আমি জানতাম, কোনো গল্পে কখনো কোনো চরিত্র চিরকাল বাঁচে না। একে একে শেষ হয় সব কিছু, আর গল্পের প্রতিটি শেষ পৃষ্ঠা যেন পৃথিবীর শেষ এক প্রান্ত। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি, যে গল্পটা আমি লিখছি, সেটার শেষটা এত কঠিন হবে।
রুহির চলে যাওয়ার আগে, সে আমাকে একবার বলেছিল,
— “বিদ্যুৎ, আমি জানি, তুমি সবকিছু লেখার পরেও ভেবেছিলে, আমরা একসাথে থাকব সব সময়। কিন্তু আমি জানি, আমাদের গল্প এক সময় শেষ হবে।”
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম, আর বলেছিলাম,
— “তুমি ভুল বলছো, রুহি। আমাদের গল্প কখনো শেষ হবে না।”
কিন্তু শেষ পর্যন্ত, গল্পটা সত্যিই শেষ হয়ে গেল। রুহি চলে গেল, আমাকে একা রেখে।
রুহি মারা গেল, এক দুর্ঘটনায়, আমার চোখের সামনে। আমি কিছুই করতে পারলাম না। সে ছিল আমার জীবনের অর্ধেক, আমার লেখা, আমার স্বপ্ন, আমার জীবন। সে যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল, আমার ভেতর কেমন যেন কিছু ভেঙে গিয়েছিল। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, এক গভীর অন্ধকারে।
রুহি চলে যাওয়ার পরে, আমি একদিন রুহির পুরনো ডায়েরিটা খুঁজে পেলাম। তার মধ্যে লেখা ছিল,
“তুই আমার জীবন, বিদ্যুৎ। তুই যদি আমাকে ভালোবাসিস, তাহলে আমার এই চলে যাওয়া, কোনো একদিন আমাদের গল্পের অমূল্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।”
আমি ডায়েরিটি চোখে জল নিয়ে পড়লাম। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারলাম, রুহির চলে যাওয়ার পরও, আমি তার কাছে ফিরে যেতে পারব—আমাদের গল্পে আবার ফিরে।
আমি কলম তুলে নিলাম, এবং লেখা শুরু করলাম।
“এ গল্পে, কোনো দিন শেষ হবে না। এই গল্পে রুহি থাকবে, কোথাও না কোথাও। কখনো মেঘে, কখনো সূর্যের আলোয়। এবং প্রতিটি শব্দের ভেতর সে ফিরে আসবে, চিরকাল।”
আমি জানি, আমি আর কখনো রুহিকে ফিরে পাব না। কিন্তু তার গল্প, তার হাসি, তার ভালোবাসা—আমার সঙ্গী হবে চিরকাল।
---
শেষ।