Posts

গল্প

ছবির নাকি বিয়ে !

April 29, 2025

সুকান্ত সোম

89
View

“কিরে ছবি তোকে নাকি আজ বরপক্ষ দেখতি আসবি?” বলেই রহিমের মা মুখ টিপে হাসি দিয়ে চলে যায় । বরপক্ষ দেখতে আসার পূর্বে অনেক দাদি-নানি সম্পর্কিত আত্নীয়রা এভাবে টিপ্পনি কাটে, হাসি দেয় এক্ষেত্রে আর দশটা মেয়ের মনে যেমনটা লজ্জা মিশ্রিত আনন্দ উঁকি দেয় তেমনটা ছবির ক্ষেত্রে হয়নি বরং সেখানে অস্বস্তির মাত্রায় বেশী ছিল । “কি ভাগ্য নিয়েই না জন্মগ্রহন করেছিলাম”এ কথায় ছবি ভাবতে থাকে । তাঁর মনে আরো কত রকমের ভাবনাই না উঁকি দিতে থাকে । এ দিকে ছবি তার দুঃখের ভাবনা শেষ করতে করতে আমরা ছবির ছোট্ট একটা পরিচয় পর্ব সেরে ফেলি ।

তার পুরো নাম মোছাঃ ছবি খাতুন । বাবা-মা তার উভয়ই বর্তমান । বাবা বাবু ঘটক এর ভাষ্য মতে, নিজ উপজেলাতে তিনি বিখ্যাত ,বিয়ে-সাদি জুড়ি দিতে অত্র উপজেলাতে আর ২য় ঘটক নাই । ঘটকালি করতে যেয়ে ভদ্র সমাজে উঠা বসা মারফত দু-একটি ইংরেজি শব্দও তার জানা ছিল । তাই সে ইংরেজিতেও দক্ষ । আর ওদিকে ছবির মায়ের নাম আমার জানা নাই । ভাগ্যভালো এইযে , এইখানে তা আবশ্যকও না। তবে তার মত ভাল মানুষ সমাজে পাওয়া মুশকিল । এই মতামত তার নিজের না আবার আমারও না ,সমাজেরই প্রত্যয়নকৃত সুতরাং তিনি ভাল। তিনি পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন । ছবি ছাড়াও তাদের আরও তিনটি ছেলে সন্তান আছে । তারা সবাই স্ব স্ব কাজে নিযুক্ত । ছবির সাথে তাদের যত না ভাই-বোনের সম্পর্ক তার চেয়েও শোষণ-শাসনের সম্পর্ক বিদ্যমান । আমরা এখানে কেবল ছবির কথায় বলব ,অন্যরা খুব একটা প্রয়োজনীয় না । ছবির চুল মাথা হতে পা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে । তার কথার তেজও তার চুলের চেয়ে কোন অংশে কম না । কম বলতে যা তার ঐ উচ্চতা । উচ্চতা আর কত ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি । এই উচ্চতার জন্যই হোক আর অভাবের জন্যই হোক ছবি আর বিদ্যালয় মুখি হতে পারেনি । তাকে সেই ছোট বেলাতেই কলমের বদলে ছাগল চড়াবার ছড়ি হাতে নিতে হয়েছিল এবং অদ্যবদি তাকে সেই ছড়ি আর ফেলতে হয়নি । এর মাঝে ছবির জীবনে প্রেম ভালবাসার প্রবৃত্তি কখনো উঁকি দিয়েছিল কিনা তা জানা হয়নি । লেখক হিসেবে হয়তো বানিয়ে দু-চার ছত্র লিখে দিতে পারতাম ;কিন্তু পারিনা এই ভয়ে যে ,ছবিকে না আবার মানুষের মুখের টিপ্পনি দেখতে হয় । মানুষ হয়ে মানুষের এই ব্যবহার সহ্য করা কঠিন ,আর দুঃখি মানুষের বেলায় তা যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ।

“কিরে ছবি আজ নাকি বরপক্ষ তোকে দেখতে আসছে ? তা ঘটক কে তুই না তোর বাপ” এই বলে আবার মানুষের হাসাহাসিতে ছবি বাস্তবতার জগতে ফিরে আসে ।

বরপক্ষ ছবিকে যখন দেখতে আসলো তখন যেন মনে হচ্ছে গ্রামে নায়ক-নায়িকার শুটিং চলছে । গ্রামের লোকজন বিশেষ করে কতিপয় মহিলা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেছিল । দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিল । কারণ হিসেবে দেখতে পাওয়া গেল বরের উচ্চতাও তার থেকে বেশী না ,প্রায় দুজনাই সমান । বরপক্ষের সাথে আসা লোকজন অবশেষে বিব্রত হয়ে মেয়েকে পছন্দ হয়েছে কি হয়নি তা পরে জানাবে বলে চলে যায় । ওদিকে ছবির চাপা কান্নায় মনের আকাশ মেঘলা হলেও প্রতিবেশীদের একেকটি মুখের হাসি যেন চৈত্র মাসের দুপুরের সুর্য ।

ছবির কান্না ছাগলের উপর ছড়ি ঘুরাতেই থেমে গেছে ।থামেনি কেবল প্রতিবেশীদের মুখের হাসি ।মাঝে মাঝেই সে হাসির মাত্রা বেড়ে যায় ,যখন ছবিকে নিয়ে কেউ গল্পের উদ্বোধন করে দেয় । এসব শুনে ছবির মনের অবস্থা কি হয় তা আর জানা হয়নি ।

Comments

    Please login to post comment. Login