গল্প: "জীবনের মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া"
যেই দিনের গল্প শুরু করি, সেইদিনের আকাশ ছিল ধূসর। পুষ্প তার কফি হাতে জানালার পাশে বসে ছিল। তার একাকীত্ব আজ যেন অন্যদিনের চেয়ে বেশি গভীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আর ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় তলিয়ে যেতে যেতে সে ভাবছিল, জীবনের পথে এগোনোর মধ্যে কি সত্যি কোনো অর্থ আছে?
তখনই তার জীবনে আসে জিম। জিমের সাথে প্রথম পরিচয় হয় লাইব্রেরিতে। সে ছিল একজন স্বপ্নবাজ তরুণ, নিজের হাতে একদিন বিশাল কিছু তৈরি করার চিন্তা নিয়ে জীবন যাপন করত। জিমের চোখে এমন এক আলোর ঝলকানি ছিল যে পুষ্পের জীবনের ধূসরতা মুছে দিতে পারে। তাদের কথোপকথন শুরু হয় ছোট ছোট বিষয়ের মাধ্যমে—কবি নজরুল, বিজ্ঞান, আর পৃথিবীর রহস্য।
সময় যেন থমকে গিয়েছিল। তাদের কথায় আর দৃষ্টিতে যেন জীবনের সব ব্যাথা লুকিয়ে ছিল। প্রতিদিন তারা একসাথে সময় কাটাতো। তাদের মধ্যে এতটাই গভীর ভালোবাসা জন্ম নেয় যে, তারা ভেবেছিল, আর কিছুই তাদের জীবন থেকে আলাদা করতে পারবে না।
কিন্তু জীবন তো এমন সহজ সরল পথে চলে না। একদিন পুষ্প জানতে পারে যে জিমের জীবনের পথে সে নিজেকে এক অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। জিম একটি আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ পেয়েছে এবং তাকে আমেরিকা চলে যেতে হবে। পুষ্প তার সব সাহস একত্র করে জিমকে বলেছিল, "তুমি চলে যাও, কিন্তু আমার হৃদয়ে চিরকাল থাকবে।"
জিম এক চিঠি লিখে রেখে যায় পুষ্পের জন্য। চিঠিতে লেখা ছিল, "জীবন আমাদের আলাদা করতে পারে, কিন্তু তোমার চোখের সেই মায়া কখনো মুছে ফেলতে পারবে না। তুমি আমার জীবনের এমন এক অধ্যায়, যা কখনো শেষ হবে না।"
পুষ্প সেই চিঠি পড়ে দিনের পর দিন জিমকে অনুভব করত। বছর গড়াতে থাকে। পুষ্প নিজের জীবনের মাঝে আবার খুঁজে পায় নতুন অর্থ। সে একটি বই লিখে, যার নাম দেয় "হারিয়ে যাওয়া অধ্যায়।"
যেদিন বইটি প্রকাশিত হয়, সেদিন লাইব্রেরির এক কোণে জিম দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে জল আর মুখে এক অদ্ভুত হাসি। কিন্তু তারা আর কখনো কথা বলেনি। তাদের ভালোবাসার গল্প জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করলেও, তা একটি অধ্যায় হয়েই থেকে যায়।
জীবনের মাঝখানে হারিয়ে গেলেও, তাদের ভালোবাসা যেন শেষ হয় না।