Posts

উপন্যাস

মনের আঙিনায় লাল

April 24, 2025

Ummay Habiba

Original Author Smrity

82
View

পর্ব - ১

মনের আঙিনায় লাল

উম্মে হাবিবা স্মৃতি

ধুর বাবা! মা-টা যে কী শুরু করলো! এই ঠান্ডার মধ্যে আর একটু ঘুমাতে দিলেও তো পারতো। কানের কাছে এসে চ্যাঁচাচ্ছে যেন আমি কুম্ভকর্ণের বংশধর। "কিরে আয়না, সেই কখন থেকে ডাকি তোর কানে যায় না?" - হ্যাঁ মা, যায়। কিন্তু উত্তর দেওয়ার মতো এনার্জি শরীরে কই?

"সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমানো ছাড়া কি কোনো কাজ আছে তোর?" - উফফ! মা বোঝে না যে এই ঘুমটা আমার কাছে একটা থেরাপি। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার একমাত্র উপায়। আর কাজ? হ্যাঁ, কাজ তো আছেই। স্বপ্ন দেখা একটা বিশাল কাজ, মা। কত নতুন নতুন আইডিয়া আসে ঘুমের ঘোরে!

"উঠ তাড়াতাড়ি, কলেজে যাবি না?" - যাবো তো অবশ্যই। কিন্তু আরেকটু যদি...প্লিজ! এই শীতসকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে একদম মন চাইছে না। মনে হচ্ছে যেন লেপের সঙ্গে আমার একটা গভীর প্রেম হয়ে গেছে, কিছুতেই ছাড়াছাড়ি করতে চাইছে না।

মা থামলেন বটে, তবে আমি জানি উনি আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছেন। ওনার জানা আছে, এই ঘুমন্ত মূর্তিকে জাগাতে হলে একটু সময় দিতে হয়। এক ঘণ্টা তো কিছুই না, মাঝে মাঝে মনে হয় একটা গোটা দিন লেগে যেতে পারে!

"এত ঘুম মানুষ কিভাবে ঘুমায়?" - আমিও মাঝে মাঝে ভাবি মা। এটা কি কোনো বিশেষ প্রতিভা? নাকি গত জন্মের কোনো অপূর্ণ ঘুম এই জন্মে পুষিয়ে নিচ্ছি? যাই হোক, আর বেশি ভাবলে তো ঘুমটাই ছুটে যাবে। তার চেয়ে বরং... আরেকটু চেষ্টা করি যদি চোখটা একটু লেগে যায়।আজকে কলেজে যাব না মা, ভালো লাগছে না। শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে।" আসলে সত্যি বলতে কী, আজ একটু বেশিই আলসেমি পাচ্ছে। আর তাছাড়া আজ তো তেমন কোনো জরুরি কাজও নেই। ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নিই। "তুমি যাও আর বিরক্ত করো না।"

কিন্তু মা কি আর সহজে ছাড়ার পাত্রী! শুরু করলেন তাঁর সেই চিরপরিচিত আবেগপূর্ণ ব্ল্যাকমেইল। "তোর বড় বাবারা আজ বাড়িতে আসছে, তুই একটু আমায় সাহায্য কর মা! আমি একা মানুষ, কি এত সব করতে পারি?" ব্যস! মায়ের এই একটাই কথা যথেষ্ট। বড় বাবার প্রতি আমার দুর্বলতা একটু বেশিই। বাবার থেকেও বেশি আদর করেন তিনি আমায়। তাই আর না করতে পারলাম না।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানা ছেড়ে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে মাকে রান্নাঘরের কাজে একটু সাহায্য করলাম। আজ কাজের মাসিও আসেনি, এটা আরেক ঝামেলা। বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়িটা একা হাতে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। কারণ আমার আব্বুরা দুই ভাই আর আমি হলাম এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে। তাই সবার আদরেই বড় হয়েছি, কেউ কখনো তেমন বকেও না।

বড় বাবা প্রায় দশ বছর আগে বিদেশে গিয়েছিলেন তাঁর বড় ছেলের পড়াশোনার জন্য। আর সেই ছেলে এখন বাংলাদেশের একজন নামীদামী বিজনেসম্যান! ওয়াও! তাহলে তো আমি রীতিমতো ভিআইপি হয়ে গেলাম! আজকেই গিয়ে আমার 'পঞ্চ বাহিনী'কে এই খবরটা জানাতে হবে।

কাজ করতে করতে প্রায় দুটো বেজে গেল। শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে আবার একটু ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। উঠলাম যখন, তখন রাত আটটা বাজে! আমি নিজেও জানি না আমি কিভাবে এত ঘুমাই! তবে শুনেছি সুখী মানুষেরা নাকি অনেক ঘুমায়! তাহলে তো আমিও সুখী মানুষ? আরে মারাত্মক! আমি সুখী মানুষ! একা একাই এইসব ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে বের হলাম।

দোতলার পুরোটাই শুধু ছোটদের জন্য বরাদ্দ। এখানে মোট ৫টি ঘর, একটা হলো আমার চাচাতো ভাই আদিল চৌধুরীর অভি। যে এখন অনেক বড় ব্যবসায়ী। আর তার ছোট বোন **আফরা চৌধুরী (আভা)**র ঘর। আমি আর আফরা একই ব্যাচের ছাত্রী, এবার আমরা একসাথে ভর্তি হবো। দক্ষিণের কোণার ঘরটা হলো আদিল ভাইয়ের। আমার তো ওনার চেহারাই মনে নেই, যদিও অনেক ছোটবেলায় চলে গেছিলো। শুনেছি উনি নাকি অনেক রাগী। আমি তো এইসব মানুষের ধারেকাছেও নাইরে বাবা। থাকুক নিজের মতো।

আমি আকাশ-পাতাল ভাবতা ভাবতেই আভার ঘরে ঢুকলাম, দেখলাম ও ওর সব জামাকাপড় কেবিনেটে ঢোকাচ্ছে। আমি বললাম, "কিরে আভা, আমাকে তো ভুলেই গেছিস, এসে আমাকে একবারও ডাকলি না? আমি কিন্তু রাগ করেছি!"

আভা বললো, "ওরে বাঁদরনী, তোকে গিয়ে আমরা সবাই ডেকেছি। ভাইয়াও গেছিলো তোকে ডাকতে, তুই যেমন গাধার মতো ঘুমাচ্ছিস তোকে কেউ তুলতে পারবে না। আবার এখন রাগ করছিস, নাটক! এই এমন করবি না বলে দিলাম, আমার কষ্ট হয় না বুঝি? আচ্ছা শোন, আমি গিয়ে তোকে কতগুলো জিনিসের লিস্ট করে দিয়েছিলাম, ওইগুলো এনেছিস?"

আভা বললো, "হ্যাঁ, কিন্তু লাগেজ তো ভাইয়ার রুমে। তুই একটু গিয়ে বল স্কাই কালারের লাগেজটা দিতে।"

আমি বললাম, "নারে আমি পারবো না। আমি তোর ভাই তো একটা জল্লাদ। আমার খুব ভয় করে... তুই যা!"

আভা বললো, "আর বলিস না রে, আমার ভাইটা গিয়ে কী... শিরায় শিরায় রাগ ছাড়া আর কিছু না। প্লিজ রে তুই যা... তোর সাথে তো দেখাও হয়নি, এদিকে এইসব ফেলে যেতে হবে। তার চেয়ে তুই যা... গিয়ে একটু নিয়ে আয়রে বোন।"

আমি টালবাহানা করে বললাম, "আচ্ছা, আমি নিয়ে আসছি।" আকাশ ভরা অনিচ্ছা নিয়ে গেলাম আদিল ভাইয়ের রুমে। রুমে গিয়ে দরজা নক করার আগেই দেখি দরজা ভেতর থেকে লক নেই। হালকা ধাক্কা দিলাম, অটো দরজা খুলে গেল। হালকা ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যাপার না। ভেতরে ঢুকলাম, আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে যাতে কেউ না বোঝে। ঠিক তখনই পিছন থেকে সেই পরিচিত মানুষটির কণ্ঠ!

profile picture

Generate Audio Overview

Comments

    Please login to post comment. Login