৩০জুন ,২০২২। অর্ধ বার্ষিকের সর্বশেষ পরীক্ষাটি সম্পন্ন হলো আজ। আহ! কী শান্তি! অপার আনন্দে ভেসে যেতে চাইল মন। মনে হতে লাগলো বড় একটা বোঝা কাঁধ থেকে নেমে গিয়েছে। পরীক্ষার পরপরই আমরা ঢাল-তলোয়ার (ব্যাট-স্টাম্প) নিয়ে নেমেপড়লাম যুদ্ধের ময়দানে (মাঠে)। খেলা শুরুর মুহূর্তে দেখতে পেলাম আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে কালো মেঘে এবং তৎক্ষণাৎ দূর থেকে শুনতে পেলাম মেঘের গর্জন। বুঝতে আর বাকিরইল না যে একটু পরই বৃষ্টি নামবে। খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই টুপটুপিয়ে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টিতে সবাই খেলে ফুটবল কিন্তু আমরা খেলছি ক্রিকেট। সুতরাং বোঝায় যাচ্ছে আমরা কতটা ক্রিকেটপ্রেমী। আমরা আসলেই ক্রিকেটপ্রেমী! না হলে কেউ ক্লাসটেস্টের মধ্যে ইন্টার হাউস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলার দুঃসাহস দেখায়! সেই টুর্নামেন্টে আবার আমরাই (জয়নুল আবেদিন হাউস) চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। জসীমউদ্দীনহাউসকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিরোপা পুনোরুদ্ধার করেছিলাম প্রায় ৫ বছর পর। সে গল্প না হয় অন্য কোনো দিন করা যাবে। এখন খেলায় আসি। আমি একটা বল ডানদিকে আলতো ছোঁয়ায় পাঠিয়ে এক রানের জন্য দৌড় দিলাম। সেই বল ঠেকানোর জন্য তাকি দিল এক দানবীয় ডাইভ। তবুও বলটিকে ঠেকাতে পারল না সে। এই ডাইভ যদি কেউ সচোক্ষে না দেখে থাকে তবে কার সাধ্য এর মর্ম উপলব্ধি করা! যাই হোক আমাদের দল বেশ ভালোই ব্যাটিং করল। আমার আর রাদিমের ভীত গড়া ইনিংস এবং আরিক ও তানজীমের ক্যামিও ইনিংসে ভর করে আমাদের সংগ্রহ দাঁড়ালো ৭ ওভারে ৮৪ রান। বিপক্ষ দলের জন্য ছুঁড়ে দিলাম ৮৫ রানের একটা জুতসই টার্গেট। বৃষ্টি তখনও ঝরেই যাচ্ছে ধীর গতিতে। আমাদের বেশ আটসাট বোলিং এর ফলে ওরা প্রথম ৪ ওভারে তুলল ৪০ রান। অবশিষ্ট ১৮ বলে ওদের প্রয়োজন ছিল ৪৫ রান। এরই মধ্যে তামিম ব্যাটিং এ ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই উইকেটের পিছন থেকে নিলাম এক দুর্দান্ত ক্যাচ। বৃষ্টির বোধ হয় আমাদের খেলা দেখে হিংসে হচ্ছিল, তাই সে পূর্বের তুলনায় জোরে বর্ষিত হতে লাগল।তবুও আমরা খেলা থামালাম না, খেলা চলতে লাগল সকল বাধাকে ছাপিয়ে। ফিল্ডিং করতে গিয়ে রাদিমের ধপাস করে আছাড় খাওয়া, তারপর হামাগুড়ি দিয়ে বল ধরে কিপারের(আমি) কাছে থ্রো করা, ডাবল রান নিতে গিয়ে মাঝপথে কাদার মধ্যে তাকির হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া, কাদাময় মাঠে রানআউট হওয়ার আনন্দে (অতি দুঃখে) পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে থাকা – এমন খন্ড খন্ড মুহূর্তে সবার অকৃত্রিম হাসিই বলে দিচ্ছিল আজ আমাদের মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ার দিন। তখন ম্যাচের আর ৬ বল বাকি, টানটান উত্তেজনা। শেষ ওভারেওদের দরকার আর ১৯ রান। ঠিক তখনই আকাশ তার মনের বাঁধ ভেঙে দিল। খেলা আর চলার মতো অবস্থায় থাকল না। আষাঢ়ের স্বরূপে ডিআরএমসি এর সবুজ আভা যেন ঠিকরে পড়ছিল ঐ সময়। বৃষ্টির এক একটি ফোঁটাকে মনে হচ্ছিল রৌপ্যের দানা। আমি আর তামিম একত্রে রওনা হলাম বাড়ির পথে। বৃষ্টিতে প্রথমবার ক্রিকেট খেলার অনুভূতি ছিল এককথায় বর্ণনাতীত।এসব অতুলনীয় মুহূর্তগুলো স্মৃতিপটে জমা থাকবে বহুদিন। তবে একটা আফসোস রয়েই গেল, দৃশ্যগুলো যদি ক্যামেরাবন্দি করতে পারতাম!
Comments
-
Lesan Ahmed 7 months ago
উপরোক্ত লেখাটি পছন্দ হলে আমার অন্যান্য লেখাগুলো পড়ে দেখার সাদর আমন্ত্রণ রইল।
-
Lesan Ahmed 7 months ago
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আপনাদের সমর্থন পেলে ইনশাআল্লাহ আরও ভালো লেখার চেষ্টা করব।
-
Lesan Ahmed 7 months ago
সত্যিই অসাধারণ ছিল সেই সব দিনগুলো।
-
Lesan Ahmed 7 months ago
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।