Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -৪৭)

April 29, 2025

Boros Marika

44
View


সকাল।
হালকা আলো ঘরের পর্দা ছুঁয়ে পড়ছিল।
চারপাশে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা।

হঠাৎ টক টক টক —
দরজায় টোকার শব্দে তৃষা চমকে উঠে বসলো।
তারপর পাশের সোফায় তাকালো— মিস্টার আমানও ধীরে ধীরে চোখ মেললেন।
ঘুম ভেঙে দুজনেই কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছেন তারা।

মিস্টার আমান আস্তে করে বললেন,
"তুমি ঠিক আছো?"
তৃষা হালকা মাথা নাড়লো।

এরপর মিস্টার আমান উঠে গিয়ে দরজার কাছে গেলেন।
আর তৃষা নিজের ওড়নাটা গুছিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসল।
এক অজানা অস্বস্তি, এক অজানা শূন্যতা দুজনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিল,
যার ভার যেন ঘরভর্তি বাতাসকেও ভারী করে তুলেছিল।


মিস্টার আমান দরজার দিকে হাঁটতে হাঁটতে তৃষার দিকে ইশারা করলেন,
"সোফার উপর যে কাথা আর বালিশ পড়ে আছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলো।"
তৃষা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে কাথা-বালিশ গুছিয়ে রাখলো, যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে।

এরপর আমান দরজা খুললেন—
দেখলেন সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দাদি।

দাদির মুখে চিরচেনা সেই দৃঢ় অথচ মায়াময় অভিব্যক্তি।
কিছু না বলেই তিনি ভেতরে ঢুকে পড়লেন।
তৃষা আর আমান একে অপরের দিকে তাকালো একবার, তারপর দ্রুত নিজেদের স্বাভাবিক করে নিলো।

ঘরের ভেতর এখন নতুন এক টানটান উত্তেজনা,
যার প্রতিটি মুহূর্তে যেন কোনো ভুল করলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়।

দাদি চারপাশে একবার ভালো করে তাকিয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
"সবকিছু ঠিক আছে তো?"

এক সেকেন্ডের জন্য আমান আর তৃষা একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিলো,
তারপর একসাথে বলে উঠলো,
"জি দাদি, সব ঠিক আছে।"

দাদি তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু গম্ভীর হয়ে রইলেন, যেন কিছু বোঝার চেষ্টা করছেন।
তারপর হালকা মাথা নাড়লেন,

দাদি তৃষার পাশে বসে পড়লেন।
তৃষার মুখে এক ধরনের চাপা যন্ত্রণা—দাদি সেটা বুঝেও কিছু না বলেই তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললেন,

"দাদুভাই, শোনো… এই বিয়েটা কীভাবে হয়েছে, সেটা আমি, তুমি—সবাই জানি। আমি তোমার মন বুঝি। জানি, হুট করে সব কিছু মানা যায় না।"

তৃষা চুপ করে বসে থাকে। দাদির হাতের উষ্ণতা যেন একটু সান্ত্বনা দেয়, কিন্তু চোখের কোণে হালকা জল এখনও জমে।

দাদি আবার মিষ্টি গলায় বললেন,

"কিন্তু একটা কথা তোমাকে বলতে চাই—তুমি এই বিয়ে করে ঠকোনি। আমানকে আমি ছোট থেকে বড় করেছি, তার মনের গভীরতা আমি জানি।
এই বিয়ে তোমার জীবনে শান্তি এনে দেবে—এইটা আমার ওয়াদা।"

তৃষা কিছু বলে না, শুধু চোখ নামিয়ে রাখে।
দাদির কণ্ঠে ভরসার যে শক্তি ছিল, সেটা তার মন ছুঁয়ে গেলেও, হৃদয়ে এখনও ঝড় থামেনি।

দাদি একটু থেমে তৃষার চোখের দিকে তাকিয়ে কোমল গলায় বললেন,

"দেখো মা, একদিনে যেমন কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মায় না…
ঠিক তেমন করেই, একদিনে কারো প্রতি থেকে সেই ভালোবাসা মুছে যায় না।"

তৃষার চোখে জল আবার জ্বলজ্বল করে ওঠে।

"এই জিনিসটা আমি বুঝি, আমানও বোঝে। তাই তোমার মনকে সময় দিও। আমান তোমাকে কখনো চাপ দেবে না, এটা আমি জানি।
তোমার মতো মেয়ের প্রতি ওর সম্মান আছে, যতটুকু প্রেম দরকার, তার চেয়েও বেশি তোমাকে সে সম্মান দেবে।"

দাদি একটু হাসলেন।

"আমার বউমা হলে, তুমিই আমার দাদুভাই। আমি চাই এই ঘর তোমার কাছে নিরাপদ হোক, নতুন এক জায়গা নয়।"

তৃষা এবার একবার তাকালেন দাদির দিকে। চোখে মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতা মিলেমিশে এক অজানা অনুভূতি।

চলবে.......

Comments

    Please login to post comment. Login