Posts

ভ্রমণ

রহস্যময় রেইনরা দ্বীপ -৩

April 20, 2025

Junayed al redoan

112
View

রেইনরার যুদ্ধ

(The War of Rainra)

অধ্যায় ১: মহাকাশ থেকে আগমন

রেইনরা দ্বীপের শান্ত পরিবেশের ওপর আকাশের রঙ বদলে গেল। প্রাকৃতিক অশান্তি—ঘন কুয়াশা, কালো মেঘ—শুরু হলো এক নতুন বিপদের সংকেত। রাহুল দ্বীপের রক্ষক হয়ে উঠলেও, তার সামনে একটা নতুন শত্রু—যা এতদিন পর্যন্ত অদেখা ছিল।

দূরের আকাশে একটি রহস্যময় জাহাজ ধীরে ধীরে ঢোকার শব্দ শোনা গেল। কোন সূর্য, কোন আলো ছড়ায় না, শুধু এক অন্ধকার বিকিরণ। এই জাহাজের মধ্যে থাকা শক্তি ছিল ভয়ংকর—অতুলনীয়, এবং তার পেছনে ছিল সেই পুরনো প্রতিশোধের গন্ধ।

“এরা কী? কোথা থেকে আসছে?” রাহুল জিজ্ঞেস করল, তার হাত শিরশির করে উঠছে।

“এই শক্তি আমরা জানতাম,” রেইনা তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “এরা হল ‘কালপথিক’—যারা সময় এবং স্মৃতি নিয়ে খেলা করে। তাদের প্রধান নেতা—‘জেনোথ’।”

“জেনোথ?” রাহুল শঙ্কিত হল। “তারা কি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী?”

“হ্যাঁ, এবং এখন তারা মহাকাশ থেকে এসেছে একেবারে রেইনরাকে শেষ করার জন্য। তারা আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্ব মুছে দিতে চায়, কারণ এই দ্বীপের প্রতি তাদের ঘৃণা রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, স্মৃতি আর সময়ের শক্তি অদৃশ্য, অশুভ।”

অধ্যায় ২: প্রথম আক্রমণ

এদিন সূর্য উঠতেই দ্বীপের আকাশে অমঙ্গলের আভাস ধরা পড়ল। কালপথিকের জাহাজ সরাসরি রেইনরার আকাশে প্রবেশ করল। রাহুল এবং রেইনা শত্রুদের আক্রমণের প্রস্তুতি নিল। রেইনা বলল, “তারা যদি দ্বীপে প্রবেশ করতে পারে, তবে এটা আমাদের জন্য শেষ হবে। তাদের শক্তি মহাকাশের, এবং তারা যেকোনো সময় আমাদের স্মৃতির শক্তিকে ধ্বংস করতে পারে।”

“তবে, আমাদের চিহ্নধারী শক্তি তো আছে!” রাহুল দৃঢ়ভাবে বলল।

“হ্যাঁ, কিন্তু তোমার শক্তি তাদের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকরী নয়,” রেইনা সতর্ক করে বলল। “তাদের প্রযুক্তি এবং শক্তি অনেক শক্তিশালী।”

এরপরই আকাশ থেকে বিশাল এক বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেল। কালপথিকরা তাদের শক্তিশালী রোবট বাহিনী দিয়ে দ্বীপের উপকূলে আক্রমণ শুরু করল। রেইনরা দ্বীপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৎক্ষণাৎ সক্রিয় করল, কিন্তু শত্রুদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে তা প্রভাবহীন।

“আমরা যতই লড়াই করি না কেন, তারা আমাদের অতিক্রম করবে। আমাদের একমাত্র উপায়—তাদের প্রধান শক্তি, জেনোথকে হারানো,” রাহুল বলল।

অধ্যায় ৩: জেনোথের মুখোমুখি

রাহুল এবং রেইনা দ্বীপের এক রহস্যময় প্রাচীন টাওয়ারে পৌঁছাল, যেখানে ‘ঘড়ির লোক’ এবং কালপথিকদের গোপন তথ্য লুকানো ছিল। টাওয়ারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল বিশাল এক তন্ত্র—একটি শক্তিশালী যন্ত্র, যা সময় এবং স্মৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করত।

জেনোথ, কালপথিকদের নেতা, তখনই তাদের সামনে উপস্থিত হল। তার চেহারা ছিল ভয়ংকর, তার চোখে অন্ধকারের গভীরতা, এবং তার হাতে ছিল এক পাথরের যন্ত্র—যা সময়ের গতি থামিয়ে দিতে সক্ষম।

“তোমরা কি মনে করো, তোমাদের এই শক্তি আমাকে হারাতে পারবে?” জেনোথ ঠান্ডা কণ্ঠে বলল। “আমার পেছনে রয়েছে মহাশক্তির চিরকালীন ইতিহাস। তোমরা শুধুই পুরনো স্মৃতি, যে স্মৃতি একদিন ধ্বংস হবে।”

রাহুল দাঁড়িয়ে রইল। “তুমি আমাদের স্মৃতির শক্তি বুঝতে পারবে না, জেনোথ। আমরা কোনো যন্ত্র নয়—আমরা মানুষ। আমাদের আবেগ, আমাদের অতীত, আমাদের ভালোবাসা—এই সব কিছুই আমাদের শক্তি। এবং আজ আমরা তোমাকে থামাবো।”

“এটা সম্ভব নয়,” জেনোথ ক্ষিপ্ত হয়ে বলল। “তোমরা যদি আমাকে থামাতে চাও, তবে তোমাকে তোমার স্মৃতি বিসর্জন দিতে হবে। তোমার নিজের অস্তিত্বকে মুছে ফেলতে হবে।”

এই কথায় রাহুলের মনোভাব দৃঢ় হয়ে উঠল। সে জানে, কালপথিকদের বিরুদ্ধে একমাত্র শক্তি তাদের নিজের হৃদয়ের শক্তি।

অধ্যায় ৪: সময়ের যুদ্ধ

যুদ্ধ শুরু হলো। রাহুল ও রেইনা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে কালপথিকদের রোবট বাহিনী এবং প্রযুক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিরোধ দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছিল না, কারণ জেনোথের পাথরের যন্ত্রের মাধ্যমে সময়ের গতি পরিবর্তন করা হচ্ছিল।

“এখন আমাদের একমাত্র সুযোগ—ঘড়ির যন্ত্রকে ধ্বংস করা,” রেইনা বলল। “তবে, এজন্য তোমাকে নিজের শক্তি সব সময়ের ওপরে রাখতে হবে। যন্ত্র ভেঙে ফেললে, জেনোথ হারাবে।”

রাহুল বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে গেল, এবং এক শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে সে পাথরের যন্ত্রটি ভেঙে ফেলল। জেনোথ চিৎকার করে উঠল, কিন্তু তার শক্তি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেল।

তবে যুদ্ধ এখানেই শেষ হয়নি। এখনো কিছু কালপথিক বাহিনী বেঁচে ছিল, যারা তাদের নেতার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিক্ষুব্ধ ছিল।

অধ্যায় ৫: রেইনরার নতুন সূচনা

বহু যুদ্ধ এবং যন্ত্র ধ্বংসের পর, রেইনরা দ্বীপ আবার শান্ত হলো। জেনোথ এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়েছে, এবং তাদের ধ্বংসাত্মক যন্ত্রগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।

রাহুল এবং রেইনা একসাথে দ্বীপের শীর্ষে দাঁড়িয়ে, নতুন সূর্যোদয়ের দিকে তাকালেন। “এটা ছিল আমাদের শেষ যুদ্ধ। রেইনরা এখন মুক্ত।”

“এখন আমাদের একটি নতুন দিক নেবার সময়,” রেইনা বলল। “রেইনরা শুধু একটি দ্বীপ নয়, এটা একটি জীবন্ত স্মৃতি। যে স্মৃতির মধ্যে রয়েছে অগণিত প্রজন্মের ইতিহাস, গর্ব এবং যন্ত্রণা। আমাদের দায়িত্ব শুধু এটিকে রক্ষা করা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটিকে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া।”

রাহুল মাথা নেড়ে বলল, “এখন আমাদের যুদ্ধ শেষ, কিন্তু আমাদের যাত্রা শুরু।”

শেষাংশ: ঐতিহ্যের গাঁথন

রেইনরা দ্বীপে শান্তি ফিরে এসেছে। নতুন প্রজন্ম এখানে এসে রেইনরার শক্তিকে নতুনভাবে অনুভব করেছে। রাহুল ও রেইনা তাদের দায়িত্ব পালন করতে থাকলেন—কিন্তু তারা জানে, স্মৃতির যুদ্ধে কখনোই শেষ হয় না।

মহাকাশে এখনও কালপথিকদের অস্তিত্ব অদৃশ্য হয়ে যায়নি। কিন্তু এখন তাদের একটি পথ স্পষ্ট—ভবিষ্যৎ নির্মাণ, অতীতের শক্তি এবং নৈতিকতার মধ্য দিয়ে।

রেইনরা একটি যুদ্ধের পরবর্তী নতুন জীবন শুরু করল, যেখানে স্মৃতি, শক্তি, এবং মানবতা সব একত্রিত হয়ে নতুন একটি যুগের সূচনা করবে।

Comments

    Please login to post comment. Login