Posts

উপন্যাস

ঐশ্বর্য পর্ব - ১৪

April 23, 2025

Md Kawsar

Original Author নূর -এ- কাউছার

Translated by পর্ব - ১৪

98
View

ঐশ্বর্য
পর্ব - ১৪ 
.
নূর -এ- কাউছার
.
চারিদিকে কোরবানির পশু জবাই করা হচ্ছে গ্রামের মানুষ খেয়াল করে কালি ঘাটের পানিতে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ভাসছে সকলের মনে একি প্রশ্ন পানিতে এতো রক্ত ভাসার কথা না কিনবা পশুর রক্তও পানিতে জাওয়ার কথা না। আকাশ কালিঘাটে এখনো নজর রাখে কারণ তার বিশ্বাস কালি ঘাটের বাস্তবতা এখনো তার অজানা আর সেই বাস্তবতা আরো ভয়ংকর। ঐশ্বর্য রহিম কে জিজ্ঞেস করলো সেদিন রাতের ঘটনা রহিম সরাসরি মানা করে দিলো, না ওই রাইতের কথা ভুইলা জান আর খালার নিষেধ আছে ওই রাইতের বিষয়ে কথা কইতে না করছে খালায় জান এইহান থিকা এই অবস্থায় আপনি বাইরে আইছেন খালা রাগ করবো। ঐশ্বর্য বুঝতে পারে এভাবে কিছুই জানতে পারবে না কিন্তু এবার তার মনে আরো বেশি খটকা লাগে কি হয়েছিল ওইদিন আমাকে বলা যাবে না আমারতো এটা জানতেই হবে যে করেই হোক। ঐশ্বর্য আসার সময় রহিমকে বলে আসে গাজরের হালুয়া রান্না করছে আম্মায় আমি বলে দিছি তুমি খেয়ে বাসায় নিয়ে যেও। রহিম বলল আমি গাজরের হালুয়া খাওয়া ছেইরা দিছি। ঐশ্বর্য বলল কেন বুবু নাই বইলা?
রহিম ঊর্মির কথা শুনে অবাক হয়ে যায় কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ঐশ্বর্য দ্রুত চলে আসে। সূর্য মাথার উপরে শান্তি আর ঐশ্বর্য বোরকা পরে নিলো রেহানা বাড়িতেই থাকবে তার শরীর ভালো না। বাড়ির পেছনে সুপারি বাগানের একদম ডান দিকে তাদের নিজেস্ব গুরুস্থান। তারা নুরুল রহমানের কবর জেয়ারত করে ঐশ্বর্য তার দাদুর কাছে ক্ষমা চায়। তার পর তারা গ্রামের গুরুস্থানে এসে হুমাইরার কবর জেয়ারত করে। চারিদিকে কোরবানির পশুর রক্ত। এইসব দেখে ঐশ্বর্যর ওই রাতের সেই বিভিশিকাময় দৃশ্যর কথা মনে পরে যায়। ঐশ্বর্য এবার বিরক্তি বোধ করতে শুরু করে এ কেমন কথা সেই রাতের ভয় আমাকে এখনো তারা করছে। জেয়ারতের পর তারা স্টেশনের দিকে রওনা দিলো গ্রামের বাজার থেকে একদম পূর্ব দিকে পুলিশ স্টেশন যেখানে যাওয়ার পথে কালি ঘাটের গেইট দেখা যায় তারা কালি ঘাটের সামনে দিয়ে জাওয়ার সময় খেয়াল করে লতিফ নামের পাগলটি গেইটের সামনে দারিয়ে ঘাটের বড় বট গাছটির উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য ঘাটের সামনে দারিয়ে পরে লতিফ পিছনে তাকিয়ে শান্তি কে দেখে চিতকার করে বলতে থাকে তর এক মাইয়ারে কালি ঘাট খাইছে আরেকটারে সাবধানে রাহিস নজরে কিন্তু পরছে। শান্তি ঐশ্বর্যকে বলে কিরে দারিয়ে পরলি যে! ঐশ্বর্য বলে লোকটা এমন করে বলল কেনো। শান্তি বলল পা চালা বলছি ঐশ্বর্য লতিফের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলো শান্তি বলল ওইটা রফিকের বাবা, ঐশ্বর্য চমকে উঠলো আর একদম নরম শুরে বলল আম্মা কি বলছো এইসব? শান্তি বলল হে আমি ঠিক বলেছি এটা রফিকের বাবা ঊর্মি আর রফিক চলে যাওয়ার পর প্রায় দু সপ্তাহের মতো লোকটিকে গ্রামের মানুষ দেখে নি সবাই ভেবে নিয়েছিলো ঊর্মি আর রফিকের সাথে সেও চলে গেছে। কিন্তু হটাত একদিন তাকে কালি ঘাটের সামনে দেখা যায় লোকটি পাগল হয়ে গেছে আমাকে তোর দাদুকে তোর বাবা দেখলেই এমন কথা বলে। কি বলবো লোকটাকে একা রেখে সবাই চলে গেছে শেষ ভরসা ছেলেটা ছিলো সেও ছেড়ে চলে গেছে এখন পাগল হয়ে গেছে। তাই তার কথা আর কানে নেই না। ঐশ্বর্যর মনে লোকটির কথাই ঘুর পাক খাচ্ছে, লোকটি কেনো এমন কথা বলবে বুবুর সাথে কালি ঘাটের কি সম্পর্ক এবার ঐশ্বর্য মনে মনে জেদ ধরে এবার তার কালি ঘাটের সম্পুর্ন রহস্য জানতেই হবে। তারা পুলিশ স্টেশনে ঢুকার আগে খেয়াল করলো গ্রামের কিছু মানুষ স্টেশনের সামনে বসে আছে ভেতরে ঢুকে রবি কনস্টেবল কে জিজ্ঞেস করলো এতো মানুষ কেনো? কনস্টেবল বলল এই এক সপ্তাহে চন্দনপুরে মানুষ গায়েব হয়ে অনেক পরিমাণে তাদের পরিবারের লোক আসে আর তাদের মধ্যেই কিছু লোক বাইরে দারিয়ে আছে। রবি বলল তো আপনারা কি একশন নিলেন উত্তরে কনস্টেবল বলল কি একশন নিবো গ্রামের মানুষ তো আমাদের উপর বিশ্বাসি করে না তাই কেইছ ফাইলও তেমন হয়নি স্যারও আর কিছু করতে পারেননি সবাই জমিদার গ্রাম প্রধান জাসদ মজুমদারের কাছে যায়। রবি বলল জাসদ মজুমদার ভালো লোক কিন্তু পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দেওয়া উচিত, আচ্ছা এস.পি আকাশ সাহেব আছেন? কনস্টেবল বলল না উনি কালি ঘাটের ডিউটিতে আছেন। রবি বলল ওহ আচ্ছা আমারা এসেছিলাম নওয়াজের সাথে দেখা করতে একটু লকাপ টা খুলে তাকে নিয়ে আসবেন? কনস্টেবল বলল উনি তো চলে গেছে কাল রাতেই। রবি, ঐশ্বর্য আর শান্তি তিন জনি অবাক হলো কে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে নওয়াজ কে? কনস্টেবল কে জিজ্ঞেস করলো রবি, কে নিয়ে গেলো তাকে?  কনস্টেবল উত্তর দিলো আমি দেখিনি তাদেরকে কিন্তু স্যার জানে। রবি বলল আমরা এখন আসি এই বিষয়ে আমি আপনার স্যারের সাথে কথা বলতে আসবো। বলে তারা স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয় বিকেল হয়ে গেছে ঐশ্বর্য বলল এখনি বাসায় চলে যাবো আরেকটু পরে যাই। আসলে ঐশ্বর্য মনে মনে ঠিক করেছে সে আজ তার বাবা মায়ের দন্ড ভেত করবে এই বিষয়ের তার বাবার সাথে কথাও বলে নিয়েচগে তার বাবা রাজি। সে তার বাবকে একটা ইশারা দিলো তার বাবা বুঝে যায় আর বলে আরে আমরা বাসায় যাচ্ছি নাতো আমরা এখন বড় মাঠের ওইদিকে নদীর তীরে নামবো শান্তিও আর মানা করলেন না তারা নদীর ধারে চলে আসে নদীর পুরোটা নামায় ছিলো সবুজ ঘাস আকাশ টা একদম পরিষ্কার সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে নদীটা চিক চিক করছে সূর্যের আলোর প্রতিফলনে তার সাথে বইছে ঠান্ডা দখিনা বাতাস তারা নদীর কাছে এসে দুটো পাল তোলা নৌকা দেখতে পায় একটিতে তারা পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পরে চারিদিকে শীতল ঠান্ডা বাতাস বইছে। তার পর তারা নানান কথা বলতে শুরু করে এই ফাকে ঐশ্বর্য উর্মির কথা তুলে বসে আর বলে, তুমরা একে অপরে কথা বলো না অথচ বুবু তুমাদের ঝামেলা মেটানোর জন্য বাড়ি ছেরেছে । কিছুক্ষনের জন্য যেনো সব নিরব হয়ে গেলো, শান্তি কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য বলল, আমি তুমাদের জোর করবো না আমাকে দেওয়া চিঠির শেষে বুবু একটা কথাই লেখছিলো, বাবা নাকি মাকে অনেক ভালোবাসে বাবা মায়ের ভালোবাসায় ক্ষত দেখা দিলে তুই তাদের ক্ষততে বিচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে অবিচ্ছেদের ঔষধ লাগিয়ে দিস এতোটকু বলে। ঐশ্বর্য ইউসুফ কে বলে চল সামনে যাই তুই আর আমি নদীর মাছ দেখবো। ঐশ্বর্য চলে যায় ইউসুফ কে নিয়ে তারা উপরে উঠে আসে আর তাদের কথা বলা দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলো। ঐশ্বর্য মনে মনে ভাবছে কি এক সুন্দর দৃশ্য এতো সুন্দর প্রকৃতির মাঝে একটি নৌকায় দুটি ভাঙা মন বসে আছে। তখনি ঐশ্বর্য খেয়াল করলো রহিন মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে ঐশ্বর্য রহিমকে ডাক দেয়। রহিম ঐশ্বর্য কে আর ইউসুফ কে দেখে আসচর্য হয় এই সময় ঐশ্বর্য এখানে কি করে! রহিম ঐশ্বর্যর কাছে দৌরে আসে আর জিজ্ঞেস করে এইনে কি করেন আপামনি? ঐশ্বর্য বলল আহ রহিম ভাই আপা ডাকতে মানা করছি না তবুও কেন আপা ডাকো আমি এইখানে গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এসেছি  অনেক দিন পর ঘুরতে বের হইছি আমাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর তাই না? রহিম বলল হ অনেক সুন্দর ঐশ্বর্য বলল বুবুও অনেক সুন্দর ছিলো তাই না? রহিম থ খেয়ে যায়। ঐশ্বর্য বলে কি বুবুর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলে যে রহিম বলে কই চুপ হইলাম বলে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে নিলো। ঐশ্বর্য বলল তুমার জন্যই আজ গাজরের হালুয়া রান্না করছে তুমি খুব পছন্দ করতা তাই বুবু আমাকে সব চিঠিতে বলে গেছে আরো একটা জিনিস আছে যেইটা বলা যাবে না। রহিম জিজ্ঞেস করতে থাকে কি সেইটা ঐশ্বর্য বলল বললাম তো বলা যাবে না রহিম বলতে লাগলো আপনের পাও ধরি বলেন। ঐশ্বর্য বলল রহিম ভাই কি হচ্ছে এইসব তুমি আমার বড় এইসব বলতে মানা করছি না আমি বলবো কিন্তু সর্থ আছে রহিম বলল কি সর্থ ঐশ্বর্য বলল তুমি ওই রাতের ঘটনা বলবা না ভালো কথা রফিক ভাইয়ের বাবার সাথে মানে লতিফ পাগলের সাথে কথা বলে দেখবা বুবু আর রফিক ভাইয়ের বিষয়ে কি বলে। রহিম বলল যা বলবেন তাই অইবো এখন বলেন। ঐশ্বর্য আবার বলল আরেকটা সর্থ রহিম কপাল কুছকে বলে আরো সর্ত? এবার ঐশ্বর্য মস্করা করে বলে হ আরো একটা তুমি আমারে আর আপা কইবা না আপনিও কইবা না বুঝছ। রহিম ঐশ্বর্যর মুখে আঞ্চলিক ভাষা শুনে হেসে দেয়। রহিম বলে আইচ্ছা ঐশ্বর্য কউ কি কইছে তুমার বুবু। ঐশ্বর্য বলল তুমি বুবুরে ভালোবাসতা তাই না? রহিম হেসে দেয় আর দৌড়ে চলে যায়। ঐশ্বর্য রহিমের দৌড় দেখে হাসতে থাকে আর বলতে থাকে আস্তে রহিম ভাই পরে যাবা। অপর দিকে শান্তি আর রবির মধ্যে ভাব হয়ে গেছে ঐশ্বর্য চলে জাওয়ার পর রবি শান্তির হাত ধরে বলে আমাকে আর শাস্তি দিও না তুমি চাইলে আমার উপর আজ প্রত্যেকটা মারের প্রতিশোধ নিতে পারো শান্তি কেদে চোখ বন্ধ করে কেদে দেয় রবি মুখে মলিন হাসি আর চোখে আসার আলো নিয়ে বলতে থাকে চুপ করে থেকো না কিছু একটা বলো তুমি তুমার প্রতিশোধ নিয়ে হলেও আমার সাথে কথা বলে আমাকে বোঝা মুক্ত করো। তুমি চাইলে আমি আজ নিজেকে মৃত্যুর বুকে বিলিয়ে দিবো আমাকে ক্ষমা করে দাও। শান্তি বলল এই কথাটা বলতে আপনার ৭ টি বছর লাগলো! রবি বলল কি করবো অভিমানটা বেশিই হয়েছিলো শান্তি বলল এই ৭ টি বছর এই কথা গুলো শোনার জন্য আমার মন আকুল হয়ে উঠেছিলো। ঐশ্বর্য দূর থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করছে একটি বিকেল শেষ হচ্ছে দুটি ভাঙা হৃদয়ের মিল দিয়ে। কিন্তু ঐশ্বর্য কে কেও দূর থেকে নজরে রাখছে তাকি ঐশ্বর্য জানবে?
এদিকে স্টেশনে এসে আকাশ রবি আর তার পরিবারের কথা শুনে পাগল হয়ে গেলো আর বলতে থাকলো তারে দেখার আরো একটা সুযোগ হারাইলাম গাড়ি বের করো রহমান বাড়িতে যেতে হবে। ঐশ্বর্য নিচে নেমে এলো আর বলল অন্ধকার হয়ে আসছে এখন আমরা রওনা হই চলো তারা উঠে আসবে এমন সময় খেয়াল করে নদিতে মানুষের কাটা হাত পা ভাসছে এটা দেখে ইউসুফ আর ঐশ্বর্য ভয় পেয়ে যায় তারা খেয়াল করে দেখলো এমন অনেক কাটা হাত পা নদীতে ভাসছে।
.
.
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 
পর্ব ১৫ (special episode) জলদি আসবে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ।

Comments

    Please login to post comment. Login