ফ্ল্যাশব্যাক শুরু হয়—
ঘরের ভেতরে নিঃশব্দে বসেছিল তারা দুইজন।
তৃষা ধীরে ধীরে আমানের দিকে তাকিয়ে বলেছিল,
"আপনি কি আমাকে কোনো দায় মেটানোর জন্য বা পেশারের কারণে বিয়ে করছেন? যদি তাই হয়, এখনো সময় আছে… আপনি মানা করে দিতে পারেন।"
মিস্টার আমান তৃষার চোখের গভীরতা ওদেখে এক মুহূর্ত থেমে গিয়ে খুব ঠান্ডা ও স্পষ্ট গলায় বলেছিল—
"না, তৃষা। আমি কোনো পেশারে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিইনি। আমার দাদি যখন বলেছেন, আমি তার কথার সম্মান রেখেছি। কিন্তু এর মানে এই না যে আমি তোমাকে পণবন্দি করে রাখবো। যদি কোনোদিন আরিয়ান ফিরে আসে, আর তুমি তার কাছে ফিরে যেতে চাও… আমি তোমাকে তখনি ডিভোর্স দিয়ে দিবো—নিজের হাতে তুলে দিবো তাকে, কোনো অভিযোগ ছাড়াই।"
এই কথাগুলো বলার সময় আমান চোখের কোনায় জমে থাকা আবেগ আড়াল করে রাখার চেষ্টা করছিল। আর তৃষা… সেই প্রথমবার একটু নীরব হয়ে চোখ নামিয়ে ফেলেছিল, কারণ সে বুঝে গিয়েছিল—এই মানুষটা অচেনা হলেও, তার ভিতরে এক অসীম বিশুদ্ধতা আছে।
তৃষার ভেতরকার সেই স্মৃতি আর বর্তমানের বাস্তবতা মিলেমিশে এক বিষণ্ন স্তব্ধতায় পরিণত হলো।
ঠিক তখনই আমান গভীরভাবে তাকিয়ে ছিল তৃষার চোখের দিকে। চারপাশটা নীরব, যেন সময় থমকে গেছে শুধু এই কথোপকথনের জন্য।
আমান বলল ধীরে, গভীর অথচ শান্ত কণ্ঠে—
"তৃষা, তুমি আমাকে এই মুহূর্তে বিয়ে করতে চাও নাকি আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করবে? আমি জানি, পরিস্থিতি সহজ না। কিন্তু আমি তোমাকে সাপোর্ট করবো—তুমি যেভাবেই সিদ্ধান্ত নাও না কেন।"
তৃষা চোখ নামিয়ে নিল, গলার স্বরটা কেঁপে উঠল—
"আমি আরিয়ানকে অনেক ভালোবাসতাম, মিস্টার আমান। অনেক বাধা পেরিয়ে, অনেক কষ্টে ওর সঙ্গে এই পর্যন্ত এসেছি। আজ যা হলো সেটা হয়তো কারো নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কিন্তু ভালোবাসা তো একদিনে শেষ হয়ে যায় না।"
তারপর সে একটু থেমে আবার বলল—
"আমি জানি, আর কখনও কাউকে এভাবে, এই রকম পাগলের মতো করে ভালোবাসতে পারবো না। আমি আপনাকে ঠকাতে চাই না। তাই বলছি, আপনি এখনো চাইলে ভেবে দেখতে পারেন… আমাকে বিয়ে করবেন কিনা।"
এই কথাগুলো শুনে আমান কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকল। তারপর একরাশ স্থিরতা নিয়ে বলল—
"আমার উত্তর আগেই দিয়েছি, তৃষা। আমি এই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছি মন থেকে, সম্মান থেকে। তোমার সিদ্ধান্ত যেমনই হোক, আমি সেটা মেনে নিতে প্রস্তুত।"
বর্তমানে ফিরে এলো দৃশ্য।
ঘরটা নিস্তব্ধ, শুধু হালকা বাতাসে পর্দা দুলছে। তৃষা চুপচাপ বসে ছিল সোফার কোণায়। আমান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ, তারপর ধীরে বলে উঠল,
"তৃষা, উঠে দাঁড়াও।"
তৃষা চমকে উঠলেও সেটা প্রকাশ করলো না। নিঃশব্দে, আস্তে আস্তে করে দাঁড়িয়ে গেল।
আমান এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলল,
"তুমি বিছানায় বসো, আমি রাতে সোফায় থাকবো। কিন্তু..."
তার চোখের দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠল,
"এই কথা দাদী যেন কোনোদিনও না জানে। কেউ যেন বুঝতে না পারে আমরা আলাদা থাকি। এটা আমি চাই না। আশা করি, এইটুকু দায়িত্ব তুমি ঠিকমতো পালন করবে।"
তৃষা কিছু বললো না, কেবল মাথা নিচু করে চুপচাপ বিছানার ধারে এসে বসে পড়লো।
আমান সোফায় গিয়ে বসল, আর ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো এক অদ্ভুত ভারী নিঃশব্দতা।
চলবে......