Posts

উপন্যাস

মাধুরী: অভিশপ্ত প্রেম কাহিনী (উপন্যাস – পর্ব ১)

April 25, 2025

Noor Mohammod

123
View

প্রথম অধ্যায়: চাঁদের আলোয় জন্ম এক অভিশাপের
পলাশপুর—একটি নিস্তব্ধ অথচ রহস্যময় গ্রাম। চারদিকে পলাশ ফুলের ছড়াছড়ি, যেন প্রকৃতি নিজেই প্রেমে পড়েছে। সেই গ্রামেই এক সন্ধ্যায় জন্ম নেয় মাধুরী। আকাশে ছিল পূর্ণিমার চাঁদ, বাতাসে এক অদ্ভুত গন্ধ, আর ঠিক সেই রাতেই ঘটে এক অনর্থ।
মাধুরীর জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মা মারা যান। কেউ বলে দুর্ভাগ্য, কেউ বলে অলৌকিক কিছু। কিন্তু গ্রামের বয়স্করা জানত, এমন কিছু ঘটতে চলেছিল। কারণ জন্মের আগে থেকেই "ডাইনি রাধা" ঘুরে বেড়াচ্ছিল সেই বাড়ির আশেপাশে।
রাধা, এককালে ছিলেন গ্রামের নামকরা ওঝা। পরে তাকে কেউ একাকী পাগলী বলে, কেউ ডাইনি। তার কথার গুরুত্ব কেউ দেয় না, তবু সে বলেছিল—
"এই মেয়েটা অভিশপ্ত। ওর চোখে বিষ আছে, প্রেমে আছে মৃত্যু।"
মাধুরীর চোখ বড়ো, গভীর। কিশোরী বয়সেই তার চাহনি এমন ছিল, যেন কারও আত্মা ছুঁয়ে যেতে পারে। গ্রামের ছেলেরা তাকে দেখে মুগ্ধ হতো, কিন্তু কিছুদিন পরেই তাদের চোখে নেমে আসতো শূন্যতা। কেউ চাকরি হারাতো, কেউ দুর্ভাগ্যে পড়ত, কেউবা হঠাৎ হারিয়ে যেত।
মাধুরী বুঝত না কেন তার আশেপাশে এমন ঘটে। সে নিজেকে গুটিয়ে রাখতো, মানুষের থেকে দূরে থাকতো। একমাত্র বন্ধু ছিল নদী। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সে নদীর ঘাটে বসেই সে নিজের মন খুলে দিত প্রকৃতির কাছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়: শহরের ছেলে, নদীর ধারে দেখা
একদিন গ্রীষ্মের ছুটিতে শহর থেকে গ্রামে আসে অভিষেক। সে ছিল আধুনিক এক তরুণ, সাহিত্যের ছাত্র। তার মা ছিলেন পলাশপুরের মেয়ে, যিনি বহু বছর আগে শহরে বিয়ে করে চলে যান। মা'র মৃত্যুর পরে সে প্রথমবার এল মায়ের শিকড় খুঁজতে।
পলাশপুর তার কাছে ছিল এক স্বপ্নপুরী। কিন্তু সেই স্বপ্নের ভিতরেই লুকিয়ে ছিল রহস্যময় চোখের এক কিশোরী—মাধুরী।
প্রথম দেখায় অভিষেক মাধুরীকে দেখে থমকে যায়। সে নদীর ঘাটে বসে ছিল, চুপচাপ পানিতে পা ডুবিয়ে। তার চুল উড়ছিল হাওয়ায়, আর মুখে ছিল একরাশ ক্লান্তি। অভিষেক কিছু বলতে পারেনি, শুধু তাকিয়ে ছিল।
মাধুরী চোখ তুলেই বুঝে গিয়েছিল—এই ছেলেটা আলাদা। তার চোখে ভয় ছিল না, বরং ছিল কৌতূহল, ছিল মুগ্ধতা।
তৃতীয় অধ্যায়: নিষেধের মধ্যে প্রেম
দিন কয়েকের মধ্যেই তারা কথা বলতে শুরু করল। প্রথমে কুশল বিনিময়, তারপর কবিতার আলোচনা, বই আদানপ্রদান, আর তারপর একদিন অভিষেক বলেই ফেলল—
"তোমার চোখে আমি ডুবে যেতে চাই, মাধুরী। তুমি কি জানো, তোমাকে দেখেই আমি আবার কবিতা লিখছি?"
মাধুরী চুপ করে ছিল। তার মনে চলছিল ঝড়। সে জানে, এই প্রেম হতে পারে না। সে জানে, তার ছোঁয়ায় প্রেম নয়, মৃত্যু নামে। তবুও সে কিছু বলল না, শুধু একটা ফ্যাকাশে হাসি দিল।
অভিষেক জানত না, সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে শত শত অশ্রু, এক অভিশপ্ত ভবিষ্যৎ।
সেদিন রাতে মাধুরী প্রথমবার ডাইনি রাধার ঘরে গিয়েছিল। রাধা চুপচাপ তাকিয়ে বলেছিল—
"তুই প্রেমে পড়েছিস। এখন যা হবে, তার জন্য তুই প্রস্তুত তো?"
মাধুরী কোনো উত্তর দেয়নি। চোখে শুধু একফোঁটা জল চিকচিক করছিল।
(চলবে…)

Comments

    Please login to post comment. Login