Posts

গল্প

আলোর নিচে অন্ধকার শেষ পর্ব:-০৮ লেখক:-বিদ্যুৎ

April 19, 2025

Op Biddut

37
View

গোবিন্দ মাষ্টার সাদা খামটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন। বাতাস স্থির, চারপাশে যেন শব্দহীনতা চেপে বসেছে। ছেলেটি অদৃশ্য, ছায়াগুলো নেই, কিন্তু তাঁর পেছনে যেন একেকটি নিঃশ্বাসে কেউ ফিসফিস করছে—

“এবার তুমিই শুরু, তুমিই শেষ…”

তিনি খামটা খোলার আগেই আচমকা ঘরটা দুলে উঠল। জানালা দিয়ে দেখা গেল বাইরের দুনিয়া বদলে গেছে—সব গাছ মৃত, আকাশ লালচে ছাইয়ের মতো, আর বাড়িগুলোর ছায়া যেন মাটির চেয়ে গাঢ়।

তিনি ধীরে ধীরে খামটা খুললেন।

তার ভেতরে ছিল কেবল একটি আয়না। ছোট, গোল আয়না। আর তার উপর লেখা:

“প্রতিটি ছায়ার জন্ম এক আত্মঘাতী সময় থেকে।”

হঠাৎ আয়নার কাঁচ কেঁপে উঠল। সেখানে দেখতে পেলেন—তাঁর মুখ নয়, বরং অগণিত মানুষ কাঁদছে, দৌড়াচ্ছে, সময়ের ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে। সেই ভিড়ের মাঝে তিনি নিজেকেও দেখলেন—একেক সময়ের গায়ে ছায়া গোঁজানো, তার চোখে মৃত আতঙ্ক।

গোবিন্দ মাষ্টার বুঝলেন—খাম ছিল এক ফাঁদ। প্রতিটি ছায়া আসলে একেকজন ভবিষ্যতের মানুষ, যারা নিজের অতীতের ভুল থেকে পালাতে গিয়ে সময়ের খাঁচায় বন্দি হয়ে গেছে।

আর তিনি?

তিনি শেষ নয়। তিনি হচ্ছেন সময়ের শুরু।

কারণ প্রথম সেই খাম তিনিই পাঠিয়েছিলেন—নিজের ভবিষ্যতের কাছে। যেদিন প্রথম ডাকঘরের কাজ শুরু করেছিলেন, সেদিন কৌতূহলে তৈরি করেছিলেন এই খাম, মজার ছলে। অথচ সেটা সময়ের ফাঁক দিয়ে ভবিষ্যতে চলে গিয়েছিল।

এবং যেই মুহূর্তে তিনি সেটা খুললেন, সময়ের চক্র শুরু হলো—নিজেই নিজের ফাঁদে আটকালেন।

গোবিন্দ মাষ্টার আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তাহলে এখন আমি কী করবো?”

আয়নার ভেতর থেকে সেই শিশুর কণ্ঠ এল—

“তুমি যদি নিজের ছায়া স্বীকার করো, তবে মুক্তি। যদি অস্বীকার করো, তবে চক্র চিরকাল চলবে…”

তিনি চোখ বন্ধ করলেন।

এক গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন—

“আমি স্বীকার করছি—আমি সময়কে ঘাঁটিয়েছি। আমি ভুল করেছি।”

এক চিলতে আলো জানালা ফুঁড়ে ঘরে ঢুকল। ঘড়ির কাঁটা আবার চলতে শুরু করল।

ঘরটা ফাঁকা। খাম নেই। আয়না নেই। ছায়াও নেই।

শুধু দেওয়ালে একটা পুরনো সাইনবোর্ড ঝুলছে—

“ডাকঘর: দোহারপুর (বন্ধ)”

আর দরজার বাইরে, খোলাপথে হেঁটে যাচ্ছে একজন মানুষ—চোখে শান্তি, মুখে অন্যমাত্রার বোধ।

নাম: গোবিন্দ মাষ্টার।

শেষ।

Comments

    Please login to post comment. Login