আমার দশ বছয় বয়সে আমার মা মারা যায়, আমার বাবা আমাকে মা ও বাবার আদর দিয়ে মানুষ করেছেন। আমার বাবার সাথে প্রতিনিয়ত আমার স্ত্রী খারাপ আচরন করে। সেটা আমি জানি ও শুনেছি কিন্তু আজ অফিস থেকে আসার পর কাজের মাসি আমাকে জানালো, আমার স্ত্রী রুপা নাকি বাবার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে।
মাসির কথায় আমি বিভ্রান্ত হলাম না। বাবা আমার স্ত্রীকে মেয়ের মতো ভালোবাসে, মেয়েরা বাবার ভালোবাসা উপেক্ষা করার সাহস পায় না। অথচ আমার স্ত্রী?
রাতে বাবার ঘরে গেলাম। গম্ভীর স্বরে বাবাকে বললাম "বাবা, রুপার সাথে আমার একসাথে বাস করা আর সম্ভব না।"
আমায় কথায় বাবা হকচকিয়ে বললেন "এসব কি কথা? দোষ যারই থাক, মিটিয়ে নাও। একসাথে বাস করবে না এসব কেমন কথা? মেয়েটার কি হবে, তাহলে!"
এসব বলে বাবা অনেকক্ষন আমাকে বোঝালেন। রুপা বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে বাবা নিশ্চয়ই আমায় এতো বোঝাতেন না। আমি বেশ বুঝতে পারলাম যে কাজের মাসি সংসারে একটা ঝামেলা সৃষ্টির জন্য হয়তো এমন কথাটা বলছে।
ঘরে গিয়ে রুপাকে বললাম "বাবার তো বয়স হয়েছে, তুমিও ওনাকে দেখার সময় পাও না, আমিও পাই না।বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসলে কেমন হয়?"
রুপা চোখ সরু করে বললো "ভালোই তো হয়। ওখানে বাবা গল্প করার জন্য অনেক মানুষ পাবে!"
বৃদ্ধাশ্রমে গেলে গল্প করার অনেকে পাবে এটা ঠিক। এই বয়সে গল্প করার লোক দরকার। পরেরদিন সকালে রুপাকে বললাম "দ্রুত রেডি হও, বৃদ্ধাশ্রম যেতে হবে।"
স্ত্রী কিছুটা বিরক্ত মুখে বললো "আচ্ছা"
গাড়িতে বসতে বসতে রুপা বললো "বাবা কোথায়?"
"তুমি বসো, বাবা আসছে"
রুপা গাড়িতে বসলো। গাড়ি থামলো রুপাদের বাড়ির সামনে। রুপা বিষ্মিত হয়ে বললো "আমাদের বাড়িতে নিয়ে এলে কেন?"
"তোমার বাবা, মা-ও তো বৃদ্ধ। তাই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলাম। ওনাদের গল্প করার লোক প্রয়োজন। দ্রুত ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে।"
রুপা অনেক আকুতি মিনতি করলো। আমি আর শুনলাম না। যে মেয়ে বাবার ভালোবাসা বুঝতে পারে না সে কাউকেই ভালোবাসার যোগ্যতা রাখে না।