‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কবিতার জন্য পরিচিত কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাত ৯টায় জার্মানির রাজধানী বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
দাউদ হায়দার বার্লিনে একটি ভবনের ১২ তলায় একটি ফ্লাটে একা থাকতেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে জ্ঞান হারান তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তার মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই সময় তাকে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল এবং কৃত্রিম উপায়ে নলের সাহায্যে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জ্ঞান ফিরলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। পরবর্তীতে ‘কৃত্রিম কোমা’ থেকে তাকে সাধারণ কোমায় রাখা হয় এবং শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাকে নিউরোলজি বা স্নায়বিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর গত মার্চে বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ক্লিনিকেই মারা যান তিনি।
দাউদ হায়দার সত্তরের দশকের শুরুর দিকে দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ নামের একটি কবিতা ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় এবং ১১ মার্চ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
১৯৭৪ সালের ২১ মে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি ১৩ বছর কলকাতায় ছিলেন। পরে নোবেলজয়ী জার্মান লেখক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালে জার্মানিতে যান তিনি। তখন থেকেই বার্লিনে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, দাউদ হায়দার ১৯৫২ সালে পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর লেখালেখির কারণে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হওয়া প্রথম লেখক তিনি। ৫০ বছর ধরে নির্বাসনে থাকলেও কখনোই দেশে আসতে পারেননি।