স্বামী স্ত্রী দুজনেই শুয়ে শুয়ে মোবাইল দেখছেন হঠাৎ করে স্ত্রী বলে উঠলো, 'অনেক দিন হলো তোমার আম্মা আমাদের বাসায় আসেন না। আব্বা মারা যাওয়ার পর তিনি একেবারে একা হয়ে গেছেন। আম্মাকে আসতে বলো না। আর তিনি যদি না আসতে পারেন তাহলে তুমি ছুটির দিন দেখে একদিন গিয়ে নিয়ে আসো না।'
- ঠিকই বলেছো অনেক দিন হয় আম্মারে দেখি না। আচ্ছা তুমি ভেবে বলছো তো আম্মাকে সত্যিই এ বাসায় আনবো? আম্মার সাথে তোমার বনিবনা হয় না। তিনিও তোমারে ছাড় দেন না আর তুমিও না। এরপর সব কথা আমার উপর ঝাড়ো। তখন মনে হয় সব দোষ যেন আমার। মাঝখান দিয়া আমি পড়ি ঝামেলা আর ফ্যাসাদে। এখন আর এইসব ঝামেলা নিতে মন চায় না। অফিসের কাজ তার উপর ফেসবুক সব মিলিয়ে যা তা অবস্থা। তাই আবারো বলছি যা বলবা বুইঝা শুইনা বইলো
- শোনো, এবার আর হবে না। সময় বদলেছে। আম্মা ঝামেলা করতে চাইলেও আমি চুপ থাকবো। কথা বাড়তে দেবো না। আর এবার আম্মা ঝামেলা করলে ওটাই কাজে লাগাবো।
- মানে?
- মানে বোঝা লাগবে না। যত তাড়াতাড়ি পারো আম্মাকে নিয়া আসো।
- তা আনবো যত দ্রুত সম্ভব । তবে আমার আরেকটা কথা তোমারে বলার আছে। তোমার আম্মাও তো নতুন এই বাসাটা নেয়ার পর মনে হয় আসেন নাই, তাই না?
- হুম, তা আসেন নাই। আসবে কেমন করে? বিয়ের পর থেকে তুমি তো মা'র সাথে তেমন ভালো করে কথাই বলো না। পাশে বইসা দুই চারটা সুবিধা অসুবিধার কথাও জানতে চাও না। ওনার ছোটো মেয়ের জামাই কী সম্মান দেয়, আদর যত্ন করে, আবার মা' কে নিয়া একসাথে বেড়াইতেও যায়। যখন মার সাথে রেশমীদের বাসায় যাই এসব তো আমি দেখি। তখন খুব খারাপ লাগে। আর মা'ও ভাবে তুমি মনে হয় তারে পছন্দ করো না বা বিরক্ত হও বাসায় আসলে। তাই তিনিও আসতে চান না। একদিন তো মা আমাকে জিজ্ঞাস-ই করে বসছেন, "জামাই মনে হয় তোদের বাসায় আমার বেড়াতে আসাটা তেমন পছন্দ করে না"
- আসলে তার আসা পছন্দ করি না বিষয়টা তেমন না। তিনি এত জোরে চেঁচিয়ে কথা বলেন যে মাঝে মাঝে শুনতে ভালো লাগে না তার উপর কিছু ম্যানারিজমেও সমস্যা আছে। বাসায় বাইরের লোকজন আসলে তাদের সামনে লজ্জায় পড়তে হয়।
- তাহলে এখন যে আসতে বলছো। মা তো আর বদলায় নাই। তার স্বভাব আচরণ তো আগের মতোই আছে। বরং বয়স আরো বেড়েছে এখন তো আরও বেশি বেশি...
- আচ্ছা অতো চিন্তা কোরো না। ওনার মেয়ের জামাই হিসেবে আমারও তো বয়স বেড়েছে। ধৈর্য শক্তিও বেড়েছে। অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি। এখন আর আগের মতো হবে না। তুমি দেখে নিও। বরং উল্টোই হবে।
- হুম, হলেই ভালো।
সামনের কোনো এক শুক্রবারে স্বামীটি তার মা'কে আনতে যায়। আসার পথেই স্ত্রীকে বলেন, "শোনো, আমরা এখন গাড়িতে। কাছাকাছি চলে আসছি। আর ত্রিশ মিনিটের মতো লাগতে পারে। তুমি রেডী থেকো।
দরজার কলিংবেল বাজতেই স্ত্রী দরজা খুলে দিলেন। হাতে ভিডিও স্ট্যান্ড আর বলছেন;
- বন্ধুরা, অনেক দিন পর আমার শ্বাশুড়ি মা বাসায় এলেন। তিনি আসবেন বলে আজ অনেক কিছু রান্না করেছি। শ্বাশুড়ি মায়ের পছন্দের সব খাবার। এই যে দেখুন আমার শ্বাশুড়ি মা। এখনও কী সুন্দর!
এবার স্বামীটি পাশ থেকে এসে বললেন, বন্ধুরা আপনাদের জন্য সামনে আরো চমক রয়েছে আর ক'দিন পরই আসবে আমার শ্বাশুড়ি মা। এরপর আমরা সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবো আর আপনাদের সাথে তা শেয়ার করবো। ততক্ষণ ভালো থাকুন। এখন মায়ের একটু যত্ন করি।
স্বামী স্ত্রী দুজনেই বাই বলে ভিডিও করা শেষ করলেন। ছেলে মাকে ভেতরে নিয়ে এলেন। মা কিছুই বুঝলেন না, কী হচ্ছে? অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন। শুধু ছেলেকে বলতে শুনলেন;
- ব্যাস, এখন আমাদের একটা নতুন কন্টেন্ট হলো। সত্যিই তোমার অনেক বুদ্ধি। এখন কয়েকদিন মা'কে নিয়ে কন্টেন্ট বানাও এরপর যখন তোমার মা আসবেন তখন আবার তাকে নিয়ে। তাহলেই ভিন্নতা আসবে। আর লোকে এসব আবেগী কন্টেন্ট বেশি পছন্দ করে ফলে...