সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এস. এম. শুআইব ত্বাসীন এর মতামত :
সম্প্রতি বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম এবং তথাকথিত ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের দল এনসিপি সংবিধানের ৭০ ধারার পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তো চলুন ৭০ ধারা নিয়ে কিছু আলাপ দেওয়া যাক।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ ধারা অনেকটা রাজনৈতিক দলগুলোর অভিভাবকত্ব রক্ষায় তৈরি হয়েছিল—যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দলের আদর্শ থেকে সরে না যান। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এটি আজ গণতান্ত্রিক চর্চার অন্যতম বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৭০ ধারা অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য নিজের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে বা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সংসদ সদস্য কি কেবলমাত্র দলের প্রতিনিধি? নাকি তিনি জনগণেরও প্রতিনিধি?
এই ধারাটি সাংবিধানিকভাবে সাংসদের বিবেকের স্বাধীনতা হরণ করে। যেখানে পশ্চিমা গণতন্ত্রে এমপিরা দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধেও নিজের নির্বাচনী এলাকার জনগণের ইচ্ছা ও বিবেক অনুযায়ী মত দিতে পারেন, সেখানে আমাদের সংসদ সদস্যগণ বাধ্য থাকেন দলের হুইপ মেনে চলতে, ইভেন ইফ ইট গোস এগেইনস্ট দ্য ইন্টারেস্টস অব দেয়ার ওন পিপল।
৭০ ধারা সংসদকে কার্যত একটি “rubber stamp” বানিয়ে ফেলেছে। এতে বিরোধিতার সাংসদরা তো বটেই, ক্ষমতাসীন দলের অনেক এমপিও মুখ খুলতে পারেন না, কারণ নিজের অবস্থান জানানো মানেই পদ হারানো। এর ফলে সংসদে কার্যকর বিতর্ক বা জবাবদিহিতা দুর্লভ হয়ে উঠেছে।
অথচ একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন মতবিনিময়, তর্ক-বিতর্ক এবং ভিন্নমতের সহাবস্থান। ৭০ ধারা সেই পরিবেশকে বাঁধা দেয়, যার ফলে সংসদ একটি vibrant forum-এর বদলে পরিণত হয় দলনির্ভর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একপাক্ষিক যন্ত্রে।
গঠনমূলক সমাধানের দিকে তাকালে বলা যায়—ধারাটি পুরোপুরি বাতিল না করেও সংশোধনের সুযোগ আছে। যেমন, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া গেলে তাৎক্ষণিক সদস্যপদ হারানো নয় বরং সংশ্লিষ্ট দলের অভ্যন্তরীণ নীতিগত মূল্যায়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। কিংবা ‘বিশ্বাসভঙ্গজনিত দলত্যাগ’-এর স্পষ্ট সংজ্ঞা ও ব্যতিক্রমগুলো সংযোজন করা যেতে পারে।
৭০ ধারার আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে—আমরা কি দলনির্ভর রাজনীতি চাই, না জনগণনির্ভর রাজনীতি?
প্রশ্নটি এখন সময়োপযোগী এবং উত্তর খুঁজে পাওয়ার দায়িত্ব আমাদের প্রজন্মের কাঁধেই।