অধ্যায় ১: পরিচয়
সায়ন্তিকা আর আরিয়ানের প্রথম দেখা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে। দুজনেই ভিন্ন ধরণের মানুষ—সায়ন্তিকা শান্ত, একাকী; আরিয়ান প্রাণবন্ত, সাহসী।
তবে একটা জিনিসে তারা ছিল অভিন্ন—ভালোবাসা।
সায়ন্তিকা ভালোবাসত কবিতা, আরিয়ান ভালোবাসত মানুষ। প্রথমদিনেই সে বলেছিল—
"তোমার চোখে যেন বিষণ্ন একটা গল্প লুকিয়ে আছে। কেউ বুঝেছে কখনো?"
সায়ন্তিকা চমকে উঠেছিল। এত বছরেও কেউ তার চোখের ভিতরের কষ্ট পড়তে পারেনি। আরিয়ান পেরেছিল।
অধ্যায় ২: প্রেমের শুরু
দিন গড়াতে লাগল। আরিয়ান প্রতিদিন এক টুকরো কবিতা নিয়ে আসত সায়ন্তিকার জন্য। লাইব্রেরির কর্নারে বসে তারা কবিতা পড়ত, চুপ করে একে অপরের মুখ দেখত।
সে এক নীরব প্রেম, যেখানে ‘ভালোবাসি’ শব্দটি উচ্চারিত হয়নি, তবুও প্রতিটি চাহনিতে তা গেঁথে থাকত।
“তুই জানিস, প্রেমটা যদি বলা না যায়, তখনই সেটা সবচেয়ে সত্যি হয়।”
— বলেছিল একদিন আরিয়ান।
সায়ন্তিকা শুধু তাকিয়েছিল, চোখে জল।
অধ্যায় ৩: অসময়
তাদের এই নীরব প্রেমের মাঝেই এসে পড়ল ঝড়।
সায়ন্তিকার পরিবার একটি বড় ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে দিল। ছেলেটি ছিল সুদর্শন, উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু ভালোবাসার ছায়াও ছিল না তার চোখে।
আরিয়ান জেনে গেল।
সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। শুধু শেষদিন লাইব্রেরিতে এসে একটা খামে একটা কবিতা রেখে গেল। কোনো বিদায়ের কথা নয়। শুধু কবিতা।
কবিতার অংশ:
"যদি বলতাম—
তোমার জন্যই আমার সব লেখা,
বিশ্বাস করতে পারতে?
যদি বলতাম—
তোমার নিঃশব্দ চাহনিতে আমি জীবন খুঁজে পেয়েছি,
তুমি ফিরে তাকাতে?"
সায়ন্তিকা সেই খামটা বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখে। কিন্তু সে কোনো প্রতিবাদ করে না, কোনো বিদ্রোহ করে না।
সে বিয়ে করে।
অধ্যায় ৪: প্রস্থান
বিয়ের পরে দিন চলে যায়, মাস পেরোয়, বছর গড়ায়।
সায়ন্তিকার জীবন বাইরে থেকে পারফেক্ট—বাড়ি, গাড়ি, স্বামী, সন্তান।
কিন্তু রাতে যখন ঘর অন্ধকার হয়, সে বিছানার পাশে রাখা খামটা খুলে পড়ে আরিয়ানের কবিতা।
আরিয়ান আর কখনো ফিরে আসেনি।
কেউ জানত না সে কোথায় গেছে। কেউ জানত না সে বেঁচে আছে কিনা।
শুধু লাইব্রেরির পুরোনো রেকর্ডে লেখা ছিল—"আরিয়ান হোসেন, ড্রপআউট, ২০১৭।"
অধ্যায় ৫: ১৫ বছর পর
একদিন হঠাৎ লাইব্রেরির পুরোনো এক কোণে সায়ন্তিকার ছেলেটি খুঁজে পেল একটা পুরোনো নোটবুক। নাম লেখা ছিল—“আরিয়ান”।
সায়ন্তিকার চোখের সামনে পুরোনো সবকিছু ফিরে এল।
নোটবুকের শেষ পাতায় লেখা ছিল:
“ভালোবাসি—এই শব্দটা তোকে বলা হয়নি কখনো।
কিন্তু তুই যদি কখনো আবার লাইব্রেরিতে আসিস…
জানবি, আমি অপেক্ষায় ছিলাম।
সব হারিয়ে।”
সায়ন্তিকার বুকটা হাহাকার করে উঠল। সে চুপচাপ সেই নোটবুক বুকের কাছে নিয়ে চোখ বন্ধ করল।
শেষ অধ্যায়: শেষ কবিতা
সায়ন্তিকা তার জীবনের শেষ চিঠি লিখল লাইব্রেরির জন্য, গোপনে রেখে গেল একটা খামে—
“আমার জীবনে একজন এসেছিল, যে কবিতা লিখত,
আর আমি হয়েছিলাম তার সবচেয়ে না বলা কবিতাটি।
আজ আমি চলে যাচ্ছি,
কিন্তু আমার চোখে—তাকালেই বুঝবে, আমি এখনো ওকে ভালোবাসি।”