ, শুধু রূপ পাল্টায়…”
আর ঠিক তখনই গোবিন্দ মাষ্টারের পকেটের ভেতর কিছু নড়ল। তিনি বের করে দেখলেন—একটা সাদা খাম। একদম সেই পুরোনো খাম…
এবং এবার তার উপর লেখা—
“শেষ খেলোয়াড়: গোবিন্দ মাষ্টার। এবার সময় তোমার…”
চলবে…