নভোযাত্রা: নতুন পৃথিবীর খোঁজে
অধ্যায় ১: ডাক এসেছে মহাকাশ থেকে
ঢাকায় ফিরে আসার ঠিক এক মাস পর, এক গভীর রাতে, আমার ঘরে রাখা সেই ট্যাবলেটটি হঠাৎ জ্বলে উঠল। স্ক্রিনে লেখা—
“আবিদ, তোমার সময় এসেছে। গন্তব্য: নভোঘর-৩। প্রস্তুত হও। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে এসো কুয়াশা দ্বীপে।”
আমার হৃৎস্পন্দন বাড়তে লাগল। আমি জানতাম এই দিন আসবে, কিন্তু এত দ্রুত?
পরদিন ভোরে আবার সেই পুরোনো ঘাট, সেই কুয়াশার নৌকা, এবং সেই নিঃশব্দ যাত্রা। দ্বীপে পৌঁছতেই দেখি পুরো পরিবেশ বদলে গেছে। কুয়াশা নেই, এবার দ্বীপটি যেন একটি বিজ্ঞান-নগরী।
গাইড জানাল, “আজ রাতে যাত্রা শুরু হবে। তুমি যাচ্ছো নভোঘর-৩ গ্রহে—যেখানে প্রথম মানব উপনিবেশ তৈরি করা হবে।”
অধ্যায় ২: নভোযান ‘অস্ট্রা-১’
রাত ১০টা। দ্বীপের পাহাড়ের নিচে বিশাল এক গোপন প্ল্যাটফর্ম উন্মোচিত হলো। সেখানে দাঁড়িয়ে মহাকাশযান অস্ট্রা-১—মানবজাতির প্রথম দীর্ঘমেয়াদি আন্তঃনাক্ষত্রিক যান।
আমি সহ মোট ১২ জন অভিযাত্রী, যাদের সকলেই “কুয়াশা প্রকল্প” থেকে নির্বাচিত। আমরা সবাই আলাদা আলাদা দেশ থেকে, কিন্তু একসাথে নতুন পৃথিবীর স্বপ্নে বাঁধা।
যাত্রা শুরু হতেই পৃথিবী পেছনে পড়ে গেল। আমি জানালার পাশে বসে ছিলাম, মনে হচ্ছিল, আমি যেন নিজের পুরোনো জীবনকে বিদায় জানাচ্ছি।
অধ্যায় ৩: পথের মাঝে অজানা সংকেত
তৃতীয় দিনেই মহাকাশযান ক্যাপ্টেন রিমা আমাদের ডেকে বললেন, “আমরা একটি অজানা সংকেত পেয়েছি, যেটি এই রুটে থাকার কথা নয়।”
সংকেতটি ছিল একটি ছন্দময় শব্দবার্তা—
> “Where time is still, we wait and will.”
AI বিশ্লেষণ করে জানাল এটি কোনো বুদ্ধিমান সত্তার পাঠানো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কেউ বা কিছু আমাদের উদ্দেশে সংকেত পাঠাচ্ছে।
তখনই সিদ্ধান্ত হলো, আমরা গন্তব্যে যাওয়ার পথে এই সংকেত উৎসের দিকেও একবার যাত্রা করব।
অধ্যায় ৪: হারিয়ে যাওয়া উপনিবেশ
সংকেত অনুসরণ করে আমরা পৌঁছলাম এক অচেনা গ্রহে—নামহীন, তবে অদ্ভুতভাবে পৃথিবীর মতই পরিবেশ। সেখানে একটি পরিত্যক্ত ঘাঁটি খুঁজে পেলাম, যার দেয়ালে লেখা—“Mission Nova-71”।
ডেটাবেস থেকে জানা গেল, এই অভিযান ২০৭১ সালে পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তারপরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঘাঁটির ভেতরে ছিল মানুষের কঙ্কাল, অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—ঘণ্টায় সময় চলছিল মাত্র এক মিনিটের মতো ধীরে। এই গ্রহে সময় স্থবির।
আমরা বুঝলাম, এখানে এসেই তারা আটকে গিয়েছিল—চিরকাল!
ক্যাপ্টেন সিদ্ধান্ত নিলেন, দেরি না করে আমাদের আসল গন্তব্যে ফিরে যেতে হবে।
অধ্যায় ৫: নভোঘর-৩
৭ম দিনে আমরা পৌঁছালাম নভোঘর-৩। এটি একটি নীলাভ সবুজ গ্রহ, যেখানে বাতাস, পানি, আলো—সবই মানবজীবনের উপযোগী।
আমরা প্রথম দল হিসেবে নামলাম। আশ্চর্যজনকভাবে গ্রহটি প্রাণহীন, কিন্তু সেখানে ছিল বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামো—যেন কেউ এখানে আগে থেকেছে, অনেক আগেই।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে, পাহাড়ের গুহায় আমরা এক গ্লোইং-স্মৃতির পাথর খুঁজে পেলাম। স্পর্শ করতেই প্রতিটি অভিযাত্রীর মাথায় ভেসে উঠল ছবি, কণ্ঠ, অনুভব—অজানা প্রাণীর মস্তিষ্ক-ভিত্তিক যোগাযোগ!
এরা ছিল এক প্রাচীন সভ্যতা, যারা নিজেরাই পৃথিবীকে একসময় পর্যবেক্ষণ করত। তারা চায়, আমরা এখানে শিখি, যুদ্ধ না করি। তারা আমাদের ভবিষ্যতের “পর্যবেক্ষক” বানাতে চায়।
অধ্যায় ৬: নতুন পৃথিবীর শুরু
তিন মাস কেটে গেল নভোঘর-৩তে। আমরা একটি ছোট ঘাঁটি স্থাপন করেছি। গবেষণা চলছে পুরনো সভ্যতার নিদর্শন নিয়ে।
এক রাতে, আমি একা দাঁড়িয়ে ছিলাম পাহাড়চূড়ায়। আকাশজুড়ে তারারা ঝিকমিক করছে। আমার পাশে এসে দাঁড়াল রিমা, বলল,
“তুমি জানো, আবিদ? আমরা এখন ইতিহাসের অংশ।”
আমি বললাম, “না, আমরা হয়তো ভবিষ্যতের সূচনা।”
পেছনে ফেলে আসা পৃথিবী এখন শুধুই স্মৃতি। সামনে নতুন দিগন্ত, নতুন সম্ভাবনা। আর এই গ্রহ—নভোঘর-৩—হয়ে উঠেছে “নতুন পৃথিবী”।
শেষ: স্মৃতি ও যাত্রার শুরু
আমার সেই প্রথম কুয়াশার দ্বীপে পা রাখা থেকে আজ পর্যন্ত, প্রতিটি ধাপ ছিল এক অজানা সাহসিকতা। এখন আমি শুধু আবিদ নই, আমি একজন নির্বাচিত মানুষ, ভবিষ্যতের এক নতুন প্রজন্মের স্থপতি।
আমরা জানি না কেমন হবে পরবর্তী দিনগুলো, তবে আমরা প্রস্তুত। কারণ সত্যিকারের যাত্রা কখনোই শেষ হয় না—
তারা যেখানে জ্বলে, পথ সেখানেই তৈরি হয়।