Posts

গল্প

মায়ের আচল

April 27, 2025

Tahiyan ahmed Kabbo

72
View

---

**গল্পের নাম: মায়ের আঁচল**
লেখক:-তাহিয়ান আহমেদ কাব্য

রোদেলা দুপুরে গ্রামের সরু মেঠোপথ দিয়ে একাকী হেঁটে যাচ্ছিল শুভ। শহর থেকে ফিরে আসছে অনেক বছর পর। ছেলেবেলায় যে মাটিতে খেলেছে, সেই পথ এখনো একই আছে, শুধু শুভ বদলে গেছে। শহরের চাকচিক্য তাকে অনেক কিছু দিয়েছে—ডিগ্রি, সম্মান, বড় চাকরি। কিন্তু এক টুকরো শান্তি কেড়ে নিয়েছে। আজ তাই সব কিছু ছেড়ে, বুকের গভীরে জমে থাকা একটুকরো ভালোবাসা খুঁজে ফিরছে সে—মা'কে।

মা, যার স্পর্শ একফোঁটা শিশিরের মতো নির্মল।  
মা, যার দুঃশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ত, যখন শুভ একটু দেরি করত স্কুল থেকে ফিরতে।  
মা, যার হাতে রান্না করা ভাতের গন্ধে এখনো শুভর মন কেঁপে ওঠে।

শুভ যখন বাড়ির গেটে পৌঁছালো, দেখে বাড়িটা আগের মতো নেই। দেয়ালের রং ফ্যাকাসে, উঠোনের কোণে আগাছা, জানালার কপাট আধা ভাঙা। তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। দরজার সামনে এসে থামল। ভেতর থেকে কারো ক্ষীণ কণ্ঠ শুনতে পেল—  
"কে রে? শুভ কি?"

শুভর চোখ অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে গেল। মা! এতদিন পরও, এত বছর পরও, কণ্ঠস্বর চিনতে ভুল হলো না।  
মা লাঠিতে ভর দিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছেন। চুলে পাক ধরেছে, শরীর নুয়ে গেছে, কিন্তু মায়া মাখা সেই মুখ এখনো অটুট। শুভ দৌড়ে এসে মায়ের পায়ে মাথা রেখে কেঁদে ফেলল। মা তার মাথায় হাত রাখলেন—নরম, স্নেহমাখা, আশীর্বাদী ছোঁয়া।

"কেমন আছিস রে, বাছা?"  
মা জিজ্ঞেস করলেন, কণ্ঠে হাজার বছরের ভালোবাসা।

"ভালো নেই, মা। তোর ছাড়া কোনোদিন ভালো থাকতে পারিনি।"

মা কোনো কথা বললেন না। শুধু শুভকে টেনে নিলেন তার শুকনো বুকে। সেই বুক, যেখানে একসময় শুভ ঘুমোত নিশ্চিন্তে, দুনিয়ার সব ভয় ভুলে।

বিকেলে মায়ের হাতে রান্না করা খিচুড়ি খেতে খেতে শুভ ঠিক করল, এবার আর কোথাও যাবে না।  
শহরের চাকচিক্য তার মাকে ফিরিয়ে দেবে না।  
এই মাটির গন্ধ, মায়ের চোখের মায়া—এটাই তার সত্যিকারের সম্পদ।

সন্ধ্যার হিমেল হাওয়ায় মা আর ছেলে উঠোনে বসে। আকাশভরা তারা। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ছোটবেলার গল্প বলছেন। শুভ চোখ বন্ধ করে শুনছে। তার বুক ভরে উঠছে গভীর তৃপ্তিতে। মনে হচ্ছে, সে যেন আবার সেই ছোট্ট ছেলেটি হয়ে গেছে, যে কেবল মায়ের আঁচলের নিচে নিরাপদ।

**শেষ।**

---

Comments

    Please login to post comment. Login