Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -৪০)

April 21, 2025

Boros Marika

37
View

তখন মুহূর্তটাতে সবার নিঃশ্বাস আটকে গেলো।
আরিয়ানের চোখে যেন আগুন জ্বলছে, কণ্ঠস্বর তীব্র হয়ে উঠেছে। সে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না—
তৃষার সামনে গিয়ে এক ঝটকায় তার হাত ধরে ফেললো।

“তুমি শুধু আমার, তৃষা! আমি কিছু মানি না, কারো কোনো কথা শুনবো না! তোমার উপর আমার হক আছে, সেটা কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।”

তার হাতের চাপ এতটাই শক্ত ছিলো যে তৃষা কেঁপে উঠলো।

সে এগিয়ে এসে তৃষার একদম কাছে চলে এলো—চোখের সামনে সেই চেনা মুখ, কিন্তু আজ যেন তৃষা তাকাতেও পারছে না।

আর তখনই মিস্টার আমান এক ধাক্কায় আরিয়ানকে সরিয়ে দিলো—

“একবার করেছেন ঠিক আছে—কারণ তখন আপনাদের বিয়ে হচ্ছিল। কিন্তু এখন আপনি যে মেয়ের দিকে এগোচ্ছেন, সে আমার স্ত্রী। আর আমার স্ত্রীর কাছে আসার সাহস করবেন না।”

তার চোখে তীব্র দৃঢ়তা। গলার স্বর নিচু, কিন্তু এতটাই ধারালো যে চারপাশে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এলো।

“আপনি যদি আবার আমার স্ত্রীর দিকে হাত বাড়ান, তাহলে আমি আমার সীমা ছাড়িয়ে যাবো।”

তৃষা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে পানি, কিন্তু এবার সে আর কাঁদছে না—সে শক্ত, অচঞ্চল।

সবার সামনে এই দৃশ্য, আরিয়ান যেন মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে গেলো।
কীভাবে এই অবস্থায় পৌঁছালো সবকিছু, সে নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।
আরিয়ান পেছনে এক পা সরিয়ে নিলো, তারপর দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।
তার নিশ্বাস ধীর না, তীব্র… যেন বুকের ভেতর কিছু একটা ফেটে যাচ্ছে।

“তৃষা… তুমি এটা কী করলে? তুমি এমন করতে পারলে? তুমি… আমার ছিলে…”
তার গলা কেঁপে উঠলো, চোখে আগুন আর অশ্রু একসাথে।

চারপাশের মানুষজনের উপস্থিতি আর কিছুই যেন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না—সে শুধু তৃষার চোখে তাকিয়ে ছিল, যেখানে আজ কোনো আবেগ নেই।

“তুমি তো জানো, আমার সবকিছু তুমি… আমি আসতে দেরি করেছিলাম ঠিক আছে, কিন্তু তুমি এমন করে অন্য কারো হয়ে যেতে পারো?”

আরিয়ান হঠাৎ নিজেকে হারিয়ে ফেললো—
চুল এলোমেলো করে ফেলছে, জামার বোতাম ছিঁড়ে ফেলছে একে একে। তার চোখ রক্তবর্ণ, কণ্ঠস্বর ভেঙে যাচ্ছে।

“তুমি কেনো এমন করলে তৃষা? কেনো? তুমি তো বলেছিলে—তুমি কাউকে ছেড়ে যাবে না… তুমি আমাকেই চেয়েছিলে… তাহলে আজ এই বিয়ে কেনো?”

তৃষা নিঃশব্দ, কিন্তু তার চোখে জমে থাকা কান্না ধীরে ধীরে গাল বেয়ে নামছে।
সে মনে মনে বলছে—

“তুমি কেনো এমন করলে আরিয়ান? কেনো ঠিক সময়ে এসে দাঁড়ালে না? আমি তো শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম… কিন্তু তুমি এলে না… তুমিই তো ভেঙে দিলে আমার সব বিশ্বাস…”

মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে পড়ে গেলো আরিয়ান—
পায়ের কাছে বসে পড়লো সে, দুই হাতে মাটি চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো—

“তৃষা…!!!”

কিন্তু তৃষা আর ফিরে তাকালো না…
তার নতুন জীবনের দরজা খুলে গেছে—কিন্তু তার ভিতরটা রয়ে গেছে একটাই প্রশ্নে ভরা—

“তুমি কেনো এমন করলা, আরিয়ান?”
তৃষা অনেকক্ষণ চুপচাপ ছিল, কিন্তু যখন সে দেখলো আরিয়ান হঠাৎ করে রাগে পাশের টেবিল থেকে একটা গ্লাস নিয়ে ধাক্কা মেরে ভেঙে ফেললো—
আর মুহূর্তেই সেই ভাঙা কাঁচ নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চেপে ধরলো,
তখন আর তৃষা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।

রক্ত পড়ছিল ফোয়ারা হয়ে—সবাই চমকে উঠলো, কেউ কিছু করতে পারছিল না।

তৃষা দৌঁড়ে গিয়ে আরিয়ানের সামনে দাঁড়াল—
তার চোখে হঠাৎ একধরনের অদ্ভুত মায়া, যন্ত্রণায় মিশে থাকা অস্বীকার করতে চাওয়া ভালোবাসা।

“তুমি পাগল নাকি আরিয়ান?”
সে কাঁপা গলায় বললো।

আরিয়ান কিছু বললো না, শুধু রক্তাক্ত হাতটা তৃষার দিকে বাড়িয়ে দিলো—
একটাও শব্দ নেই তার মুখে, শুধু চোখ দুটো বলছে—"তুমি চলে গেলে আমার আর কিছুই রইলো না…"

তৃষা তার হাতটা নিজের কোলের উপর নিয়ে খুব সাবধানে কাঁচের টুকরাগুলো বের করতে লাগলো।
তার নিজের চোখেও তখন অশ্রু, ঠোঁট দুটো কাঁপছিল।

তৃষা নিজের ওড়নাটাই ছিঁড়ে নিলো, খুব যত্ন করে ব্যান্ডেজ করলো ওর হাত।
তার ঠোঁটের কাঁপুনিতে একটাই প্রশ্ন—“তুমি কেনো এমন করছো, আরিয়ান?”

আরিয়ান ফিসফিস করে বললো,
“কারণ আমি এখনো বিশ্বাস করি, তৃষা শুধু আমার। আমার ছাড়া ও আর কারো হতে পারে না…”

এই মুহূর্তটা ঘরের পরিবেশ পুরো স্তব্ধ করে দিলো।
সবার চোখে বিস্ময়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্টের ছাপ ছিল মিস্টার আমান এর চোখে।
তিনি বুঝতে পারছিলেন—তৃষার চোখে সেই অনুভূতির ছায়া আজও জ্বলছে… যদিও সে মুখে কিছু বলছে না।

চলবে......

Comments

    Please login to post comment. Login