২০ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা-১০০০
আমি গতকাল ভোর ৬ টায় কুমিল্লার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওনা হই। এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম কুমিল্লা যাওয়া। আমি ঘরকুনো মেয়ে, তেমন বাহিরে যাওয়া হয় না দরকার ছাড়া। কুমিল্লা গিয়েছিলাম বাবার সাথে একটি প্রয়োজনে। বাসে উঠার পর থেকেই আমার অনেক অস্থির লাগছিল কারণ কুমিল্লা সম্পর্কে আমার একটি সফট কর্নার আছে। আমি জানি না এর কারণ কি। গিয়ে পৌঁছাতে আমার প্রায় ২ ঘণ্টার মত লেগেছে। গিয়েছিলাম মূলত কুমিল্লা কোটবাড়িতে। কাজ শেষ করে যখন ফ্রি হয়েছি তখন প্রায় ১১:৩০ টা বাজে। ঢাকা ফিরে আসার আগে ইটাখোলা-মুড়া নামক এক জায়গা ঘুরেছি। ঘুরে বুঝতে পারলাম কুমিল্লা খুবই প্রাচীন জায়গা, হাজার বছরের ইতিহাস আছে এই শহরে। কুমিল্লা নিয়ে আমার লেখার মূল কারণ 'ইটাখোলা মুড়া' বা 'আমার প্রথম কুমিল্লা দেখা' না। এর পেছনের কারণ হলো কুমিল্লার মানুষ। ঢাকায় বড় হওয়ার সুবাদে আমি নানা জেলার নানান রকম মানুষের সাথে মিশেছি। নোয়াখালী, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, ঢাকাইয়া প্রায় সব অঞ্চলের মানুষের সাথে আমার সখ্যতা আছে। কিন্তু আমি প্রায় সবাইকেই বলতে শুনেছি যে কুমিল্লার মানুষ ইতর, স্বার্থপর, চালাক ইত্যাদি। কিন্তু আমি কুমিল্লা কোটবাড়ি বোর্ড বাজার যাওয়ার পর দেখি সবজি বিক্রেতা লোকেরা কিছু লাগবে কিনা বা আমরা ওয়াশরুম খুঁজছি কিনা, কোনো হেল্প লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করছিল। আমি বেশ অবাক হলাম কারণ কোনো জায়গায় সবজি বিক্রেতাদের যেচে সাহায্য করতে দেখি নি। এরপর একটি দোকানে গিয়েছিলাম শুকনো কিছু খাবার কিনার জন্য। দোকানদার খুবই ভালো আচরণ করেছে আর কিভাবে কোন জায়গা থেকে বাসে যাওয়া যাবে সব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপর আমরা যখন কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য কোনো রিকশা বা সিএনজি পাচ্ছিলাম না তখন হাটা ধরি। এক পথচারী মধ্যবয়স্ক লোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড আর কত দূর, তখন উনি নিজ উদ্যোগে রিকশা ভাড়া করে দিয়েছে।
আমি খুবই খুশি হয়েছি তাদের সাহায্য করার মনোভাব দেখে। কিছু মানুষ কুমিল্লা সম্পর্কে কেনো বাজে কথা বলে আমি জানি না। হয়তো কুমিল্লার কোনো মানুষ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এক/দুইজনের জন্য পুরো জেলার মানুষকে স্বার্থপর, ইতর বলাটা কি যুক্তিযুক্ত? আমি কুমিল্লার কিছু মানুষ দেখেছি যারা মিথ্যাবাদী আর স্বার্থপর। আবার অনেক মানুষ দেখেছি যারা অমায়িক। আমার প্রতি কুমিল্লায় যারা অমায়িক ব্যবহার করেছে তাদের সেভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারি নি কিন্তু আমি আমার মন থেকে তাদের জন্য দুআ করি। এরকম মানুষের জন্যই আমরা নতুন কোনো এলাকায় গিয়েও মনোবল হারাই না। আজকের লেখাটি সম্পূর্ণ আমার আবেগ থেকে লেখা। আমার মনের ভেতর যে সত্ত্বা আছে তাকে তৃপ্তি দেওয়ার জন্য লেখা। ভুল ত্রুটি মার্জনার চোখে দেখার অনুরোধ রইলো।