Posts

গল্প

খোরশেদের বাসায়

April 30, 2025

saleh muhammed

305
View

আমরা যাচ্ছিলাম খোরশেদের বাসায়। পথে দাড়ালাম। একটা বাড়ি দেখিয়ে আমার ছোটভাই বলছিলেন,

-         এই বাড়িটা অনেকটা খোরশেদ সাহেবের বাড়িটার মত। কিন্তু এটা খোরশেদ সাহেবের বাড়ি না।

আমাদের খুব চিন্তা হয়। এই বাড়ির তিনতলায় খোরশেদের মত একটা লোক আছে বলে আমাদের মনে হতে থাকে। আমরা রাস্তা পার হয়ে দারোয়ান পানে যাই। আমাদের দেখে দারোয়ান খুব খুশি হয়। বলে,

-         তারপর কেমন আছেন আপনারা?

-         আপনি অনেকটা খোরশেদ সাহেবের বাড়ির দারোয়ানের মত।

-         হতে পারে। আপনারা কি উপরে যাবেন ?

আমরা উত্তর না দিয়ে সিগারেট ধরাই। আমার ছোটভাই সিগারেট খাননা বিধায় শুধু আমি আর দারোয়ান খাই। বাইরে খুব রোদ হতে থাকে। সিগারেট শেষ হয় বলে আমরা লিফটের দিকে যেতে থাকি। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম দারোয়ানকে। দারোয়ান আকাশ দেখছিলেন।

   এবং আকাশ দেখলে লোকেরা যেমন উদাস হয় দারোয়ানকেও তেমন মনে হচ্ছিল।

               ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

               

তিনতলায় লিফট থেকে বেরোলাম। আমরা সামনে একটা দরজা দেখি। দরজার পাশের দেয়ালে ছবি। ছবিতে ঘনকালো মেঘে গ্রামবাঙলার আকাশ ছেয়ে গেছে। কলিংবেল টিপলে একসময় দরজাটি খোলে। যিনি খুললেন তিনি দেখতে খোরশেদের মত না। আমরা বললাম

-         আপনি আমাদেরকে চিনবেন না। আমরা আসলে খোরশেদ সাহেবের কাছে যাব ভাবছিলাম। কিন্তু পরে চিন্তা করে দেখলাম ওনাকে আমাদের পছন্দ না। তিনি মন্দ লোক। কিন্তু তাকে আমাদের দরকারো বটে। হিসাবে দেখা যায় আপনি অনেকটা খোরশেদ সাহেবের মত। তাই আপনার কাছে আসা...

তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন,

-         আপনারা ভেতরে আসুন।

ভেতরে আসি আমরা। আমাদের খেতে বলা হয়। তাই আমরা খেতে বসি। ভাত, মুরগির মাংস আর চিঙরি দিয়ে লাউ। খেতে খেতে আমার ছোটভাইয়ের কাশি হয়। অনেকটা খোরশেদের মত লোকটা অস্থির হয়ে ওঠেন। তিনি পানি নিয়ে আসেন। আমার ছোটভাইয়ের পিঠে বাড়ি দিতে থাকেন। ভেতরের ঘর থেকে লোকটির স্ত্রী বেরিয়ে আসেন। আমরা বলি, “ভাবী স্লামালিকুম।”

 স্ত্রীটি বলে,

-         তোমরা ভাই ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেছো তো?

-         জ্বি , আপনি খেলেন না কেন আমাদের সাথে?

-         আমাদের বাসার নিয়ম ভাই, আমরা মেয়েরা একটু পরে পাই।

আমরা বুঝলাম বাসায় আরো লোক আছেন। খাওয়া শেষ হলে ড্রয়িংরুমে বসে খোরশেদ সাহেবর মত লোকটি বলতে লাগলেন “ আওয়ামিলীগ আমার মনে হয় না আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে” আর আমরা বললাম যে “ জীবনান্দ দাশের কবিতা সেই অর্থে বাংলা কবিতা হয় না” খোরশেদ সাহেব বললেন তিনি নিশ্চিত মঙ্গল গ্রহে আগে মানুষের মত একটা সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল তারপর বললেন

-         আপনারা একটু বসুন আমার বড় মেয়ে আপনাদের গান শোনাবে।

বড় মেয়েটিকে মনে হল তার গান শোনানোর কোন ইচ্ছা নেই। হয়তো সে ঘুমাচ্ছিল। রাগী মুখে সে, হারমোনিয়াম চাপতে চাপতে রবীন্দ্রসংগীত শুরু করল।

  “ আমি তোমারো বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস.. দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস......”

মেয়েটির গলা এবং সুরজ্ঞান চমৎকার। সে গান গেতে গেতে কাঁদতে লাগল। আমাদেরো খুব কান্না পাচ্ছিল। আমার ছোটভাই জড়িতকন্ঠে বললেন,

-         আমাদের খুব কান্না পাচ্ছে, আমরা কি একটু কানতে পারি খোরশেদ সাহেব? ঐ খোরশেদ সাহেবের বাসায় গেলে ওনার মেয়ের গানের সময় তিনি আমাদের কাঁদতে দেননা। তিনি খুব রেগে যান আমরা কাঁদলে।

তখন খোরশেদও কাঁদতে শুরু করলেন। আর আমরাও কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে আমাদের মাথা ধরে গেল। ভাবীকে বলা হল আমাদেরকে কড়া করে এককাপ চা দিতে। আর বড় মেয়েটি বলল যে সে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ে। তাই আমরা বললাম

-         মা তুমি তো বড় সুন্দর গান গাও। তোমাকে গান শিখাল কে?

মেয়েটি জানাল যে সে ছায়ানটের ছাত্রী ছিল আর আমরা বললাম যে শংকরের ঐদিকটায় আজকাল আর যাওয়া হয় না, প্রাইভেট ভার্সিটির ছেলেপেলেতে গিজগিজ করে, প্রচুর জ্যাম আর ধানমন্ডির পরিবেশটাও কেমন সন্ত্রাসসংকুল এবং অশালীন হয়ে গেছে। আমাদের খুব দঃখ হয় ধানমন্ডির জন্যে, প্রাইভেট ভার্সিটিদের জন্যে, সন্ত্রাসের জন্যে, অশ্লীলতার জন্যে। যেন আমরা আবার কেঁদে ফেলব। কিন্তু ততক্ষণে চা চলে আসে। আমরা চুপ করে চা খাই।

  তারপর কারেন্ট চলে যায় এবং বাইরে আকাশ কালো করে ঝড় শুরু হয়।  

Comments

    Please login to post comment. Login